প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের আরেক নাম বাংলাদেশ। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষে শপথ পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের কোটি মানুষের সাথে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিলো চাঁদপুরবাসী।
প্রধানমন্ত্রীর এই শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরবাসীর মাঝেও ছিলো উৎসবের আমেজ। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের বিকেলে একযোগে সারাদেশে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে চাঁদপুরের আমন্ত্রিতরা অংশ নিতে দুপুর থেকেই জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিল্পী, কলাকুশলীসহ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত হতে থাকেন জেলা প্রশাসন আয়োজিত ভার্চুয়াল সভাস্থল চাঁদপুর স্টেডিয়ামে।
প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠান শুরুর আগ পর্যন্ত স্টেডিয়ামে জেলা শিল্পকলা একাডেমীসহ চাঁদপুরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে সুরসৈনিকদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় দেশাত্মবোধক সংগীতসহ শিল্পীদের মনোজ্ঞ নৃত্যানুষ্ঠান। যা উপভোগ করেন উপস্থিত সকলে। শপথ অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের আয়োজন ছিলো লক্ষ্যণীয় ও প্রাণোজ্জ্বল। সারাদেশে প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠান একযোগে বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও আইনশৃঙ্খলার সুবিধার্থে সকলকে দুপুর আড়াইটার মধ্যে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্যে বলা হলেও অনেকেই নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছেন স্টেডিয়ামে। তাদেরকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শীতের উষ্ণতা পেতে কিছুটা রৌদ্রের মধ্যেই খোলা আকাশের নীচে অপেক্ষা করতে হয়। বসার জন্যে ছিলো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের দেয়া টুপি মাথায়, মুখে মাস্ক আর হাতে থাকা জাতীয় পতাকার দৃশ্যমান প্রেক্ষাপটে স্টেডিয়ামে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। ছড়িয়ে পড়ে মাঠে বাড়তি সৌন্দর্য। সকলেই সুশৃঙ্খলভাবে অপেক্ষা করতে থাকেন প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানের জন্যে। সকলেই যেনো দেশমাতৃকার প্রেমে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। শপথ অনুষ্ঠানে মানুষের অতিরিক্ত প্রবেশ ঠেকাতে এবং মাঠের পরিবেশ রক্ষায় একসময় স্টেডিয়ামের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিকেল ৪টা ২৮ মিনিটে মাঠে থাকা ভার্চুয়াল পর্দার মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আগমনের দৃশ্য। এ সময় তাঁর সাথে ছোট বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানাকেও দেখা যায়। এই দৃশ্য দেখে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে থাকা কয়েক হাজার মানুষ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা মাঠে বসেই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিকেল সাড়ে ৪টায় শপথ পাঠ পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতাচিত্তে স্মরণ করেন ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের, স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ তাঁর পরিবারের সাথে নিহতদের, স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতাসহ গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে যারা জীবন দিয়েছেন সে সব বীর শহীদদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্তভাবে স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ ঢাকার রাজারবাগে রাতের আঁধারে পশ্চিমারা হত্যাযজ্ঞ শুরু করার পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তাঁর এ ঘোষণা পরদিন ২৬ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এদিনই দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আঃ হান্নান এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের কাক্সিক্ষত বিজয়।
বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে শুরু হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে শপথ অনুষ্ঠান। প্রায় ২ মিনিটের শপথ বাক্য পাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা।
আজ বিজয়ের ৫০ বছরপূর্তি তথা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দৃপ্তকণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না, দেশকে ভালোবাসবো, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।
আগামী দিনে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি কামনা করে ৮টি বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বত্র একযোগে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দেশের মানুষ এ শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
শপথ অনুষ্ঠান উপস্থানায় ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।