প্রকাশ : ২৯ মে ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুরে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডঃ সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
আওয়ামী লীগের বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ২৮ মে শনিবার বিকেলে জেলা বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গণে খোলা ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে এ প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডঃ সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এই কারণে এখন তারা আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছে। আপনারা পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তারা কীভাবে কথা বলে এখানেই তাদের সাথে আমাদের তফাৎ। তাদের সাথে আমাদের সৃষ্টির চেতনাবোধের পার্থক্য। কারণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদেরকে বেয়াদবী শেখাননি।
|আরো খবর
তিনি বলেন, এদেশে গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। এদেশে বাকশাল কায়েম করেছিলো আওয়ামী লীগ। আজকে যে আওয়ামী লীগ, এই আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবন দিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তিনি আরো বলেন, এক পদ্মা সেতুর নাম করে সারাদেশের মানুষকে উন্মাদ করে ফেলেছে। পদ্মা সেতুর বাজেট ছিলো ১০ হাজার কোটি টাকা। এখন সেই বাজেট এসে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকায়। বাকি টাকা গেলো কোথায়? আমাদের সময় যমুনা সেতুর উদ্বোধনের দিন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে শেখ হাসিনা হরতাল দিয়েছিলো। তিনি আরো বলেন, মনে রাখবেন, গণতন্ত্রের বিপক্ষে যারা অবস্থান করে তাদের পক্ষে ন্যায়ের লড়াই কখনোই সম্ভব নয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি।
আলাল বলেন, সারা বাংলাদেশে যতো মানুষ খুন গুম হয়েছে তাদের পরিবারের কাছে কী জবাব দিবে তারা। আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠে। আমার পাশের বাসায় ইলিয়াছ আলীর পরিবার থাকেন। বিকেল বেলায় ছাদে যখন হাঁটতে যাই তার স্ত্রীর চোখের দিকে তাকালে কোনো সুস্থ মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না। তার বাচ্চা মেয়েটি এখন অনেক বড় হয়েছে, ছেলে ব্যারিস্টার হয়েছে। এ পরিবারটি নাম না মরহুম লিখতে পারে না জীবিত লিখতে পারে। এ চাঁদপুর থেকে ২৩টি তাজা প্রাণ আপনারা গুলি করে নিয়েছেন। তাদের পরিবারগুলোকে আপনাদের জন্যে দোয়া করে না অভিশাপ দেয়, একটু চিন্তা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর কত দায় নিবে অত্যাচারীদের পক্ষে। মনে রাখবেন, মজলুমের ফরিয়াদ আর আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা নাই। মজলুমের আর্তনাদের সঙ্গে আল্লাহ একাত্ম হয়ে যায়। তাদের চোখের পানি আল্লাহর দরবারে পৌঁছতে কোনো ভায়া লাগে না। আজকে আমরা সেই অবস্থায় আছি, আমরা মজলুম।
তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেবল আওয়ামী লীগ খুশি দেশের মানুষ খুশি না, তারা সরকারের ওপর খুবই অসন্তুষ্ট। বাজারে গেলে জিনিসপত্রের দামে হাত দেয়া যায় না। ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভয়ে মানুষ কথা বলে না। অতিউৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তার ভয়ে মানুষ কথা বলে না। খুন হবার ভয়ে মানুষ কথা বলে না। আজকে দেশটাকে সেই জায়গায় নিয়ে গেছে বর্তমান সরকার। এজন্যে আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, ‘টেক অব দা বাংলাদেশ’। যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিলো সেখান থেকে আজকে বাংলাদেশকে সরিয়ে ফেলেছে এ সরকার। চুনকাম করেছে কালি মেখেছে। আমরা এই জঞ্জাল ছাফ করবো এটা আমাদের ওয়াদা।
দলীয় নেতাণ্ডকর্মীদের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির এ নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারেক রহমানের নির্বাহী আদেশে আমাদের শপথ নিতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে মিলেমিশে আসুন আমরা আরেকবার দেশপ্রেমের পরিচয় দিই। আমরা আরেকবার প্রমাণ করি আমরা শহীদ জিয়ার সৈনিক যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্যে প্রস্তুত থাকবো।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মোস্তাক মিয়া। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান রতন।
চাঁদপুর জেলা বিএনপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সভাপ্রধানে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম এবং পৌর বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন মাঝির যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি নেতা খলিলুর রহমান গাজী, শরীফ মোঃ ইউনুছ (ফরিদগঞ্জ), এমএ শুক্কুর পাটওয়ারী (মতলব দক্ষিণ), চাঁদপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ হারুনুর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজালাল মিশন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জাহাঙ্গীর হোসেন খান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডঃ তাফাজ্জল হোসেন, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী অ্যাডঃ মনিরা চৌধুরী, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ নূরুল আমিন খান আকাশ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন পাটওয়ারী প্রমুখ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন খান বাবুল, মাহবুব আনোয়ার বাবলু, মুনীর চৌধুরী, সেলিমুছ সালাম, হুমায়ুন কবির প্রধান, মতল উত্তর উপজেলা বিএনপি নেতা তানভীর হুদা, জেলা বিএনপি নেতা হাজী মোশারফ, অ্যাডঃ জহির উদ্দিন বাবর, আফজাল হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বাহার, জেলা ছাত্রদলের সভাপতিসহ জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতৃবৃন্দ
সভাপতির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক আগামী আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাণ্ডকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে চাঁদপুর কারাগারে আটক জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৯ নেতার মুক্তি দাবি করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশের আগে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাণ্ডকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়।