প্রকাশ : ১০ মে ২০২২, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগের দুটি পরস্পর বিরোধী গ্রুপের দফায় দফায় হামলার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উপজেলার কয়েকটি এলাকা পুলিশের সামনেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিলো। আহতও হয়েছে বেশ কয়েকজন নেতাণ্ডকর্মী। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ জহির উদ্দিন বলেছেন, ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিলকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক।
একদল সন্ত্রাসী যুবক হেলমেট পরাবস্থায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে মারমুখী আচরণে মহড়া দিয়ে উপজেলা সদরে দিনভর এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও থানা পুলিশ কাউকে আটক না করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা বলছে, এ ঘটনায় পুলিশ দুই পক্ষের উচ্ছৃঙ্খল কয়েক যুবককে আটক করতে পারলেই পরিস্থিতি হয়তো এতোটা উত্তপ্ত হতো না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪ এপ্রিল চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগ কর্তৃক ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ ও পৌর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই এ কমিটিকে স্থানীয় এমপি শফিকুর রহমানের অনুসারী নেতাণ্ডকর্মীরা পকেট কমিটি আখ্যা দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করতে থাকে। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় এমপির কোনো মতামত কিংবা আলাপ-আলোচনা ছাড়াই ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হয়েছে। এরপরই এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সম্মতি নিয়ে তার অনুসারী নেতাণ্ডকর্মীরা উপজেলা ছাত্রলীগ ও পৌর ছাত্রলীগের স্বঘোষিত পাল্টা কমিটি প্রকাশ করেই তারা মাঠে নেমে পড়েন।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগ ঘোষিত ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও পৌর কমিটিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলামের অনুসারী আখ্যা দিয়ে উক্ত কমিটির বিভিন্ন কার্যক্রম প্রতিহত করতে নানাভাবে তৎপরতা চালায় এমপির অনুসারী নেতাণ্ডকর্মীরা। এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান দেখাতে জেলা কমিটি কর্তৃক ঘোষিত ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বাকি বিল্লাহ ৭ মে শনিবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হওয়ার কথা থাকলেও একইদিন প্রতিপক্ষ গ্রুপও কর্মসূচি দেয়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে একদিন পিছিয়ে ৮ মে উপজেলা সদরে ছাত্রলীগ আনন্দ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে এমপির অনুসারী পৌর ছাত্রলীগের স্বঘোষিত কমিটির সভাপতি আলী নেওয়াজও ঘোষণা দিয়ে জানায়, তারাও ৮ মে ঈদণ্ডপুনর্মিলনী সভা ও আনন্দ মিছিল করবে। পরস্পর বিরোধী এসব কর্মসূচি সফল করার জন্যে দুপক্ষই তাদের নেতাণ্ডকর্মীদের জড়ো করতে তৎপরতা শুরু করে।
অবশ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজনীতির নামে পরস্পর-বিরোধী দুটি গ্রুপের এমন বেগতিক অবস্থা দেখে পুলিশ দুই পক্ষকেই তাদের কর্মসূচি স্থগিতের পরামর্শ দেয়। এক পর্যায়ে দুটি পক্ষই পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের ওইদিনের কর্মসূচি বন্ধ রাখলেও দিনভর বিক্ষিপ্তভাবে উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ছাড়াও প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র উঁচিয়ে হেলমেট পরাবস্থায় মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তবে বিকেলে কেরোয়া ব্রিজের পূর্ব পাড়ে জেলা ছাত্রলীগ ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের একটি খণ্ড মিছিল করার খবর শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রতিপক্ষরা। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগের নেতাণ্ডকর্মীরা হাতবোমার বিস্ফোরণ এবং কাচের বোতল ছোড়াসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশের হস্তক্ষেপে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও ততক্ষণে হামলার শিকার হন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুসারী জেলা পরিষদের দুই সদস্য সাইফুল ইসলাম রিপন ও মশিউর রহমান মিটু এবং এমপির অনুসারী রুবেল নামে এক নেতা।
এ নিয়ে চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ জহির উদ্দিন গতকাল সোমবার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা ও পৌর কমিটি দিয়েছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ছাত্রলীগের কার্যক্রমে যাদেরকে সক্রিয়ভাবে মাঠে পেয়েছি তাদের দিয়েই কমিটি দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার পূর্বে আমি ব্যক্তিগতভাবে এমপি মহোদয়ের সাথে কথা বলার সময় তিনি সরাসরি যখন আমাকে বলেন, তোমরাতো ছাত্রলীগ করো না, তোমরা তো করো ভাইলীগ। একজন এমপি এই কথা বলার পর আর কী বলার আছে।
ফরিদগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ মণ্ডল গতকাল সোমবার রাতে এ প্রতিবেদককে জানান, গতকালের (রোববার) ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় মামলা কিংবা অভিযোগ দেয়নি। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কেউই কর্মসূচি পালন করবে না বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। কিন্তু একটি পক্ষ আবার পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কেরোয়া ব্রিজের পাশে একটি খণ্ড-মিছিল বের করার পরই দুই পক্ষ কিছুটা সময়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হলেও পুলিশ আবার তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সামনে কেউ অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিলে অবশ্যই তাকে আটক করতে পুলিশ বাধ্য। পুলিশের সামনে কেউ অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
এ নিয়ে স্থানীয়রা বলছে, মূলত এলাকায় ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার করার আশায় ওইদিন পরিকল্পিতভাবে হামলা ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফরিদগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। এই অপকর্ম চলতে থাকলে দলীয় ভাবমূর্তির ক্ষতিসাধনসহ ঘটনাগুলো কারো জন্যে শুভবার্তা বয়ে আনবে না।