রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২২, ০০:০০

আব্বাস উদ্দিন জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক
অনলাইন ডেস্ক

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে চাঁদপুর জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে মোঃ আব্বাস উদ্দিন ‘শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষাগুরু, শিক্ষক সংগঠনের নেতা, চাঁদপুরে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের নানাবিধ দাবি আদায়ের একজন অগ্রসৈনিক এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ব্যক্তিত্ব হিসেবে চাঁদপুরে সম্যক পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি বর্তমানে চাঁদপুর জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী গণি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে কর্মরত আছেন।

মহান শিক্ষকতার পাশাপাশি চাঁদপুর জেলা সদরের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করে নিজের মেধা, মননশীলতা, দক্ষতা অর্জন ও সাহিত্যগগনে বিচরণের সুযোগে আজকের এ সফলতা অর্জনে সক্ষম হন।

১৯৬৪ সালের ৯ জানুয়ারি মতলব উত্তর উপজেলার পশ্চিম ফতেহপুর ইউনিয়নের ফৈলাকান্দি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্বাস উদ্দিন। তাঁর পিতার নাম আবদুর রহমান মোল্লা এবং মাতার নাম আনতেষা বেগম। তিনি তাঁর পরিবারে পাঁচ বোনের এক ভাই।

প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিনের ছোটবেলায় অত্যন্ত মেধাবী ও আদর্শিক ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলো। তিনি ১৯৭৪ সালে ফৈলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ও পারিবারিক ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে নাউরী আহম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি হন। তিনি ১৯৮০ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৮২ সালে ছেঙ্গারচর কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ডিগ্রি লাভকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য থাকায় তৎকালীন এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। অতঃপর তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। অনার্স ডিগ্রি গ্রহণ করার পর ১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ি আইডিয়াল একাডেমিতে একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতার মহান পেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে কুমিল্লা টি.টি. কলেজ থেকে বি-এড ডিগ্রি নেন। ২০০২ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৩ বছর তিনি এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে ২০০২ সালে নন্দলালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ স্কুলে কর্মরত ছিলেন । ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলা সদরের স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী গণি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এ স্কুলে যোগদানের পর তাঁর এ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উন্নয়নে, শিক্ষক-কর্মচারীদের পেশাগত মান বাড়াতে এবং জেলার শিক্ষক সংগঠনে যোগ দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেন।

পেশাগত কারণে শুরু থেকেই বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করেন। চাঁদপুর গণি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর জেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কর্ণধার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তৎকালীন ঢাকার রাজপথে ও চাঁদপুরে আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত থেকে শিক্ষকদের দাবি আদায়ের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে আজ পর্যন্ত শিক্ষক নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে থেকে ও জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টে থেকে শিক্ষকদের এ দাবি আদায়ে কাজ করেন।

আব্বাস উদ্দিন শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা বিভাগের নির্দেশিকা অনুসরণ করে নতুন নতুন কারিকুলাম মতে এলাকাবাসী ও ছাত্র-অভিভাবক, শিক্ষা প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তাঁর বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলা থেকে তিনি শ্রেষ্ঠ উপজেলা প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন। এবার জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২-এ তিনি জেলা পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন।

এছাড়াও ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত পুরস্কার, ২০১৭ সালে চাঁদপুর লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক বিশেষ পুরস্কার ও ২০১৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে নজরুল সাংস্কৃতিক সংঘে কৃতিত্ব রাখায় পুরস্কার লাভ করেন। ২০২২ সালে সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়াও চাঁদপুর ও মতলবের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি এ উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীত বিদ্যাপীঠ ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমি’তে নজরুল সংগীত বিভাগে ভর্তি হয়ে বাংলাদেশ বেতার ও টিভির নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ও একাডেমির শিক্ষক এম. এ. মান্নানের সান্নিধ্য লাভ করেন। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার কারণে সে সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে মহানগর ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে ব্যস্ত থাকায় সঙ্গীত জীবনে একাডেমিক ক্যারিয়ার শেষ করতে পারেননি। শিক্ষকতার পাশাপাশি অবস্থায় তিনি যৌথভাবে একটি ইংরেজি গ্রামার প্রণেতা ও জেলার সকল শিক্ষকের সাথে যোগসূত্র স্থাপনে ২০১৪ সালে একটি ‘টিচার্স ফোন গাইড’ প্রকাশ করেন। বর্তমানে নিজের কবিতাগ্রন্থ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণার পা-ুলিপি তৈরি করেছেন। এছাড়াও শিক্ষামূলক গবেষণার কাজে মনোনিবেশ করছেন বলে জানান।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়ার স্বীকৃতি পাওয়ার পর তাঁর বিদ্যালয়ের অফিসে ২৭ মে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কমিটির মূল্যায়নের ফলে আমি চাঁদপুর জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান বিবেচিত হওয়ায় কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। একজন শিক্ষক সততা, পেশাগত দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব বলে তিনি মতামত দেন।

তিনি আরো বলেন, দৈনন্দিন রুটিনমাফিক কাজ সম্পন্ন করা, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখাও পেশাগত দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে ভালো ব্যবহার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সাথে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাঁর সহধর্মিণীর নাম শিরিনা আকতার। তিনি দু পুত্র ও দু কন্যা সন্তানের পিতা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়