সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

মারজান হত্যার চার বছর, স্বীকারোক্তি দিয়েও জামিনে ঘুরছে আসামীরা

গ্রামছাড়া মারজানের পরিবার

মারজান হত্যার চার বছর, স্বীকারোক্তি দিয়েও জামিনে ঘুরছে আসামীরা
স্টাফ রিপোর্টার ॥

হাইমচর উপজেলার ঈশানবালায় সংঘটিত আলোচিত শিশু শিক্ষার্থী মারজান আক্তার (৯) হত্যার চার বছর অতিবাহিত হয়েছে গতকাল ২২ ডিসেম্বর। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর স্থানীয় ৩ বখাটে কর্তৃক ধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে খুন হয় শিশু মারজানা। আলোচিত এই ঘটনাটির দীর্ঘ চারবছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি মারজানার পরিবার। এই অমানবিক হত্যাকা-ের চার বছরেও অভিযুক্ত এজহারভুক্ত আসামী দালাল ও সিদ্দিককে আটক করতে পারেনি পুলিশ। আর নান্নু চৌকিদার ও সেলিম বেপারীকে আটক করা হলেও তারা জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে বীরদর্পে চলাফেরা করছে। আর মেয়ে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে মারজানের অসহায় পরিবার গ্রামছাড়া হয়ে শহরের পুরাণবাজারে আশ্রয় নিয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হাইমচর থানার ঈশানবালা এলাকার হতদরিদ্র মোকশেদ হাওলাদার বাজারে টেইলার্সের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মোকশেদের ১ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মারজান স্থানীয় চরকোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর বিকেল অনুমান সাড়ে ৫টায় মারজানকে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে ঈশানবালা বাজারে বাবার দোকানে পাঠান তার মা।

বাজারে যাওয়ার পথে স্থানীয় চৌকিদার নান্নু চৌকিদার মারজানের মুখ চেপে ধরে জনৈক নাসির সর্দারের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়। এরপর নান্নুসহ দ্বীন ইসলাম হাওলাদারের ছেলে দালাল মিয়া হাওলাদার (২১), কাদির বেপারীর ছেলে সিদ্দিক (২২) ও শফিক উল্লাহ বেপারীর ছেলে সেলিমসহ ৪ নরপশু মারজানকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এতে তার গোপনাঙ্গে রক্তের ধারা বয়ে যায়। জ্ঞান হারায় মারজান। জ্ঞান ফিরলে ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় ৪ পাষ- নরপশু গলা টিপে হত্যা করে মারজানকে।

এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত শুরু হলেও মেয়ে বাড়ি ফিরে না আসায় সবাই এদিক-সেদিক খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে মৃত মারজানের উলঙ্গ প্রাণহীন দেহ পাওয়া যায় ঈশানবালায় মারজানের বাড়ির অদূরে নদীর পাড়ে। ধর্ষক ও হত্যাকরীরা এলাকার সুবিধাবাদী মহলের যোগসাজশে সুকৌশলে মারজানকে জ্বীনে মেরেছে বলে প্রচার করে। মারজানের মৃতদেহ দাফন করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে।

কিন্তু হতভাগী মারজনের মা-বাবার মন কিছুতেই সায় দেয় না যে, তাদের আঁচলের নিধি মারজানকে জ্বীনে মেরেছে। মনকে কোনোভাবেই বুঝ দিতে না পেরে মারজানের বাবা ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি ঈশানবালার দ্বীন ইসলাম হাওলাদারের ছেলে দালাল মিয়া হাওলাদার (২১) , কাদির বেপারীর ছেলে সিদ্দীক (২২) ও শফিক উল্লাহ বেপারীর ছেলে সেলিম গংকে আসামী করে মামলা করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদপুরের আদালতে।

আদালত হাইমচর থানার ওসিকে সরাসরি মামলা রুজুর আদেশ দিলে হাইমচর থানায় মামলা (নং-৪, তারিখ ১৬/০১/১৮ইং ধারা-৩০২/৩৭৬/২০১/ ৩৪/ ১০৯ দঃবিঃ) রুজু হয়। তদন্তভার দেওয়া হয় হাইমচর থানার এসআই সুমন মিয়াকে।

এক বছরেও মামলাটির তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তৎকালীন পুলিশ সুপার মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করেন। আইও নিয়োগ করা হয় ডিবির এসআই শামীম আহম্মদকে। এসআই শামীম বদলি সূত্রে অন্যত্র গেলে ১০/০২/২০২০খ্রিঃ তারিখে এসআই রেজাউলকে মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের এই চৌকস অফিসার মাত্র একমাসের মধ্যে মামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত এজাহার বহির্ভূত আসামী নান্নু চৌকিদারকে গ্রেফতার করেন শরীয়তপুর থেকে। জিজ্ঞাসাবাদে নান্নু স্বীকার করে, সে নিজেসহ এজাহার নামীয় ৩ আসামী মারজানকে নারকীয়ভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করে। সে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায়ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।

এরপর পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার)-এর দিক নির্দেশনা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৭ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গি পশ্চিম থানা এলাকা থেকে এসআই রেজাউল করিমসহ সঙ্গীয় ফোর্স এজাহার নামীয় অন্যতম আসামী মোঃ সেলিম বেপারীকে গ্রেফতার করেন। পরে আটক সেলিমকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তবে আটকের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আটক দুই আসামী নান্নু চৌকিদার ও সেলিম বেপারী আদালতে জামিন নিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান।

এদিকে শিশু মেয়ের ধর্ষণ ও তার হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে মারজানার অসহায় পরিবার এখন গ্রাম ছাড়া। আপরাধীরা জামিনে ছাড়া পেয়ে মারজানের পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্যে নানাভাবে ভয়ভীতি আর হুমকি-ধমকি দিচ্ছি। এরই মধ্যে হতভাগী মারজানের কিশোর ভাই মারুফকে ধরে নিয়ে আটক সেলিমের বাবা শফিউল্লাহ বেপারী, বড়ভাই জলিল দলবলসহ বেদম প্রহার করে। তার হাত ভেঙ্গে দেয়। গলা চেপে ধরে বলে, ‘তোর বইনের খুনের মামলায় আমাগো ছেলের যদি ফাঁসি অয়, তইলে তোরেও আমরা মাইরা ফালামু’। এক পর্যায়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যায় কিশোর মারুফ। বিষয়টি তাৎক্ষণাৎ চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিমকে অবহিত করা হয়। এতে ঈশানবালা ফাঁড়ির পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় পুলিশ প্রশাসন।

অসহায় বাবা-মায়ের ভয়, মেয়ের মতো তাদের কিশোর ছেলেকেও না জানি হত্যা করে মানুষরূপী হায়েনার দল। তাই আসামীদের হাত থেকে বাঁচতে নিজের বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে আশ্রয় নিয়েছে মারজানের পরিবার।

এ বিষয়ে মারজানের হতভাগা পিতা মোকশেদ হাওলাদার বলেন, ‘ওরা আমার লেদা মাইয়াডারে খারাপ কাজ কইরা মাইরা ফালাইছে। চার বছরেও আমি বিচার পাইলাম না। চাঁদপুরের ডিসি একজন মা। আমি আমার মাইয়ার বিচারের জন্য ডিসি স্যার, পুলিশ সুপার স্যার, আইনজীবী স্যারদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

উল্লেখ্য, এই ঘটনায় চাঁদপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মারজানের পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। ওই সময় পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন অপরাধী যে হোক না কেনো, দোষী প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তি পেতে হবেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়