প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৭
পুরাণবাজারের মধুসূদন মাঠটিতে নিয়মিত খেলাধুলা চান খেলোয়াড়রা

চাঁদপুর শহরের বেশ ক’টি খেলার মাঠের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী একটি মাঠ হচ্ছে পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি। জেলার প্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত পুরাণবাজারের এই বিদ্যালয়ের মাঠটিকে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় খেলোয়াড়রা ব্যবহার করে আসছেন। স্বাধীনতার আগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিদ্যালয়ের সামনের বিশাল অংশটিকে মাঠের জন্যে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দেয়। গত ১৫ থেকে ২০ বছরে মাঠের চারপাশের অনেক অংশই ছোট হয়েছে। মাঠের বিশাল একটি অংশ পুরাণবাজার বালিকা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সহ আশেপাশের প্রভাবশালীরা গিলে ফেলেছেন নিজেদের ব্যবহারের জন্যে। মাঠের চারপাশে বাউন্ডারি দিয়ে যেটুকু মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সেই টুকুতে এখন খেলার আয়োজন করা হলেও একেকটি দলে ৯ জনের বেশি খেলোয়াড় খেলতে পারবে না। সেই মাঠটিতে এখন নিয়মিত খেলাধুলা চান স্থানীয় খেলোয়াড় সহ শহরের বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড় সহ ক্রীড়া সংগঠকরা।
চাঁদপুর জেলা সদরের পুরাণবাজারে অবস্থিত এই মাঠটিতে একসময় দেশের সেরা ফুটবলাররা নিয়মিত ফুটবল খেলেছেন। এই মাঠ থেকেই আশির দশকের জেলার সেরা ফুটবলারদের সৃষ্টি হয়েছে। যারা একসময় দেশের জাতীয় দল সহ লাল ও সবুজ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কিন্তু দিন দিন মাঠটি ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে এবং একটি গ্রুপ তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্যে স্কুলের জায়গা দখল করে মাঠের একটি অংশে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভবন তৈরি করে রাখার কারণে মাঠটি থেকে খেলাধুলা হারিয়ে যায়। তারা তাদের ভবনকে নিজেদের মতো ব্যবহার করে মাঠের মূল গেট বছরের বিভিন্ন সময় আটকিয়ে রেখে তাদের ভবনের ইনডোর গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বেশি।
পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটিতে ২০০০ সালের আগেও চারপাশের অনেক অংশ ছিলো। মাঠের একপাশে মাটির রাস্তার পাশেই ছিলো পুকুর। সেই পুকুর ভরাট করতে গিয়েই স্কুলের জায়গা দখল করে নেন মাঠের ভেতর ভবন করা কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ ভূমিদস্যুরা। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে মাঠ সংস্কার করার কথা বলে একটি গ্রুপ চাঁদপুর পৌরসভা ও স্কুল থেকে টাকা নিয়ে কোনোরকম দায়সারা ভাবে মাঠের কিছু গর্ত পূরণ করে। মাঠটিকে পুরোপুরি খেলার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়রগণ ওই গ্রুপটিকে বিভিন্ন ভাবেই মাঠের উন্নয়নের জন্যে সহযোগিতা করেছেন বলে স্থানীয়রা এ প্রতিবেদককে জানান।
পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যখনই খেলাধুলার আয়োজন করা হয়, তখনই দেখা যায় খেলা দেখার জন্যে মাঠে উপচেপড়া ক্রীড়ামোদী দর্শকদের ভিড়। গত কয়েকদিন আগে সানরাইজ ক্লাবের ফুটবল টুর্নামেন্টে ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে ফুটবল, হাডুডু ও লংজাম্প খেলায় দেখা গেছে মাঠের চারাপাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদ সহ মূল মাঠের চারপাশে ছিলো দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়।
সরজমিনে পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শনিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায় যে, ছোট ছোট ছেলেরা বুট পরে নিজেরা নিজেরা খেলছে। তাদের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, গত সোমবার এখানে ফুটবল খেলা হয়েছে। আমরা মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা করতে চাই। এ এলাকার যারা সাবেক ফুটবলার রয়েছেন, তারা যদি আমাদেরকে নিয়ে বিনা ফিতে ফুটবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন, তাহলে আমরা নিয়মিত ফুটবল অনুশলীন করে ভালো ফুটবলার হতে পারতাম।
পুরাণবাজারের এই মাঠের পাশেই বসবাসকারী নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ক’বছর এ মাঠটিকে খেলার জন্যে ব্যবহার না করে মাঠের একটি স্থান দখল করে ক্লাব বানিয়ে তারা বাণিজ্যিকভাবে নিজেদের পকেট ভারী করেছে। তারা এলাকার খেলোয়াড় র্কিংবা খেলার উন্নয়নের জন্যে কিছুই করেননি। তারা বিভিন্ন সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার নাম ভাঙ্গিয়ে চেম্বার অব কমার্স সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ দিয়ে বড়ো অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। সর্বোপরি বর্তমান জেলা প্রশাসক ও চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক সহ চাঁদপুর ও হাইমচরের মাটি মানুষের নেতা শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ভাই যদি মাঠটির প্রতি একটু নজর দেন, তাহলে জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী এ মাঠটিতে আবারো খেলাধুলা ফিরে আসবে এবং উদীয়মান খেলোয়াড় তৈরি হবে। আমরা চাই এ মাঠটিতে নিয়মিত স্কুল ফুটবল সহ বড়োদের ফুটবল খেলার আয়োজন এবং সাবেক ফুটবলারদের নিয়ে ফুটবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক।
ক্যাপশান- পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ছোট ছোট শিশুরা এভাবেই নিজেরাই ফুটবল খেলে নিয়মিতভাবে।