প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অনেকাংশে পরিবেশের ওপর নির্ভর করে : জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর, চাঁদপুরের আয়োজনে এবং সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুরের সহযোগিতায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২২ উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকাল ১০টায় চাঁদপুরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে র্যালি শুরু হয়। ‘একটাই পৃথিবী’ শ্লোগান এবং ‘একটাই পৃথিবী, প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন’ এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি পরিবেশ খাতে সুশাসনের গুরুত্ব বিবেচনায় টিআইবি প্রতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করে আসছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর টিআইবি ‘একটাই পৃথিবী, একটাই বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি আয়োজন করেছে। র্যালি-পরবর্তী আলোচনা সভা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সরোয়ারের সভাপ্রধানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দিন, পিপিএম।
|আরো খবর
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় নাগরিক সচেতনতার মাধ্যমে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমাদেরকে টেকসই উন্নয়নের কথা চিন্তা করতে হবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বর্তমানে যে উন্নয়ন তা-ই হলো টেকসই উন্নয়ন। তিনি আরো বলেন, প্রকৃতির সাথে ভারসাম্য রেখে জীবনযাপন এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অনেকাংশে পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। সকলের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ না থাকলে কারো একার পক্ষে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২৮ শতাংশ মানুষ মারা যায় পরিবেশগত সমস্যার কারণে। আমরা বিগত দুটা বছর একটা ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। পরিবেশ নিয়ে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে, তা না হলে আমাদেরকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে। গাছ লাগানোর ক্ষেত্রেও আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আমাদেরকে পরিবেশবান্ধব গাছ লাগাতে হবে। একটা গাছ কাটলে কমপক্ষে ৫টা গাছ লাগাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দিন, পিপিএম বলেন, পরিবেশের বিপর্যয় যদি আমরা রোধ করতে না পারি তাহলে আমদেরকে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় বনায়নের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে এনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদেরকে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সামাজিকভাবে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি কালচারাল পরিবেশও দূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কালচারাল পরিবেশ দূষণ রোধের উদ্যোগও আমাদেরকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে সুন্দর একটা পৃথিবী আমরা তৈরি করবো।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২২ উপলক্ষে টিআইবির দাবিসমূহ উপস্থাপন করেন টিআইবির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানা। ‘একটাই পৃথিবী, একটাই বাংলাদেশ’। তাই পরিবেশ সংক্রান্ত আইন ও নীতির কার্যকর প্রয়োগই পারে প্রকৃতির সাথে ভারসাম্য রেখে জীবনযাপন এবং বাংলাদেশের টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে। আর এজন্যে প্রয়োজন পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ। যার মাধ্যেমে পরিবেশের জন্য টেকসই এবং সাশ্রয়ী ও বিকল্প উন্নত জীবন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব। তিনি বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২২ সামনে রেখে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় শুদ্ধাচার নিশ্চিতে টিআইবির নিন্মোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করেন-
বন ও জলাভূমিসহ পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করার সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুসারে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটিয়ে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে;
পরিবেশ দূষণ রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে সম্পাদনে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; পরিবেশ সুরক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সকল পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, আদিবাসী এবং নারীসহ ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কার্যক্রম বাস্তবায়নে তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে; সঠিক পরিকল্পনাসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে প্রণোদনা ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের উপর ‘কার্বন ট্যাক্স’ আরোপ করতে হবে; বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালনির ব্যবহার বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ¦ালানির প্রসারে একটি স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করে প্রশমন বিষয়ক কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে; এ খাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে; পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনসহ আইন প্রয়োগে সকল প্রকার ভয়, চাপ ও আর্থিক প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে দূষণের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে; বন, নদী, জলাশয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অবৈধ দখলের সাথে জড়িতদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ক্ষতি রোধ এবং জীবন-জীবিকা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ নির্মীয়মান কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত, সামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে; টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সকল উন্নয়ন কার্যক্রমে পরিবেশ সুরক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে; এবং পরিবেশের জন্য টেকসই এবং প্রাত্যহিক জীবনধারনের জন্যে সাশ্রয়ী ও বিকল্প ব্যবস্থা প্রবর্তনে পরিবেশ সুরক্ষা-সংক্রান্ত কার্যক্রমে নাগরিক অংশগ্রহণ এবং শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা মোঃ মোশারফ হোসাইন, পবিত্র গীতা পাঠ করেন চন্দনা রাণী শীল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন মোঃ রাজীব। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ। দিবসটির ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদ হোসেন। প্রবন্ধের ওপর মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চাঁদপুর ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রহমান, চাঁদপুর বেলভিউ হাসপাতালের পরিচালক রোটাঃ মাসুদ হোসেন, একুশে টিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর জেলা প্রতিনিধি নেয়ামত হোসেন। এছাড়াও র্যালি ও আলোচনা সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ, সনাক-চাঁদপুরের সদস্য, অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপের সদস্য ও ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।