প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২২, ০০:০০
তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২ মার্চ বুধবার বিকেল তিনটায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সম্মুখে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। খোলা ট্রাকের উপর মঞ্চ বানিয়ে সেখানে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। এদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিলো সতর্ক অবস্থানে। বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলÑবিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু।
বক্তব্যকালে তিনি বলেন, দেশ আবারো ১৯৭৪ সালের মতো ধাবিত হচ্ছে। এ সরকার জনগণের ওপর জল্লাদের মতো চেপে বসেছে। ভয়ে কেউ কথা বলতে পারছে না। প্রতিবাদ করলেই মামলা-হামলা, খুন-গুম এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। আর জনগণের কাছে এ সরকারের দায়বদ্ধতাও নেই। তাই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস, পরিবহন ভাড়াসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকারপ্রধান যদি নিজের টাকায় বাজার করতেন তাহলে বুঝবেন দ্রব্যমূল্যের কি হাল। তিনি তো জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে বাজার করেন তাই জনগণের দুঃখ বুঝেন না। আগামী দিনে খালেদা জিয়ার মুক্তি, আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
মিনু বলেন, বিশ্বের কোনো স্বৈরশাসকই বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি। আমরা হাতিয়ার তুলে নিয়ে পাকিস্তানিদের হারিয়েছি, মোঘল স¤্রাটকে পরাজিত করেছি। হিটলারও নিস্তার পায়নি। আমাদের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কখনো বিদেশি শক্তির কাছে মাথানত করেননি। আমরাও মাথা নত করবো না। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতি নতুন দিশা পেয়েছিলো। আমরা তাঁর সন্তান। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সংগঠন বিএনপি। চাঁদপুর শহিদ জিয়ার দুর্গ। বেগম খালেদা জিয়াকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন এখানকার মানুষ।
তিনি আরো বলেন, এই করুণ অবস্থা থেকে দেশের জনগণকে বাঁচাতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো সময় বৃহৎ আন্দোলনের ডাক আসবে। এই ডাকে সাড়া দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান মিনু।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সভাপ্রধানে ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডঃ সলিমুল্লাহ সেলিম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান সফিকুজ্জামানের যৌথ পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদা বেগম হীরা ও বিএনপি নেতা এমএ হান্নান।
বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন খান বাবুল, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আনোয়ার বাবলু, মুনীর চৌধুরী, সেলিমুস সালাম, চাঁদপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আকতার হোসেন মাঝি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ হারুনুর রশিদ, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার ভূঁইয়া রুবেল, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আবু তাহের পাটোয়ারী, ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরীফ মুহাম্মদ ইউনুছ, চাঁদপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজালাল মিশন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জাহাঙ্গীর হোসেন খান, কচুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির প্রধান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমানত গাজী, মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক জিতু, মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সাগর, হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, হাইমচর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শফিক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়কবৃন্দ, পৌর ও উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিকদল, মৎস্যজীবী দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন জেলা ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের সাধারণ মানুষের দিশেহারা অবস্থা। সেদিকে সরকারের কোনো খেয়াল নেই। আগামীতে আমাদের ঘরে আর ঘুমানোর সময় নেই। আমাদের চাঁদপুর জেলা বিএনপিতে ৪/৫ শ্রেণির নেতৃবৃন্দ আছেন। একশ্রেণির নেতৃবৃন্দকে জেলে নিয়ে গেলেও অন্যরা রাজপথে নেতৃত্ব দেবে। চাঁদপুরে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন অনেক শক্তিশালী। এর প্রমাণ আজকের এ জন¯্রােত। পর্যায়ক্রমে আমাদের কর্মসূচি চলতে থাকবে। এরপর উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশ সফল করার জন্যে আহ্বান জানান তিনি।
এদিন পূর্বঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জন্যে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মী খ- খ- মিছিল নিয়ে শহরের দলীয় কার্যালয় সম্মুখে জড়ো হয়। এ সময় নেতা-কর্মীদের সরকারবিরোধী স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। নেতা-কর্মীদের ভিড়ে সেখানে কিছু সময়ের জন্যে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দীন ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রশিদের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স আইন-শৃঙ্খলার কাজে তৎপর ছিলো।