প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ০১:২৮
ভুয়া তথ্য প্রচারের পর পিছু হটলেন সজীব ওয়াজেদ জয়
"তথ্যবাবার ঘুম ভাঙতেই লঙ্কাকাণ্ড!"

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং আওয়ামী লীগের ডিজিটাল প্রচারক হিসেবে পরিচিত সজীব ওয়াজেদ জয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে আবারও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সম্প্রতি তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করে দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং ‘জুলাই আন্দোলন’-এর কয়েকজন সমন্বয়কের ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম বাইন্যান্স অ্যাকাউন্টের গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে।
|আরো খবর
কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই সেই তথ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। অনেকে দাবি করেন, জয় যে ওয়েবসাইটের তথ্য শেয়ার করেছেন, সেটি অবিশ্বস্ত ও ‘ভুঁইফোড়’। একাধিক গণমাধ্যম বিশ্লেষক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ওই ওয়েবসাইটের তথ্যকে ‘মনগড়া’ বলে আখ্যা দেন।
জয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ, প্রেস সচিবের প্রতিক্রিয়া
জয়ের পোস্টের পরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। জয়কে ‘অপতথ্যের জনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন—
"ডিজিটাল লুট মাস্টার আমার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভুয়া ও মনগড়া খবর ছড়াচ্ছেন। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, যে ওয়েবসাইটের খবর জয় শেয়ার করেছেন, সেটি ভুয়া সংবাদ প্রচারের জন্য পরিচিত।"
তিনি আরও বলেন,"আমি আগেই আমার সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেছি। আমার কোনো ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড নেই। শুধু একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু খুঁজে পাওয়া যায়, আমি নিজেই চাইব সেটির তদন্ত হোক।"
চাপে পড়ে পোস্ট সরিয়ে নিলেন জয়
সমালোচনা তীব্র হতে থাকলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার পোস্টটি গোপনে সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু ততক্ষণে তা ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়ে গেছে এবং তার পোস্টের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম তার দ্বিতীয় পোস্টে লিখেছেন—
"তথ্যবাবা ঘুম থেকে উঠে আমার সঙ্গে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সম্পর্কে একটি ভুয়া খবর শেয়ার করেন। কয়েক ঘণ্টা পর সেটি সরিয়ে ফেলেন।""এই হলো সেই অপতথ্যের জনক, যাকে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা পূজা করেন। তথাকথিত হার্ভার্ড থেকে পড়াশোনা করা ডিজিটাল লুট মাস্টারের কাজের নমুনা।"
বিতর্কিত ওয়েবসাইট ও গোপন এজেন্ডা
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর চালু হওয়া ওয়েবসাইটটি মূলত সরকারবিরোধী প্রচার চালাচ্ছে। সেখানে মাত্র ২৩টি নিউজ প্রকাশিত হয়েছে, যার সবগুলোই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছেন আমিনুল হক পলাশ, যিনি একসময় বুয়েট ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রচার করে জয় নিজেকে রাজনৈতিকভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। তবে বারবার ভুয়া তথ্য শেয়ার করায় তার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, এটি আওয়ামী লীগের নৈরাজ্যবাদী রাজনীতির প্রতিফলন। গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, জয় যেহেতু আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তাই তার কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।
একজন সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন,
"সজীব ওয়াজেদ জয় এখনো মনে করেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানেই মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে প্রভাব বিস্তার করা। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা অনেকটাই বদলে গেছে। এখন মানুষ তথ্য যাচাই করে দেখে, ফলে তার প্রচার করা অপতথ্য দ্রুতই ধরা পড়ে যায়।"
ভুয়া তথ্যের রাজনীতি আর কতদিন?
সজীব ওয়াজেদ জয় এর আগেও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে সমালোচিত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তথ্য বিকৃতি করাটা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের কৌশল। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এই কৌশল আর টিকবে না।
বিষয়টি নিয়ে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—
"রাজনীতিতে অপতথ্যের ব্যবহার কি এখন আওয়ামী লীগের একমাত্র হাতিয়ার?"
সরকারি দল এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সামনের দিনগুলোতে এই বিতর্ক আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ