প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ পিপিএম (বার) বলেছেন, একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের যে ত্যাগ তা শোধ করবার মতো নয়। আমি এমন এক আত্মত্যাগী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, যাতে আমি গর্ববোধ করি। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে প্রথম আঘাত ও বুলেটটি ছোড়া হয়েছিলো পুলিশ বাহিনীর উপর। সে সময় পাকবাহিনী হামলার জন্যে ৪টি স্থাপনাকে বেছে নিয়ে প্রথমেই রাজারবাগে পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালায়।
১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১১টায় চাঁদপুর পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস-২০২১ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জেলা পুলিশের আয়োজনে পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ও প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে সেদিন শুধুমাত্র থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণ বীরদর্পে লড়াই করেছিলেন। সেদিন অনেক বীর পুলিশ সদস্য শত্রুর সাথে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বাধীন দেশ গড়তে এবং মাটির টানে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধে গিয়ে কেউ ফিরে আসবেন এ চিন্তা করে যুদ্ধে যাননি তারা। তাঁদের ত্যাগ শোধ করবার মতো নয়। মিলন মাহমুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার আলবদরের প্রেতাত্মারা আজও দেশে আছে। আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর চেতনা মাথায় না রেখে বুকে ধারণ করি। চেতনা মাথায় রাখলে তা বেশিদিন থাকে না, তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক মন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধাই নন, তিনি একজন সাংবাদিক ও লেখক। তাঁর লেখা একটি বই আগামী বই মেলায় প্রকাশিত হবে। আমি এখানে উপস্থিত সকলকে বইটি প্রকাশের পর উপহার হিসেবে দেবো।
তিনি আরো বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে এ শপথ।
পুলিশ কনস্টেবলদের চাকুরি দেয়া প্রসঙ্গে এসপি বলেন, আমি শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নয়, তাঁদের নাতি-পুতিদেরও চাকুরি দিয়েছি। আমি পুলিশের পোষ্য কোটায় থাকাদেরও চাকুরি দিয়েছি। সব ধরনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতায় এবং ঘুষ ও অনিয়ম ছাড়া যোগ্যতা বলে চাকরি পেয়েছে তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সুদীপ্ত রায়ের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী মাস্টার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী এবং পুলিশ সুপারের গর্বিত বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মন্টু।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ আমির হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল (অবঃ) তোফাজ্জল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত হাবিলদার মোহন বাঁশি দত্তের ছেলে অজিত দত্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার ইউসুফ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুল হকের ভাই আনিছুর রহমান।
চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলার ৬৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা (পুলিশ সদস্য) ও তাঁদের পরিবারকে উত্তরীয়, সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার প্রদান করেন প্রধান অতিথিসহ অন্য আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদ, হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান মোল্লা, কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মহিউদ্দিন, মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল, মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মহিউদ্দিন, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহীদ, শাহরাস্তি থানার ওসি (তদন্ত) খোরশেদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পুলিশ কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ মাওলানা আব্দুল ছালাম ও গীতা পাঠ করেন পুলিশ সদস্য পার্থনাথ দাস। সবশেষে আমন্ত্রিত ও সংবর্ধিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রীতিভোজে অংশ নেন।