প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৩:১৯
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দুঃসাহসিক চুরি বেড়ে উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ
রায়পুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি হওয়া ওষুধ সহ মালামালগুলো ১৩দিনেও উদ্ধার হয়নি

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে শহর জুড়ে বেড়েছে দুঃসাহসিক চুরি। নানা কৌশলে চলমান চুরির ঘটনা যেন নিত্যদিনের। ব্যবসায়ীদের অনুপস্থিতিতে দোকানের দরজা ভেঙ্গে ও ওপরে টিনের চাল কেটে ওষুধসহ মূল্যবান মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। থানায় অভিযোগ দিলেও গত ১৩ দিনে চোর আটক বা চোরাইকৃত মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে করে রায়পুর পৌর শহরে ও গ্রামের ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
|আরো খবর
এই চুরির ঘটনা রোধে সোমবার রায়পুর বাজার বণিক সমিতি শহরের জন্যে ২৫ জন নৈশ প্রহরী নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে সভাপতি সাইফুল ইসলাম মুরাদ ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জানান।
সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরের একাধিক চক্র। এসব চক্রের বেশির ভাগ সদস্য উঠতি বয়সের তরুণ। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চোরাইকৃত মালামাল বিক্রি করে মাদক সেবন করছে চোর চক্রের সাথে জড়িত তরুণ ও যুবকরা।
তথ্যানুযায়ী, সোমবার রাতে বাসাবাড়ি বাজার এলাকায় আমিন ফার্মেসিতে ২৫ লাখ টাকার ওষুধ চুরি হয়েছে। রোববার রাতে রায়পুর ও হায়দরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের মিতালি বাজার এলাকায় ইলেকট্রিক ও স্বর্ণের দোকানে চুরি হয়। টিনের চাল কেটে ভেতরে ঢুকে দুই ব্যবসায়ীর জমির দলিল ও ২ ভরি স্বর্ণসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র।
সোমবার রাত ৮টায় অজ্ঞাতদের আসামি করে রায়পুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী মো. ছুট্টু মিয়া।
শনিবার রাতে রায়পুর শহরের সাবেক সোনালী ব্যাংক সড়কে আমেনা ফার্মেসীর মালিক আরিফুল হক স্বপনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টিনের চাল কেটে ভেতের প্রবেশ করে চোর চক্র। এ সময় ফ্রিজে থাকা এন্টিবায়েটিক সহ প্রায় ২০ লাখ টাকার ওষুধ চুরি করে চোরচক্র। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে।
গত ৪দিনেও চোরাইকৃত ওষুধ উদ্ধার না হওয়ায় আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি চরম ঘৃণা প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাবসায়ী মো. স্বপন।
শুক্রবার রাতে রায়পুর শহরের নতুন বাজার এলাকায় কনফেকশনারী মো. শাহজাহানের (৬৫) দোকানের তালা ভেঙ্গে ৭০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোর চক্র। একই রাতে রায়পুর শহরের পীর বাড়ির সামনে টিসি সড়কের নুর হোসেন পাটোয়ারী (৭০) নামের ব্যবসায়ীর মুদি দোকানের লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোর চক্র। এ ঘটনায় দুই চোরকে আটক করলেও অভিভাবক ছাড়িয়ে নিয়ে যায় বলে সোমবার ব্যবসায়ী জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে রায়পুর পৌরসভার পরে দেবিপুর গ্রামের বেপারী বাড়ির দুবাই প্রবাসী জহিরের (৩৫) বসতঘরের তালা ভেঙ্গে দুই লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে পাশের বাড়ির মাদকাসক্ত জাহাঙ্গীর (৪৫)। ঘটনার ৭ দিন পার হলেও জাহাঙ্গীরের লোকজনের কারণে বিচার পাচ্ছে না বলে জানান প্রবাসীর স্ত্রী নিশি। এলাকার কয়েকজন সমাজপতি বিচার হবে, করবেন বলেও কালক্ষেপণ করছেন।
শনিবার বিকেলে শহরের মধ্যবাজার এলাকায় সৈকত নামের এক ব্যবসায়ীর আড়াই লাখ টাকা মূল্যের নতুন জিকসার মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। পরে চাঁদপুর শহর থেকে উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
একটির পর একটি এ ধরনের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে শহর সহ উপজেলাজুড়ে।
রায়পুর উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম মুরাদ ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আতংকে। চোর চক্রকে আটকের জন্যে পুলিশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে পুরো শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এর সাথে ২৫ জন নৈশ প্রহরী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সম্পাদক মাসুদুর রহমান খান বলেন, কয়েক মাস ধরেই রায়পুর সদরে শহর ও জেলা জুড়ে থামছে না চুরি-ছিনতাই। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় দিন দিন অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। থানা পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভুইয়া বলেন, ওষুধ ব্যবসায়ী স্বপন ও ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী ছুট্টু লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। চুরি যাওয়া মালামালগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি। প্রতিনিয়ত আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে। চোর চক্র ধরতে আমাদের বাড়তি টিমও কাজ করছে। অচিরেই সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
ডিসিকে/এমজেডএইচ