প্রকাশ : ৩১ মে ২০২২, ০০:০০
গত ক’দিন আগে বেড়ে যাওয়া দামেই স্থিতিশীল রয়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। তবে পাইকারি বাজারে ক্রেতা কম বলে জানিয়েছেন ক’জন পাইকারি মহাজন। এদিকে গত রমজানের তুলনায় বর্তমানে মোটা-চিকন সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা। যা ক্রেতাসাধারণকে করেছে অনেকটা হতাশ। তবে গত এক সপ্তাহ পূর্বে আটা-ময়দার দাম বেড়ে যে দামে দাঁড়িয়েছিলো গত ২/১ দিন যাবৎ সে দাম থেকে কমেছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা। গত দুদিনে চিনির দামও ২/১ টাকা বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর যে তেল নিয়ে তেলেসমতি সে তেল (বোতলজাত) সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হলেও খুচরা পর্যায়ের মধ্যবিত্ত বা দিন আনে দিন খায় মানুষ যারা লুজ তেল কিনে অভ্যস্ত তাদের জন্যে একটু সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাদেরকে দোকানদারদের ইচ্ছেমাফিকই বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে লুজ সয়াবিন বা পাম তেল। এক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেয়া দাম তেমন কাজে আসছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বিশেষ করে তেল, চাল, চিনিতে একটা অস্থিরভাব এখনও সর্বত্র বিরাজ করছে। কোনো বাজারের সাথেই কোনো বাজারের দামের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এ সকল নিত্যপণ্যের দামের ক্ষেত্রে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকেই নিত্যপণ্য হিসেবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সয়াবিন ও পাম তেল, গম, চিনি, মটর ডাল, মসুর ডাল ও ছোলার আমদানি কমে যাওয়ায় এ সকল পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে পড়ে। যার কারণে বর্তমানে এ সকল পণ্য অধিক দামে কিনতে গিয়ে ক্রেতা সাধারণের অনেকটা গা সয়ে গেছে। তারা বাজারে গিয়ে পূর্বের বাজেট ঠিক রেখে, আগের পরিমাণের চেয়ে কিছুটা কম নিয়েই ঝামেলাহীনভাবে খুশি থাকতে চেষ্টা করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিরতা চলছে। যুদ্ধ শুরুর পর একের পর এক দেশ নিজেদের খাদ্য সুরক্ষায় রপ্তানি বন্ধ ও সীমিত করার মতো পদক্ষেপ নেয়। এতে বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশের বাজারেও পণ্যমূল্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ না হলে পণ্যের বাজারে নিয়ন্ত্রণ আসবে না এমনটিই বলছেন এ সকল পণ্য ব্যবসায়ীগণ। বাংলাদেশে গমের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হতো রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানিকৃত গম দ্বারা। যুদ্ধ শুরুর পর দেশ দুটি থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে গম আমদানি শুরু করেন আমদানিকারকগণ। হঠাৎ করেই ভারত গম রপ্তানি করবে না বলে জানালে রাতারাতি দেশের বাজারে আটা ও গমের দাম কেজিপ্রতি আরো ৪/৫ টাকা বেড়ে গিয়ে চাঁদপুরের পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহে আটা বিক্রি হয় ৪২/৪৪ টাকা কেজি, আর ময়দা (তীর) বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৬২ থেকে ৬৩ টাকা। তবে গত দুদিন ধরে আটা ও ময়দার বাজার কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ায় বর্তমানে আটা ৩৮ আর ময়দা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সয়াবিন ও পাম তেলের, যা নিয়ে ব্যবসায়ীরা রীতিমতো কালোবাজারি শুরু করে দিয়েছিলেন। অধিক দামে বিক্রির আশায় তারা বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে বাজারে থাকা পাম, সয়াবিন গুদামজাত করে ফেলেন রাতারাতি। যা উদ্ধারে সরকারকে কঠোর মনোভাব নিতে হয়, পরিচালনা করতে হয় মোবাইল কোর্ট, জরিমানা গুণতে হয় ব্যবসায়ীদের। পূর্বের কেনা দামের চেয়ে তেল গুদামজাত করাসহ অধিক দামে বিক্রির অপরাধে সারাদেশে মোবাইল কোর্টের দ্বারা ব্যবাসায়ীদের জরিমানার আওতায় আনা হয়।
চাঁদপুরের পাইকারি বাজার নামে খ্যাত পুরাণবাজারেও দফায় দফায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। তেল কালোবাজারির অপরাধে পুরাণবাজারের ৩/৪ জন ব্যবসায়ীসহ চাঁদপুর জেলা শহরের কয়েক ব্যবসায়ীকে জরিমানা গুণতে হয়। তেলের দামের ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হলেও লুজ পাম বা সয়াবিন তেল সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না বলে গ্রাহকদের কাছে প্রতীয়মান হয়।
গতকাল পাইকারি বাজারে লুজ পাম তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১৭৮ টাকা, আর সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০২ টাকা দরে। আর সরিষার তেল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২৫ টাকা। চিনির বাজার গত সপ্তাহ থেকে বেড়ে গিয়ে গতকাল ৭৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে। এছাড়া সকল ধরনের ডালের বাজারও একই পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা যায়। তবে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বর্তমানে চালের বাজার বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে হতাশা। তারা মনে করেন বর্তমান মৌসুমে চালের বাজার বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে চালের বাজারে কিছুটা নিম্নমুখীভাব পরিলক্ষিত হলেও হঠাৎ করে গত এক সপ্তাহে চালের বাজার কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা বৃদ্ধি পায়।
পাইকারি চাল ব্যবসার সাথে দীর্ঘদিন জড়িত মেসার্স মদীনা ট্রেডার্সের ম্যানেজার অনন্ত চক্রবর্তী জানান, বর্তমান ইরি মৌসুমে বাম্পার ফলন হলেও হাওড় অঞ্চলে বন্যার কারণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। উৎপাদিত ১ মণ ধানে যে পরিমাণ চাল পাওয়ার কথা ছিলো বর্তমানে উৎপাদিত নতুন ধান থেকে সে পরিমাণ চাল না পাওয়ায় চালের দাম কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের এই বাজার মূল্য বেশি দিন থাকবে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। হঠাৎ করে চালের বাজার বেড়ে যাওয়ায় কেনা-বেচায় প্রভাব পড়েছে বলে জানা যায়।
২/১ জন পাইকারি চাল ব্যবসায়ী জানান, চালের দাম কমে যেতে পারে এ আশঙ্কায় পাইকারি কেনা-বেচাও অনেকটা কমে গেছে। বর্তমানে পুরাণবাজারের পাইকারি বাজারে গুটি মোটা ৪৩ টাকা, পাইজাম ৪৭ টাকা আর মিনিকেট চিকন চাল ৬৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৪ হতে ৫ টাকা বেশি। তবে তুলনামূলকভাবে সুগন্ধি চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। গত ক’দিনে চিনিগুঁড়ো চাল যার পাইকারি মূল্য ছিলো একশ’ টাকা, তা বর্তমানে পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা কেজি দরে।