প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৩
সানরাইজ ক্লাবের আয়োজনে পুরাণবাজারে ফুটবল টুর্নামেন্ট
২৪ ফেব্রুয়ারি ফাইনালে লড়বে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও চাঁদপুর সোনালী অতীত ফুটবল একাডেমী

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে সানরাইজ ক্লাবের ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। খেলাধুলা, সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ দীর্ঘদিন ধরে সানরাইজ ক্লাবটি বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ ও আয়োজকের দায়িত্ব পালন করছে।
টুর্নামেন্টের ফাইনালে লড়বে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্ভুক্ত ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব ও চাঁদপুর সোনালী অতীত ফুটবল একাডেমী। দু দলই জেলা শহরে কোনো ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে লড়বে প্রথম বারের মতো।
সেমি-ফাইনালে শক্তিশালী তালতলা ক্লাবকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে চাঁদপুর সোনালী অতীত ক্লাব ফুটবল একাডেমী এবং পুরাণবাজার একাদশকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব। টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেছিলেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক।
পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠটিকে খেলাধুলায় সচল রাখার জন্যে ক্লাবের পক্ষ থেকে জেলা সদরের দলসহ উপজেলার ৬টি দল নিয়ে দীর্ঘদিন পরে এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়।
টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দলগুলো হলো : চাঁদপুর সোনালী অতীত ক্লাব ফুটবল একাডেমি, তালতলা ক্রীড়া চক্র, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব চাঁদপুর, পুরাণবাজার ফুটবল একাদশ, মতলব ফুটবল কিংস একাদশ ও কচুয়া উপজেলা ফুটবল দল।
জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া এ টুর্নামেন্ট শেষ হচ্ছে একমাসের মধ্যেই। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী খেলা থেকে শুরু করে টুর্নামেন্টের ২য় সেমি-ফাইনালের খেলার দিনও দেখা গেছে উপচে' পড়া ক্রীড়ামোদী দর্শকদের ভীড়। প্রতিদিনই আয়োজকদের পক্ষ থেকে সেরা খেলোয়াড়দেরকে পুরস্কৃত করেন জেলার শিক্ষানুরাগী, আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়া সংগঠকরাসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।
ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে আয়োজক ও বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় মাঠটি সংস্কার করে খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া প্রতিটি দলে ৯ জন করে ফুটবলার অংশ নেয়। খেলা চলাকালীন দেখা গেছে, অংশ নেয়া দলগুলো জেলা ও উপজেলার সেরা ফুটবলারসহ ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে খেলা ফুটবলারসহ বিদেশী খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গঠন করে মাঠে নেমেছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রতিটি দলের খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে ছিলো উন্মুক্ত। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দল ট্রফিসহ পাবে প্রাইজমানি।
সানরাইজ ক্লাবের সভাপতি ও সাবেক ক্রিকেটার ব্যাংকার সঞ্জয় দাস সুমনের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পুরাণবাজার মধুসূদন মাঠে কোনো খেলাধুলার আয়োজন করা হয়নি। আমাদের ক্লাবটি খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। আমরা চাই খেলাধুলার মাধ্যমে নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি হোক। পুরাণবাজার মাঠটিতে আমরা যখন খেলেছি, তখন মাঠটি অনেক বড়ো ছিলো। দিন দিন মাঠটি ছোট হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই এ মাঠে নিয়মিত জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় খেলাধুলা যেনো চালানো হয়।
টুর্নামেন্টের আয়োজক ও সানরাইজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ফুটবলার সাইফুল ইসলামের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বলেন, চাঁদপুর সদর ও হাইমচরের গণমানুষের নেতা ও জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ভাই এ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন। আমরা ফুটবল টুর্নামেন্ট হওয়ার পর থেকেই ক্রীড়ামোদী দর্শকদের ভালোবাসায় প্রথম রাউন্ড ও সেমি-ফাইনালের খেলাগুলো সুন্দরভাবে চালিয়ে গিয়েছি। আমরা প্রতিদিনই মাঠে দর্শকদের খেলাধুলার ব্যাপারে যে সাপোর্ট পেয়েছি, তাতে আমাদের ভালো লেগেছে। আমাদের এ ক্লাবটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সানরাইজ ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে আমরা জেলা শহরের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। চাঁদপুর সদরের পুরাণবাজারের এই মাঠটির অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা এবার ৬টি দল নিয়ে খেলার আয়োজন করেছি। আগামীতে অনেক দল নিয়ে লীগ পদ্ধতিতে খেলার আয়োজন করবো বলে আশা করছি। পুরো টুর্নামেন্টে আমাদের বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মীসহ ছাত্রদলের ভাইদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।
সাবেক ফুটবলার ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচকের দায়িত্ব পালনকারী বোরহান খানের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বলেন, এবারে অংশ নেয়া প্রতিটি দলই খুব ভালো দল গঠন করে মাঠে নেমেছে। খেলা চলাকালীন সময় দেখা গেছে অনেক উদীয়মান ফুটবলার খুব ভালো খেলেছে। পুরাণবাজার মধুসূদন মাঠটি সবসময়ই খেলাধুলার জন্যে একটি মাঠ। এ মাঠে খেলার আয়োজন করা মানেই ক্রীড়ামোদী দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। আমি চাই জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে যেনো আগামীতে খেলাধুলার আয়োজন করা হলে পুরাণবাজার মধুসূদন মাঠটিকে রাখা হয়। আমরা চাই নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন যেনো করা হয়।
খেলা দেখতে আসা বেশ কয়েকজন ক্রীড়ামোদী দর্শক এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠটি এবং পুরাণবাজার মধুসূদন মাঠটিতে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা হতো। মাঠটিও বেশ বড়ো ছিলো। আওয়ামীমনা কয়েকজন ও ক্রীড়া সংগঠক বলে পরিচয় দেয়া লোকজন তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যে এবং জুয়ার আয়োজন করে নিজেদের চলার জন্যে মাঠটির একটি অংশ দখল করে ক্লাব বানিয়েছে। গত ১৭ বছর এ ক্লাবটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের মতোই ব্যবহার হতো। ক্লাবের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা লক্ষ্মীপুরের বালুখেকো সেলিম ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপুর নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের মতো করে ক্লাব চালিয়েছেন।
সাবেক ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠকরা বলেন, এ মাঠটিতে নিয়মিত খেলাধুলা হতো একসময়। জেলার ক্রীড়ামোদীরা যদি একটু এগিয়ে আসে তাহলে মাঠটিতে খেলাধুলা চালু থাকবে সব সময়ই।