প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কচুয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ২০ ডিসেম্বর সোমবার উৎসবমুখর পরিবেশে চেয়ারম্যান পদে ৬৬, সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্য পদে ১শ’ ২০ ও সাধারণ সদস্য পদে ৫শ’ ১৯ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে মিছিলে মিছিলে মুখরিত করে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ। প্রতীক বরাদ্দ দেন সাচার ও পাথৈর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। বিতারা, কড়ইয়া ও আশ্রাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী আবু বকর সিদ্দিক। পালাখাল মডেল ইউনিয়ন ও কচুয়া সদর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আলী আশ্রাফ খান। পশ্চিম সহদেবপুর ও কাদলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এএইচএম শাহরিয়ার রসূল। কচুয়া উত্তর, গোহট উত্তর ও গোহট দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দলীয় প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনীত প্রতীক। প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন পর দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণে নির্বাচন হওয়ায় অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে দলীয় নেতা-কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছে প্রচার-প্রচারণায়।
৯নং কড়ইয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুস ছালাম সওদাগর ব্যতীত অন্য প্রার্থী না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ১নং সাচার ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৩নং আসনের (৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড) মহিলা সদস্য পদে আফিয়া খাতুন ব্যতীত অন্য কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হতে যাচ্ছেন।
এদিকে প্রতীক পেয়েই পথসভা ও গণসংযোগের মাধ্যমে প্রচারণায় নেমেছে প্রার্থীরা। ১নং সাচার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী মিন্নত আলী তালুকদার নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মনির হোসেনের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা দুজনেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। নৌকার প্রার্থী মিন্নত আলী তালুকদার জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে। তাই আমি আশা করছি নেত্রীকে এই ইউনিয়নের জয় উপহার দিব। অন্যদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান মনির হোসেন জানান, গত উপ-নির্বাচনে এই আসন থেকে আমি নৌকা প্রতীকে মনোনীত হয়ে জয়লাভ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। এলাকায় আমি ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- করি এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
৮নং কাদলা ইউনিয়ন পরিষদে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে। পাড়ার চা দোকানে শুধু আলোচনা কে হচ্ছেন এই ইউনিয়ন পরিষদের ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান। এটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপির ইউনিয়ন। তাই পুরো উপজেলার সকল ইউনিয়নবাসীর নজর যেনো এই ইউনিয়নটিকে ঘিরে। কে হচ্ছেন এই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম লালু পুনরায় নৌকা প্রতীকে মনোনীত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী নূর ই আলম রিহাত আনারস প্রতীক ও আবদুল হাই মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারা তিন জনই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। মাঠ জরিপে তিন জনের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের নূর ই আলম রিহাত এগিয়ে রয়েছে। কথা হয় নূর ই আলম রিহাতের সমর্থক দোলোয়ারের সাথে। তিনি জানান, করোনার ১ম ও ২য় ঢেউয়ে করোনার ভয়ে জনপ্রতিনিধিরা যখন ঘরে ঢুকে গিয়েছিল, তখন এই চেয়ারম্যান প্রার্থী নূর ই আলম রিহাত ভাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান, খাদ্য সামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। আমরা এই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কাছে ঋণী হয়ে আছি। তাই আনারস প্রতীকে ভোট প্রদানের মাধ্যমে আমরা এই ঋণের কিছুটা অংশ হলেও শোধ করতে চাই। কথা হয় আনারস প্রতীকের প্রার্থী নূর ই আলম রিহাতের সাথে। তিনি জানান, যতটুকু সম্ভব দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ করোনাকালীন সময়ে আমি আমি এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সুখে দুঃখে ছিলাম। আশা করি, আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এলাকাবাসী আমাকে আনারস প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। অপর দিকে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম লালু জানান, গত দুইবার আমি এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আমি মনে করি এই ইউনিয়নের জনগণ আমাকে আবারো নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে।
অপর দিকে কচুয়া সদর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদে প্রতীক পেয়েই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলী আজগর মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে গণসংযোগ শুরু করেন। তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিমউদ্দীন লিটন এবং ঘোড়া প্রতীকের উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ রবিউল ইসলাম রাসেল। সকলেই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী আলী আজগর বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা মার্কা, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপির মার্কা নৌকা মার্কা, শাহজাহান শিশিরের মার্কা নৌকা মার্কা আর জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীকে মনোনীত করেছেন। আমার বিশ^াস জনগণ আমাকেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করবে।
মঙ্গলবার ১২ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, সব ইউনিয়নেই গণসংযোগ মিছিল মিটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতীক পাওয়া প্রার্থীরা। চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য প্রার্থীরা বসে নেই। তারাও ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সকল ইউনিয়নের জনগণ নির্বাচনী উৎসবে মেতে উঠেছে। সাধারণ ভোটারদের মনে প্রশ্ন, আদৌ কি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে? সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন গ্রহণের লক্ষ্যে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।