প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানে লোকাল ট্রেন না থাকায় জনদুর্ভোগ যেমন বাড়ছে তেমনি জনপ্রিয় এ রেলপথটি ক্রমান্বয়ে গুরুত্ব হারাতে বসেছে। আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেস ছাড়া আর কোনো ট্রেন নেই এ লাইনে।
এদিকে লোকাল ট্রেন না থাকায় বিভিন্ন সড়কে চাপ বাড়ছে যানবাহনের। ক্রমশ সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পুসহ নানা ধরনের গাড়ির অস্বাভাবিক চাপ বাড়ছে চাঁদপুর জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার সড়কে।
এদিকে বিভিন্ন স্টেশনে জনবল শূন্যতার সুযোগে রেলের বিভিন্ন আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। ঘটছে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। অথচ গত কয়েক বছরে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এর অংশ হিসেবে চারটি স্টেশনের নতুন ভবনও নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে এসব স্টেশন ভবন তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, এসব স্টেশনে নেই বুকিং সহকারী, স্টেশন মাস্টার, টিকেট চেকার, পোর্টার, পয়েন্টস্ম্যানসহ কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। এতে সরকার যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ লাইনে রেলে ভ্রমণপিপাসু যাত্রীদের। এমনিতেই চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে লোকাল ট্রেন নেই। আপ-ডাউনে ডেম্যু ট্রেন লোকাল ট্রেন হিসেবে চললেও সেটির চলাচল গত দুই বছর আগে থেকে বন্ধ রয়েছে।
২০১২ সালে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথকে সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে রেলপথের শাহতলী, শাহরাস্তি ও ওয়ারুক স্টেশনের পুরাতন ভবন ভেঙ্গে এবং ডি শ্রেণির মৈশাদী স্টেশনে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। আর ভবনের কাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও সেই স্টেশনগুলোতে কোনো কার্যক্রম চালু করতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। জনবল সংকটে একবারে বন্ধ রয়েছে শাহতলী, বলাখাল, শাহরাস্তি ও উয়ারুক স্টেশন।
এদিকে স্টেশনগুলো দেখভাল করার জন্য কেউ না থাকায় প্লাটফর্মগুলো গরু-ছাগলের বিচরণ, বখাটে ও ভবঘুরে এবং রাতে মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। একেবারে বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে মাদকসেবীদের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে। সন্ধ্যার পর এসব স্টেশনে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। মৈশাদী স্টেশনে নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
শাহতলী রেলওয়ে স্টেশনে গেলে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, স্টেশন-কার্যক্রম চালু নেই। তাই যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্ত সময় অপচয় করে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি)-এর অফিসার ইনচার্জ মুরাদ উল্লাহ বাহার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আসলে আমাদের নিজস্ব কোনো গাড়ি নেই তাৎক্ষণিক কিছু করার ক্ষেত্রে। তারপরও বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজখবর নেব।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবুল কালাম চৌধুরী উক্ত রেলপথের বিভিন্ন রেলস্টেশনে জনবল না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রেলওয়েতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুই-একটা পর্যায়ে শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব স্টেশনে লোকবল নিয়োগ হলে এ সমস্যা থাকবে না। তবে তিনি জনবলশূন্য স্টেশনগুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একটু নজর দিলে দেশের সম্পদ অনেক ক্ষেত্রে রক্ষা পাবে বলে মত দেন।
চাঁদপুর (বড়) স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার সোয়াইবুল সিকদার বলেন, বিভিন্ন স্টেশনে উন্নয়ন কাজ শেষ হলেও জনবল সংকটের কারণে স্টেশনের কার্যক্রম চালু করা যায়নি। আমাদের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন দ্রুত সময়ে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্টেশনগুলোতে মাস্টার, বুকিং সহকারী নিয়োগ এবং অন্যান্য কার্যক্রম চালু করা হবে।