প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪১
আল্লামা খাজা আবু তাহের : আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের এক অকুতোভয় সিপাহসালার
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়। ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকের কথা। আমি তখন দাখিল ৮ম-৯ম শ্রেণিতে পড়ি। সে সময়ে সুন্নী অঙ্গনে আলেমদের মধ্যে আল্লামা খাজা আবু তাহের নামটি বেশ শোনা যেতো। গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে জেলা শহর এবং রাজধানীতে সুন্নীয়তের একটা জাগরণ সৃষ্টি করেছেন সুন্নীয়তের এই রণবীর। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের একটা শক্ত ভিত তিনি তৈরি করেছেন। ঢাকার শাহজাহানপুর এবং কমলাপুর এলাকাজুড়ে আম জনতার মাঝে সুন্নীয়ত এবং নবী প্রেমের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন। সুন্নীয়তের ময়দানে তাঁর অসীম সাহসিকতা বাতেলদের ভিত কাঁপিয়ে দিতো। সুন্নীয়ত প্রচার প্রসারে ওয়াজের ময়দানে তাঁর দুর্দমনীয় ভূমিকা এবং অবস্থান আজো সুন্নী জনতা স্মরণ করে। ওয়াজের ময়দানে নবী প্রেমের তাঁর যে অসাধারণ উপস্থাপনা, বয়ান! আহলে বাইতে আত্বহারগণের প্রেমের যে সুধা তিনি আশেকদের অন্তরে জ্বালিয়ে দিয়েছেন! তা আশি এবং নব্বই দশকের সুন্নী মুসলমানদের হৃদয়ে এখনো জাগরুক হয়ে আছে। তিনি সুলতানুল ওয়ায়েজিন হিসেবে সমধিক পরিচিত ছিলেন। শবে বরাত এবং শবে ক্বদরে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের অসংখ্য সুন্নী জনতা ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদে ছুটে যেতেন আল্লামা খাজা আবু তাহের (র.)-এঁর বয়ান, মিলাদ-ক্বিয়াম এবং মুনাজাতে অংশ নেয়ার জন্যে। তাঁর মুনাজাত এবং নবী প্রেমের বয়ানে মানুষ অঝোরে চোখের পানি ফেলতো। আশেকরা অন্তরের খোরাক পেতো তাঁর বয়ান এবং দোয়া মুনাজাতে।তিনি গাছতলা দরবারের রওনক সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি কিছুদিন ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন।
তাঁর অসীম সাহসিকতার কাছে বাতেলরা পরাস্ত হতো। হাজারো বাতেলের মাঝে তিনি একা নবী প্রেমের ঝাণ্ডাকে তুলে ধরতেন। তাঁকে সুন্নীয়তের ময়দানে একজন বীর যোদ্ধা বলা হতো। তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের এক অকুতোভয় সিপাহসালার ছিলেন। বহু সুন্নী ওয়াজ-মাহফিলে বাতেলরা প্রবল প্রতিরোধ হয়ে দাঁড়িয়েছে! সেখানে আল্লামা খাজা আবু তাহের (র.) সাহসিকতার সাথে হাজির হয়ে গিয়েছেন। বাতেলরা সব পরাস্ত হয়ে ভয়ে পলায়ন করেছে, আর আম জনতাসহ ময়দান সুন্নীদের দখলে চলে এসেছে। এভাবেই তিনি বাংলার আনাচেকানাচে সুন্নীয়তকে পৌঁছে দিয়েছেন।
আল্লামা খাজা আবু তাহের (র.) সুন্নী আলেম সমাজ এবং সুন্নী জনতার কাছে 'মামা' হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। সকলে তাঁকে মামা বলে সম্বোধন করতেন। তার কারণ হচ্ছে- আওলাদে রাসুল, ইমামে আহলে সুন্নাত, মোজাদ্দেদে জামান, শায়খুল মাশায়েখ আল্লামা সাইয়েদ আবিদ শাহ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী (রা.) হচ্ছেন খাজা আবু তাহের (র.)-এঁর ভগ্নিপতি। অর্থাৎ গাছতলা দরবার শরীফের জামাতা ছিলেন আওলাদে রাসুল মুর্শিদ কেবলা আবিদ শাহ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী। মুর্শিদ কেবলার শ্যালক, ইমামে রাব্বানী দরবার শরীফের শাহজাদাগণের মামা, সে হিসেবে খাজা আবু তাহের (র.)সহ গাছতলা দরবার শরীফের সকল শাহজাদাকে মামা বলে সম্বোধন করা হতো।
আল্লামা খাজা আবু তাহের (র.)-এর সাথে আমার বাবা আল্লামা রুহুল্লাহ (র.)-এর এক অসাধারণ মহব্বত ছিলো। আমার বাবা বেগম মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্বে থাকাকালীন খাজা আবু তাহের (র.) অনেকবার বেগম মসজিদে ওয়াজ মাহফিলে এসেছেন। আমাদের বাসায়ও হুজুর বেশ কয়েকবার এসেছেন।
পেয়ারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার এই অদ্বিতীয় আশেক, সুন্নীয়তের এই বীর সিপাহসালার ১৯৯৪ সালের ২২ জানুয়ারি মাওলায়ে হাকিকির দীদারে চলে গেছেন। তাঁর বড় সাহেবজাদা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী (মাঃজিঃআঃ) বাবার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ঐতিহ্যবাহী গাছতলা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন তথা বর্তমান গদ্দীনশীন পীর সাহেবের দায়িত্বে আছেন।এএইচএম আহসান উল্লাহ : সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর প্রেসক্লাব। বার্তা সম্পাদক, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।
ওলী : স্রষ্টার বন্ধু, সৃষ্টির অভিভাবক
মোহাম্মদ মেছবাহ উদ্দিন আশরাফী
জীবনে সফলতা পাওয়ার জন্য আত্মশুদ্ধি বা তাযকিয়া অর্জন অতীব জরুরি বিষয়। শরীর অসুস্থ হয়ে পড়লে যেমন আমরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হই, ঠিক তদ্রুপ অন্তরের রোগসমূহ তথা ক্রোধ, লোভ-লালসা, মোহ, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, অহংকার প্রভৃতি থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্যেও একজন রুহানী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যার সান্নিধ্য দ্বারা এই রোগসমূহের সুচিকিৎসা সম্ভব। অন্যথায় রুহানী রোগে আক্রান্ত হয়ে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
ইমাম জালালুদ্দীন রুমি (রহ.)-এঁর একটি বাণী এ রূপ যে, ‘সোহবতে সালেহ তোরা সালেহ কুনাদ, সোহবতে তালেহ তোরা তালেহ কুনাদ’। যার বাংলা কাব্যানুবাদ হলো, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’।
আল্লাহ্ পাকের খাছ রহমত লাভ করার জন্যে আল্লাহ্ পাকের প্রিয় মকবুল বান্দাদের সোহবত (সান্নিধ্য) ইখতিয়ার (গ্রহণ) করতে হয়। আল্লাহ্ পাকের নীতি বা সুন্নত হলো আম্বিয়া ও আউলিয়ায়ে কিরামগণের মাধ্যমে তিনি বান্দাদেরকে হিদায়াতের পথ দেখান, খাছ রহমত দান করেন। যেমন- সাহাবায়ে কিরাম জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকার পরও একমাত্র নবী করীম (দ.)-এর সংস্পর্শের মাধ্যমে লাভ করেছিলেন হিদায়াতসহ ঈমানী-রূহানী তরক্কী ও মর্যাদার সর্বোচ্চ আসন। অনুরূপভাবে তাবেঈনগণও হেদায়াত এবং উচ্চ মর্যাদা প্রাপ্ত হয়েছিলেন সাহাবায়ে কিরামগণের সোহবতের মাধ্যমে। যেহেতু শেষ নবী হিসেবে নবী করীম (দ.)-এঁর রেসালত কিয়ামত পর্যন্ত নির্ধারিত, সেহেতু তাঁরই ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী হিসেবে পরবর্তীকালে আউলিয়ায়ে কেরামগণ মানুষের হেদায়াত ও আল্লাহর দিকে আহ্বানের দায়িত্বে নিয়োজিত। এ জন্যই যারা আউলিয়াগণের সান্নিধ্যে থাকবে, নূরে নবুওয়তের আলো তাদের দিকে সম্প্রসারিত হতে থাকবে।
সুতরাং প্রথমেই জানার বিষয় ওলী বা আউলিয়া কারা। ‘ওলী’ আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ-বন্ধু, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক, নৈকট্যশীল, এটঅজউওঅঘ, চঅঞজঙঘ, ঋজওঊঘউ, ঈঙগচঅঘওঙঘ ইত্যাদি। ফার্সিতে যাকে ‘পীর’ বলা হয়। ‘ওলী’ শব্দের বহুবচন হলো ‘আউলিয়া’। পবিত্র কোরআনে ‘ওলী’ এবং ‘আউলিয়া’ উভয় শব্দটির ব্যবহার হয়েছে অসংখ্যবার। আল্লাহ তা’য়ালা সূরা ইউনুছের ৬২-৬৪নং আয়াতে বলেনÑ‘সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর ওলীগণের কোনো ভয় নেই এবং তাঁদের কোনো চিন্তাও নেই। আর ওলী তাঁরাই, যারা ঈমান এনেছে ও আল্লাহকে ভয় করে তথা তাক্বওয়াবান। তাদের জন্যে সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথা সর্বদাই অপরিবর্তনীয়। এটাই হলো মহা সফলতা’।
সুতরাং আল্লাহর ওলীগণই হলেন ঐ সকল তাক্বওয়াবান ব্যক্তি যারা আল্লাহকে ভয় করে। যাদেরকে পবিত্র কুরআনে ‘উলিল আমর’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা সূরা নিসার ৫৯নং আয়াতে ওই সকল উলিল আমরগণকে অনুসরণ করার জন্য সরাসরি হুকুম করেছেন। যেমন আল্লাহ উক্ত আয়াতে বলেনÑ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও তাঁর রাসূল পাক (দ.)-এঁর আনুগত্য করো এবং উলিল আমরগণের আনুগত্য করো।’ সুতরাং আল্লাহর ওলীগণ তথা কামেল পীরের অনুসরণ করা মহান আল্লাহর হুকুমানুসারে অত্যাবশ্যক। আর এই অনুসরণের একটি উত্তম পন্থা হলোÑতাঁদের নিকট বায়াতগ্রহণ করা বা মুরিদ হওয়া অর্থাৎ তাঁদের দেখানো পথে চলা। কেননা, তাঁরা যেহেতু মহান রবের নৈকট্যপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাই তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণই মহান রবের নৈকট্য লাভের পাথেয় হবে। অতএব তাঁরাই হচ্ছেন সাধারণ মানুষের সাথে মহান আল্লাহ তা’য়ালার সেতুবন্ধনের উসিলা। আর এ বিষয়ে আল্লাহর বাণী হলোÑ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় করো এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় বা ওসিলা তালাশ করো।’ [সূরা মায়েদা, আয়াত নং ৩৫]।
বহু সহিহ হাদিসে এসেছে যে, সাহাবীগণ রাসুলুল্লাহ (দ.)-এঁর উসিলা দিতেন বা তাঁরা এক সাহাবী অন্য সাহাবীর উসিলা দিতেন। আর তদ্রƒপ আমাদেরও উচিত আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্যে রাসুল (দ.), সাহাবী, ইমাম, অলী-আউলিয়াগণের উসিলা ধরা। যেহেতু উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহকে পাওয়ার জন্যে উসিলা তালাশ করার তাকিদ তথা হুকুম দেয়া হয়েছে। তাই জানা উচিত যে, উছিলা কী? তাফছিরে রুহুল বয়ান, ২য় খণ্ডের ৪৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে : ‘আল্লাহকে উছিলা ব্যতীত হাছিল করা যায় না। আর সেই উসিলা হলো ওলামায়ে হাক্কানি রাব্বানী তথা আউলিয়ায়ে কেরামগণ এবং ত্বরিকতের মাশায়েখগণ।’ সুতরাং আল্লাহকে তালাশ করতে উছিলা হিসেবে ত্বরিকতের মাশায়েখগণের কাছে বায়াত গ্রহণ করা ওয়াজিব।
হাদীসে রাসুল (দ.)-এর দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়Ñনবী করীম (দ.) বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে মহব্বত করেন তখন আল্লাহ জিবরাঈল (আ.)কে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ভালোবাসি। অতএব তুমিও তাকে ভালোবাসো। ফলে জিবরাঈল (আ.)ও তাকে ভালোবাসেন। অতঃপর জিবরাঈল আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করেনÑআল্লাহ অমুককে ভালোবাসেন। অতএব তোমরা সকলেই তাকে ভালোবাসো। ফলে আসমানবাসীরাও ঐ ব্যক্তিকে ভালোবাসে। অতঃপর জমিনবাসীও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে’ [বুখারি শরীফ, হাদিস নং-৫৬৯৩]
অন্যত্র রাসুলুল্লাহ (দ.) বলেছেন : ‘আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের সম্পর্কে সুসংবাদ দিবো না? সাহাবীরা বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ (দ.)। তখন নবীজি (দ.) বলেন, তোমাদের মধ্যে তারাই সর্বোত্তম যাদের দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪১১৯, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৩২৩]
নবী ক্বারীম রাউফুর রাহীম, হুজুর পূরনূর (দ.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমার এমন কিছু বন্ধু বা আউলিয়ায়ে কিরাম আছেন যাদের জিকির আমার জিকির, আর আমার জিকির তাদের জিকির হিসেবে পরিগণিত হয়।’ [তাবরানী শরীফ, হাদিস নং-৬৫১। মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ১৫৬৩৪]
আউলিয়ায়ে কেরামের বেলায়েত বা মর্যাদার স্তর : আউলিয়ায়ে কেরামের বেলায়তের স্তর তিনটি। যথা : ১. প্রকৃতিগত, ২. প্রদানকৃত, ৩. অর্জনকৃত।
১. প্রকৃতিগত : যাদেরকে আল্লাহ জন্মলগ্ন থেকেই অলি বানিয়ে প্রেরণ করেন তারাই প্রকৃতিগতভাবে বেলায়তপ্রাপ্ত অলি। যেমনÑহযরত মরিয়ম (আ.), হযরত হাসান, হযরত হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, হযরত গাউসে পাক রাদিআল্লাহু আনহু, হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রাদিআল্লাহু আনহু প্রমুখ।
২. প্রদানকৃত : কোনো অলীর নেক নজর দ্বারা অর্জিত বেলায়ত হলো প্রদানকৃত বেলায়ত। যেমনÑহযরত গাউসে পাক (রাদিআল্লাহু আনহু)-এঁর নেক নজর দ্বারা চোর আল্লাহর অলী হয়ে গিয়েছিল।
৩. অর্জনকৃত : যা মেহনত ও ইবাদত দ্বারা অর্জিত হয় তাই অর্জনকৃত বেলায়ত।
যুগে যুগে আল্লাহর অলিগণ দ্বীন প্রচার এবং রক্ষার জন্যে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছুটে গিয়েছেন, আস্তানা করেছেন। ইসলামের প্রচার এবং ইলমে দ্বীনের আলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর আমাদের চাঁদপুরেও আমরা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত এমন কয়েকজন মহান অলিগণের ব্যাপারে জেনে থাকি। তন্মধ্যে অন্যতম হলেন, তরীকতের মহান সাধক, গাছতলা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা, কুতুবুল ইরশাদ, আল্লামা হাফেজ ক্বারী খাজা আহমদ শাহ (রহ.) নকশেবন্দী মুজাদ্দেদী। যাঁর পূর্বপুরুষ পবিত্র মদিনা শরীফের বাসিন্দা। উনারা সেখান থেকে বাংলার জমিনে এসে ইসলাম প্রচার করেন এবং এদেশে সিলসিলায়ে নকশেবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়ার প্রসার ঘটান। সেই সাথে তিনি চাঁদপুরের ইসলামপুরে গাছতলা দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। যেই দরবার চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নে অবস্থিত। পরবর্তীতে উনার সন্তানগণ পীরে তরীকত আল্লামা হাফেজ ক্বারী খাজা আবুল খায়ের (রহ.) নকশেবন্দী মুজাদ্দেদী, আল্লামা শাহসূফি খাজা তৈয়বুল ইসলাম (রহ.) নকশেবন্দী মুজাদ্দেদী এবং ইমামে আহলে সুন্নাত, আশেকে রাসূল, সানীয়ে ওয়ায়েস করনী আল্লামা খাজা আবু তাহের (রহ.) নকশেবন্দী মুজাদ্দেদী সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে দ্বীনের খেদমত করে যান। আল্লামা খাজা আবু তাহের (রহ.) হক্কানি আলেম তৈরি করতে রাজধানী ঢাকার বুকে রেলওয়ে হাফিজিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে যান। বর্তমান সময়ে দেশে হক্কানি আলেম তৈরিতে যেই প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে সেই খাজা বংশের উজ্জ্বল নক্ষত্র হাদিয়ে দ্বীন ও মিল্লাত আল্লামা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী নকশেবন্দী মুজাদ্দেদী (মা.জি.আ.) সেই খেদমতের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। পূর্বপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা, মসজিদ, দরবারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। আল্লাহ উনার হায়াতে অফুরন্ত বরকত দান করুক এবং আমাদেরকে আওলিয়ায়ে কেরামগণের সোহবত লাভ করার সৌভাগ্য দান করুক, আমিন।মোহাম্মদ মেছবাহ উদ্দিন আশরাফী : উপাধ্যক্ষ, রেলওয়ে হাফিজিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদরাসা, উত্তর শাহজাহানপুর, ঢাকা।