সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

পুরাণবাজারে পাসের হার আশানুরূপ হলেও মিলেনি কাক্সিক্ষত জিপিএ-৫
বিমল চৌধুরী ॥

গত ৩০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সারাদেশে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিক স্কুল সাটিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১-এর ফলাফল ঘোষণা করেন। তিনি একই সাথে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিদ্যালয়গুলো অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই প্রকাশিত ফলাফল জানতে পেরে কেউ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ অনেকটা হতাশা প্রকাশ করেছেন আশানুরূপ ফলাফল না পেয়ে। এ বছর করোনা মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ের সাড়ে ৮ মাস পর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের ২২ লাখেরও অধিক সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও সকল বিষয়ে তাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি। শুধুমাত্র ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান, মানবিক ও কৃষি বিভাগের ৩ বিষয়ের উপর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। জেনারেল পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি, অংক এসব বিষয়ে কোনো পরীক্ষা হয়নি করোনার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত পড়ালেখা না হওয়ার জন্য। ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্বাগত জানান। স্বল্প বিষয়ের উপর অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অনেকেই কৃতকার্য না হতে পেরে বা আশানুরূপ ফলাফল না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। গতকাল অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই দেখা গেছে অকৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শান্ত¡না দিচ্ছেন শিক্ষকরা।

গতকাল প্রকাশিত এসএসসি ফলাফলে পুরাণবাজারে অবস্থিত উচ্চ বিদ্যালয়গুলো আশানুরূপ পাস পেলেও পায়নি আকাক্সিক্ষত জিপিএ-৫। তা না পাওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা যতটা না ব্যথিত হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কারণ জিপিএ-৫-এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে বিদ্যালয়ের সম্মান। আশানুরূপ জিপিএ-৫ না পেয়ে অনেক শিক্ষককে হতাশা প্রকাশ করতেও দেখা যায়। তারা মনে করেন গ্রুপ পর্যায়ে পরীক্ষা হওয়ায় হয়তো জিপিএর ক্ষেত্রে তাদের এমন বিপর্যয়, সকল বিষয় পরীক্ষা হলে হয়তো এ বিপর্যয় হতো না। পুরাণবাজারে অবস্থিত পুরাণবাজার মধুসূদন হরিসভা উচ্চ বিদ্যালয়, পুরাণবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর নুরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, হাফেজ মাহমুদা পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পুরাণবাজার অংশের কাছাকাছি রঘুনাথপুর হাজী এ করিম খান উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত হলেও বিশেষ করে এ বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ২টি বিদ্যালয় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

পুরাণবাজার মধুসূদন হরিসভা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর ১৬৭ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিলেও পাস করেছে ১৬০ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৩৬ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় শাখায় ৮৫ জন, মানবিক শাখায় ৩৯ জন কৃতকার্য হয়। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১ জন। তবে এ ফলাফলে প্রধান শিক্ষক গণেশ চন্দ্র দাস অনেকটাই হতাশা প্রকাশ করেন। কারণ গতবছর এসএসসি পরীক্ষায় ১৩২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২৫ জন পাস করেন। এর মধ্যে ১২ জন জিপিএ-৫ পান বলে তিনি জানান।

গতবছর চাঁদপুর নূরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষায় ৪টি জিপিএ-৫ পেলেও এবছর একটি জিপিএ-৫ মিলেনি তাদের ভাগ্যে। তবে এবছর তাদের শতভাগ পাস মিলেছে। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ১২ জন, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২৯ জন ও মানবিক বিভাগে ১১ জন মোট ৫২ জন পরীক্ষার্থীই শতভাগ পাশের কৃতিত্ব অর্জন করায় প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু তাহের তফাদার শোকরিয়া আদায় করেন। তিনি বলেন করোনাকালীন সময় বিদ্যালয়গুলো এক কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। এর মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নেয়া ছিল সাহসী পদক্ষেপ। শিক্ষামন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্তের জন্যেই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।

পুরাণবাজারের হাফেজ মাহমুদা পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সফিকুর রহমান ও তার বিদ্যালয়ের এসএসসি ফলাফলে অনেকটা সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ বছর আমাদের বিদ্যালয় থেকে শুধুমাত্র মানবিক বিভাগে ২০ জন ছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করলেও বিভিন্ন কারণে মাত্র ১৭ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আর ১৭ জনই কৃতকার্য হয়। বিদ্যালয়ের শতভাগ পাশে তিনি অনেকটাই খুশি। তিনি বলেন, করোনার কারণে পরীক্ষার্থীদের তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিলো না বললেই চলে। তবে পুরাণবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গতবছর ৫ জন জিপিএ-৫ পেলেও এবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২ জন। গতবছর বিদ্যালয় থেকে ৫৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪ জন পাস করেন, কিন্তু এবছর ৮৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন ৮৪ জন। ১ জন পাস না করায় শতভাগ পাসের গৌরব থেকে বঞ্চিত হয় বিদ্যালয়টি। প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবর রহমান আরো ভালো ফলাফল না পেয়ে অনেকটাই হতাশা প্রকাশ করেন। তবে তিনি আশাবাদী আগামীতে তার প্রতিষ্ঠানটি আরো ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হবে। কোনো জিপিএ-৫ পায়নি পুরাণবাজার সংলগ্ন রঘুনাথপুর হাজী এ করিম খান উচ্চ বিদ্যালয়। জিপিএ-৫ না পেয়ে অনেকটাই হতাশা ব্যক্ত করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ নাছির উদ্দীন। এ বছর বিদ্যালয়টি থেকে ১১১ জন পরীক্ষা দিলেও পাস করেছেন ১০৯ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২৩ জন, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৩৯ জন ও মানবিক শাখায় ৪৭ জন।

তবে পূর্বে ফলাফল জানতে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে তা কিন্তু এ বছর লক্ষ্য করা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রযুক্তি উন্নয়নের কল্যাণে সকলেই ঘরে বসে ফলাফল সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। তদুপোরি ফলাফল সংগ্রহে বিদ্যালয়ে কোনো প্রকার ভিড় করা যাবে না নির্দেশনা থাকায় তা এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়