রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২২, ০০:০০

কেজিতে কমেছে তিন থেকে চার টাকা
বিমল চৌধুরী ॥

আমদানি নির্ভর পাইকারী চালের মোকাম চাঁদপুরে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত ক’দিনের ব্যবধানে চাঁদপুরের পাইকারী বাজারে কেজি প্রতি দাম কমেছে তিন থেকে চার টাকা। তবে চালের এ দাম সাময়িক কমলেও তা নিয়ন্ত্রণে থাকবে না বলে ক’জন চাল ব্যবসায়ী অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বাজারের সাবেক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে চাল আমদানির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

পাইকারী চাল ব্যবসায়ীদের ক’জন জানান, কঠোর অভিযান আর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সাথে দ্রুত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে চালের দাম কিছুটা কমলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানির বিকল্প নেই। তাদের মতে, অনেক কর্পোরেট ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা প্রতিযোগিতা করে ধান কিনেছেন। তারা প্রশাসনের সাময়িক চাপে দাম কিছুটা কমালেও কিছুদিন পর আবার বাড়তি দামে ফিরে আসবে চালের বাজার। তাই এখনই কিছু চাল আমদানির অনুমতি দিলে চালের বাজার শান্ত হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি। বাজারে অভিযোগ আছে, মিল মালিক ও কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা ধান মজুদ রাখার কারণে বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে। মূলত ধান নিয়ন্ত্রণকারী বড় বড় মিলার সিন্ডিকেট তাদের হাতে থাকা আগের চাল বেশি দামে বিক্রি করার জন্য বড় ধরনের কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে। যে কারণে বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্লানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর পৌনে ৪ কোটি টন চালের চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মিটাতে গিয়ে কিছু না কিছু চাল আমদানি করতে হয়।

বর্তমান বোরো মৌসুমে চালের বাজার বৃদ্ধিতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। সাধারণ ক্রেতা থেকে ব্যবসায়ী অনেকেই মনে করেন, বড় বড় ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা নিজস্ব মার্কা দিয়ে রকমারি প্যাকেটে চাল ভরেই কয়েক টাকা দাম বাড়িয়ে দেন। আর মার্কা দেখে ক্রেতাসাধারণ তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বেশি দামেই।

দেশে বছরে সাড়ে তিন কোটি টনের মত চাল উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দুই কোটি টন হয় বোরো মৌসুমে। প্রতি বছরে বোরো মৌসুমে চালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও এ বছর দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এ বছর বোরো মৌসুমের শুরুতেই হাওড় অঞ্চলের কিছু ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া টানা বৃষ্টির কারণে পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপরদিকে বিশ্ববাজারে গমের দাম বৃদ্ধি ও ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় খাদ্য খাটতি দেখা দিতে পারে এ সুযোগে বড় বড় করপোরেট ব্যবসায়ীগণ সুকৌশলে চাল আটার দাম বাড়িয়ে দেন। দেখা যায়, সংকট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীরা যতটা না আগ্রহী ছিলেন তার চেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায়। নিজেদের কাছে পূর্বের খরিদকৃত পর্যাপ্ত ধান, চাল থাকার পরও তারা তা আগের দামে বিক্রি না করে বাড়তি দামে তা বিক্রি করতে চেষ্টা করেন। ফলে আটা, ময়দার পাশাপাশি চালের দামও হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেন।

বর্তমান সময় খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল আমদানির ওপর গুরুত্ব দেয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার আমদানি নির্ভর চাঁদপুর পাইকারি চালের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি চালে দাম কমেছে ৩ থেকে ৪ টাকা। বর্তমানে নাজিরশাইল ৭৬, পাইজাম ৪৬, মিনিকেট ৬১, গুটি স্বর্ণা ৪২, চাঁদপুরের অটো রাইস মিলে উৎপাদিত ২৯ মিনিকেট ৪৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানা যায়। এজন্যে পাইকারী বাজারের পাশাপাশি খুচরা বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন ভোক্তা সাধারণ।

চাঁদপুর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পাইকারি চাল ব্যবসায়ী পরেশ মালাকারের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, চালের বাজার বৃদ্ধির কারণ বিশ্লেষণ করা দরকার। তা বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ধান ভাঙ্গালে কাঁচা-পাকা ধানের কারণে চাহিদা অনুযায়ী রেসিও ঠিক পাওয়া যায় না। ১ মণ ধান ভাঙ্গালে ২৬ থেকে ২৭ কেজি চাল পাওয়া যেত। বর্তমানে কাঁচা পাকা ধানের কারণে ১ মণ চালের বিপরীতে ২২ থেকে ২৪ কেজি চাল পাওয়া যায়, ফলে যে ঘাটতি দেখা দেয়, সেই ঘাটতি মিটাতে গিয়েই চালের বাজার বেড়ে যায়। তদুপরি রয়েছে চাহিদানুযায়ী ধান সংকট। বড় বড় কোম্পানিগুলো চাল ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ায়, আগে যে ধান পাওয়া যেত তা এখন আর সেভাবে পাওয়া যায় না। বড় বড় ব্যবসায়ীদের হাতে উৎপাদিত ধানের সিংহভাগ আটকে যায়। ফলে বাজারে ধানের অভাব দেখা দেয়, ছোট ছোট মিলগুলো ধান সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। তিনি মনে করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে চালের শুল্ক কমিয়ে আমদানি উন্মুক্ত করা যেতে পারে। শুল্কহার এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে বাজারে চালের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নেমে আসে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়