প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৪
জাঁকজমকপূর্ণভাবে শেষ হলো এসপিএল টেপ টেনিস সিজন-২ ক্রিকেটের ফাইনাল

টি-টোয়েন্টিতে সেরা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ও চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল)-এর মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আদলে চাঁদপুর জেলাবাসীসহ শাহরাস্তি উপজেলা ও বিভিন্ন জেলার ক্রিকেটাররা উপভোগ করলো শাহরাস্তি প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ (এসপিএল) টেপ টেনিস সিজন-২ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলা। খেলার মাঠটি একটি উপজেলাতে হলেও মাঠটি এমনভাবে উপযোগী করে তোলা হয়েছিল যে, মাঠটিকে মনে হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট কিংবা রাজশাহীর কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু। কয়েক হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার (৫ এপ্রিল ২০২৫) বিকেলে। ফাইনাল খেলায় ছিলো ঢাকার মাঠ কাঁপানো ধারাভাষ্যকারসহ মনোমুগ্ধকর বিভিন্ন অনুষ্ঠান। দুপুরের দিকে খেলা শুরু হয়ে খেলাটি শেষ হয় গোধূলিলগ্নে। খেলা চলাকালীন সময় দেখা গেছে সূচীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পুরো চারপাশে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। ছাত্রদল নেতা শহীদ ওয়াসিম গ্যালারীসহ বাজারের বিভিন্ন ব্যাংক ও অফিসের ছাদ, স্কুলের ছাদ ও বাসা বাড়ির ছাদে ক্রীড়ামোদী দর্শকদের ছিলো ভিড়। ফাইনালে দেখা গেছে মাঠের বিভিন্ন পাশে মহিলা দর্শকও। চার-ছক্কার এ ফাইনাল ম্যাচে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন ফাইনাল ম্যাচে অংশ নেয়া দুদলের ক্রিকেটাররা। ফাইনাল খেলা ঘিরে পুরো শাহরাস্তি উপজেলায় ওই দিনটি ছিলো একটি আনন্দের দিন। দোয়াভাঙ্গা থেকে শুরু করে সূচীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ পর্যন্ত প্রত্যেকের মুখেই ছিলো আজ (শনিবার) ক্রিকেট খেলার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফাইনাল খেলার শেষ পর্যায়ে দেখা গেছে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন হোটেল ও খাবারের দোকানগুলোতেও ছিলো খাবারের সংকট। চাঁদপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন সকালে ছুটে যান খেলা দেখতে। দুপুরে ক্রীড়ামোদী দর্শকরা নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করেই খাবার খেয়ে নেন। আর অনেকদিন পর বেশি বেচা-বিক্রি করে দোকানদারগণও ছিলেন খুশি।
শাহরাস্তি প্রিমিয়ার লিগ (এসপিএল) সিজন-২ শেষ পর্বে পৌঁছলে শিরোপার জন্যে নামে দুর্দান্ত দু দল যথাক্রমে কুমিল্লার গুণবতী আলকরা স্পোর্টস ইউনিটি চৌদ্দগ্রাম ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ভিক্টোরী সুপার হিরোজ। দু দলেই খেলেছেন বর্তমান সময়ের টেপ টেনিসের বিভিন্ন জেলার ক্রিকেটাররা।
ফাইনাল খেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। ফাইনালের আকর্ষণ বাড়াতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামি ও সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় সব ব্যক্তিবর্গ, উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ মাঠে কয়েক হাজার দর্শক। শনিবার দিনব্যাপী জমকালো আয়োজনে উপজেলার সূচীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ফাইনালে হাজীগঞ্জ ভিক্টোরী সুপার হিরোজ দলকে ৫০ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় গুনবতী আলকরা স্পোর্টস ক্লাব চৌদ্দগ্রাম। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভার গুনবতী আলকরা স্পোর্টস ক্লাব চৌদ্দগ্রাম ২৫০ রান করে।
শাহরাস্তি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির আয়োজনে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হয়েছিলো শাহরাস্তি প্রিমিয়ার লীগ টেপ টেনিস ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সিজন-২। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মো. আশরাফুল।
শাহরাস্তি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির আয়োজনে টুর্নামেন্টের সিজন-২-এর খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয় সূচীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। খেলা উপলক্ষ্যে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছিলো মাঠ। মাঠসহ মাঠের চারপাশ সজ্জিত করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক খেলার নিয়ম অনুযায়ী।
এবারে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলো সিলেট, ঢাকা, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চৌমুহনী, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, লাকসামসহ চাঁদপুর জেলা এবং উপজেলার ৩২টি দল। উদ্বোধনী ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলো সিজন ১-এর ফাইনালে খেলা শাহারাস্তি উপজেলার উপলতা স্পোর্টিং ক্লাব ও অষ্টগ্রাম স্পোর্টিং ক্লাব।
এবারের টুর্নামেন্টের পুরস্কার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও রানার আপ দল পেয়েছে ১ লাখ টাকা ও ট্রফি। টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দলগুলোর এন্ট্রি ফি ছিলো ৮ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দলগুলো ছিলো : আহমেদ রাব্বি এলিট ইলেভেন নারায়ণগঞ্জ, গ্র্যান্ড ভিক্টোরি স্পোর্টিং ক্লাব, এনআরসি চৌদ্দগ্রাম কুমিল্লা, হাইমচর স্টার চাঁদপুর, গুড্ডু ক্রিকেটার্স গাজীপুর, কুচাইতলী রাইডার্স কুমিল্লা, যাত্রাবাড়ী লায়ন্স ঢাকা, এআর এন্টারটেইনমেন্ট সিলেট, মারিয়ান এক্সপ্রেস বরিশাল, লাল সবুজ ক্রিকেট ক্লাব, অলস্টার লক্ষ্মীপুর, সূচীপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব, সিটি বয়েজ চাঁদপুর, ১০-১২ ক্রিকেট ক্লাব ঢাকা, টিম রামগঞ্জ, চিতোষী ইলেভেন লায়ন্স, আর এম স্পোর্টস ক্লাব ঢাকা, সৌদি প্রবাসী ফরিদগঞ্জ, ভিক্টোরি ক্লাব হাজীগঞ্জ, নর্থ গন্ধর্ব্যপুর, উপলতা স্পোর্টিং ক্লাব, অষ্টগ্রাম স্পোর্টিং ক্লাব, বড়কুল আইডিয়াল ক্লাব, জমাদ্দার বাড়ি একাদশ, স্পোর্টস লাভার সন্দ্বীপ চট্টগ্রাম, জিরো ফোর ক্লাব ঢাকা, ঢাকা ইউনিভার্সিটি, স্টার স্পোর্টিং ক্লাব দক্ষিণ লংলা, কুলাউড়া, সিলেট, ঠাকুরবাজার স্পোর্টিং ক্লাব, লাকসাম রকস্টার ফ্যাশন, গুণবতী আলকরা স্পোর্টস্ ইউনিটি চৌদ্দগ্রাম ও চৌমুহনী ফাইটার্স চট্টগ্রাম।
অংশ নেয়া দলগুলোকে আইসিসি ও স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী খেলতে হয়েছে। প্রতিটি দলের খেলা ১৬ ওভারে অনুষ্ঠিত হয়।
ফাইনাল খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, শাহরাস্তি উপজেলাতে একটি সুন্দর ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ টুর্নামেন্টের মাধ্যমে উপজেলাবাসীকে আনন্দ দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। অন্য যে কোনো জায়গা থেকে এ টুর্নামেন্টটি সফল একটি টুর্নামেন্ট হয়েছে। টুর্নামেন্টের মাধ্যমে তরুণদের কাছ থেকে ক্রীড়া মোহ তৈরি হবে। এ উপজেলা থেকে অনেক ক্রিকেটার তৈরি হবে। আমাদের উচিত এ টুর্নামেন্টটিকে বাঁচিয়ে রাখা। আমাদের সকলকে শপথ নিতে হবে, আমরা নারী ও কন্যাদের প্রতি অন্যায় করবো না, মাদকের সাথে জড়িত থাকবো না এবং কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত থাকবো না।
জেলা প্রশাসক বলেন, অনেকের টাকা সিন্দুকে থাকে। কিন্তু যারা এ ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সহ মানুষের কাজের প্রয়োজনে টাকাটা ব্যবহার করেন, তাদের টাকাটাই সার্থক। আমি শাহরাস্তি ক্রিকেট একাডেমিকে সহযোগিতাসহ যে মাঠটিতে ফাইনাল খেলা হয়েছে, সে মাঠটিকে বড়ো করার ব্যাপারে আমার সহযোগিতা থাকবে।
শাহরাস্তি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও ক্রিকেটার সাদ্দাম হোসেন মিঠু জানান, আমরা গত বছর এই উপজেলাতে বিভিন্ন জেলার ক্রিকেট দল নিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলাম। আমরা সুন্দরভাবে টুর্নামেন্ট শেষ করেছি। আমরা আগামীতে সিজন-৩-এর আয়োজন করার চেষ্টা করছি। আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলাতে ক্রিকেট একাডেমী হোক। এতে করে নিম্ন অঞ্চল থেকে অনেক ক্রিকেটার বের হয়ে আসবে। শাহরাস্তিতে সবসময় চলমান থাকবে এ ক্রিকেট লীগ। এক টাকা নিয়ে আর দশ টাকার অর্থ খরচ করবো না। এসপিএল হবে শর্ট সময়ের একটি টুর্নামেন্ট। আপনারা শাহরাস্তি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির জন্যে দোয়া করবেন, যাতে এ একাডেমি থেকে আগামী দিনের জাতীয় মনের ক্রিকেটার তৈরি করতে পারি।
মিঠু বলেন, সারা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ টেপ টেনিস ক্রিকেট টুর্নামেন্টের গ্র্যান্ড ফাইনাল করার চেষ্টা করেছি। এই টুর্নামেন্টের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দুটি। প্রথম হচ্ছে, যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখা এবং উপজেলা পর্যায়ে হারিয়ে যাওয়া ক্রীড়াঙ্গনকে ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেভাবে যুব সমাজ মাদক ও মোবাইলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, এতে করে সমাজে চরম অবক্ষয় নেমে এসেছে।
সুস্থ জাতি গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলা শুধু একটি শারীরিক অনুশীলন নয়, এর মাধ্যমে আপনি একটা জাতিকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যত প্রতিভার ক্রিকেটার আছেন, সবাই গ্রামগঞ্জ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। গ্রামগঞ্জে যত বেশি বিভিন্ন ধরনের টুর্নামেন্ট হবে, তত ভালো ভালো প্লেয়ার বের হয়ে আসবে। তাই ধারাবাহিকভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে শাহরাস্তি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির উদ্যোগে।