প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
আজ সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শৈশব থেকেই তাঁকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যোগ্য সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে ছিলেন মহীয়সী এই নারী। যে কারণে রাজনৈতিক জীবনে সফল হয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ মুজিবের বাঙালি জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে ফজিলাতুন্নেছার অবদান, অনুপ্রেরণা ও আত্মোৎসর্গ অনস্বীকার্য। তাঁর কারণেই একটি জাতির মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন বপন করে এর স্বাদও এনে দিতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে পেছন থেকে কাজ করেছেন শেখ মুজিবের প্রিয় ‘রেণু’। আজ ৮ আগস্ট মহীয়সী এই নারীর ৯২তম জন্মদিন।
জীবন-সংগ্রামের সব কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেও তিনি পরিবার সামলেছেন বেশ গুছিয়ে। সবকিছুর পরও তিনিই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতির শ্রেষ্ঠ ছায়াসঙ্গী। স্বৈরশাসক আইয়ুব সরকারের সময় রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে বঙ্গবন্ধুকে কারাবরণ করতে হয়। এ সময়ে কাপড় সেলাই করে বাড়ি ভাড়া, সংসার চালানোর সবটাই তিনি করতেন। মাথা ঠাণ্ডা রেখে সবটাই তিনি সামলাতেন। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি তাদের বাবার অভাবটা নিজের স্নেহ-ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতেন।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, রেণুর যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তার মা মারা যান। একমাত্র রইলো তার দাদা। দাদাও রেণুর সাতবছর বয়সে মারা যান। তারপর, সে আমার মা’র কাছে চলে আসে। আমার ভাইবোনদের সাথেই রেণু বড় হয়।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। বিয়ে সম্পর্কে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বার-তের বছর হতে পারে। রেণুর বাবা মারা যাবার পরে ওর দাদা আমার আব্বাকে ডেকে বললেন, ‘তোমার বড় ছেলের সাথে আমার এক নাতনীর বিবাহ দিতে হবে। কারণ, আমি সমস্ত সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে লিখে দিয়ে যাবো’। রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যেই রেণুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হলো। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে।
বিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধু এন্ট্রান্স পাস করার পরই মূলত তাদের সংসারজীবন শুরু হয়। তাদের বিয়ের ফুলশয্যা হয়েছিলো ১৯৪২ সালে। ওই বছরই তিনি ভর্তি হন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। সেখানেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে। এই সময়টায় বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে সময় কাটতো বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের।
প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধরনের শিক্ষা ছাড়াই তিনি ছিলেন সূক্ষ্ম প্রতিভাসম্পন্ন জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল। জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লেখার ক্ষেত্রেও মূল প্রেরণা ও উৎসাহ ছিল তাঁর। শেখ মুজিব তাঁর আত্মজীবনীতেও সহধর্মিণীর সেই অবদানের কথা স্মরণ করেছেন।
তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় আওয়ামী লীগ ও নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছেন তিনি। আন্দোলনের সময়ও তিনি প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় দেখা করার সময় বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করতেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ শুনে তা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের জানিয়ে দিতেন বঙ্গমাতা।
অন্যদিকে কারাগারে সাক্ষাৎ করে বঙ্গবন্ধুর মনোবল দৃঢ় রাখতেও সহায়তা করতেন তিনি। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখন বাঙালি মুক্তির সনদ ৬ দফা কর্মসূচি সফলের ক্ষেত্রেও তাঁর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কলকাতায় অবস্থানকালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত স্বামী শেখ মুজিবের যখনই অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হতো তখনই পিতৃসম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থ বিনা দ্বিধায় পাঠিয়ে দিতেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ওপর জেল-জুলুম চালিয়েছে পাকিস্তান সরকার। ওই সময় নিজের ঘরের আসবাবপত্র, অলঙ্কার বিক্রি করেও দল ও নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। একজন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও সাধারণ মানুষের মতো জীবন-যাপন করতেন তিনি। তাঁর বাড়িতেও কোনো বিলাসী আসবাবপত্র ছিলো না। ছিলো না কোনো অহংবোধ। তাঁর সদয় আচরণ ও বিনয়ে মুগ্ধ ছিলো সবাই। সন্তানদের যেমন ভালোবেসেছেন, তেমন শাসনও করেছেন। পিতাণ্ডমাতা উভয়েরই কর্তব্য পালন করেছেন তিনি। কোমলে কঠোরে মিশ্রিত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই সাহসী নারী স্বামীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সন্তানদের গড়ে তোলেন। তাঁর কাছে সহযোগিতা চেয়ে কেউ কখনো খালি হাতে ফিরে যায়নি। অনেক সময় উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি থেকে পাওয়া অর্থ ব্যয় করে দরিদ্র ঘরের কোনো মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা।
১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ বাঙালি সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্য এবং পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা করে পাকিস্তান সরকার। যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে পরিচিত। এ মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে সব রাজবন্দির মুক্তি দাবিতে রাস্তায় নামে বাঙালি। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে। উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা সংস্থা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকেও গ্রেফতারের হুমকি দেয়। কিন্তু তিনি বিচলিত না হয়ে তাঁর তীক্ষè বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মামলাটি আইনিভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে আইনজীবীদের অর্থ জোগানোর জন্যে নানাভাবে চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে পিছু হটে আইয়ুব খান সরকার। ওই সময় লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্যে শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিম পাকিস্তান সরকার। কিন্তু প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বেঁকে বসেন বেগম মুজিব। এ বিষয়ে তিনি জোরালো আপত্তি জানান। পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি দেখে বেগম মুজিব হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, প্যারোলে নয়, পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। এমনকি কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেন, তিনি যেনো প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লাহোর বৈঠকে না যান। তিনি এ-ও বুঝতে পেরেছিলেন, শেখ মুজিবের ব্যাপারে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ। পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে। তাই বঙ্গমাতার পরামর্শে বঙ্গবন্ধুও প্যারোলে মুক্তিতে অসম্মতি জানান। এরই মাঝে শেখ মুজিবসহ রাজবন্দিদের মুক্তির আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। এক পর্যায়ে আন্দোলনের মুখে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইয়ুব সরকার। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে তিনি মুক্তি পান। পরদিন অর্থাৎ ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি নিজেদের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে বরণ করে নেয় বাঙালি জাতি। প্যারোলে মুক্তি না নেয়া নিয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের এই সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
১৯৫৪ সালে শেখ মুজিব তখন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য। ওই বছরই সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন বেগম মুজিব। তারা ওঠেন ঢাকার গে-ারিয়ার রজনী চৌধুরী লেনের একটি বাড়িতে। বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হলে সরকারি বাসা পান, তারা ওঠেন মিন্টো রোডের সরকারি বাড়িতে। কিন্তু পাকিস্তান যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলে অল্পদিনের নোটিসেই ছাড়তে হয় সেই বাড়ি। এ রকম অনেকবার বাসা পাল্টাতে হয়েছে তাদের।
এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বাড়ি করেন বঙ্গবন্ধু। এটি ছিলো বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার প্রিয় বাড়ি। এই বাড়ি নির্মাণেও বঙ্গমাতার অনেক কষ্ট ও শ্রম জড়িয়ে রয়েছে। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর নিজেদের বাড়িতে ওঠেন তারা। এরপর এই বাড়িটিই হয়ে ওঠে নেতা-কর্মীদের আপন ঠিকানা। এখান থেকেই পরিচালিত হয়েছে দলীয় ও মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনামূলক নানা কার্যক্রম। বঙ্গবন্ধুর কারাগারে থাকার সময় এই বাড়িতেই ছুটে এসেছেন নেতা-কর্মীরা। তিনিও বুদ্ধি-পরামর্শসহ নানাভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ক্ষেত্রেও রয়েছে বঙ্গমাতার বুদ্ধিমত্তার ছাপ। ওইদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে গত বছর বঙ্গমাতার জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চ ভাষণের আগে কতজনের কত পরামর্শ আমার আব্বাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে! সবাই এসেছে, এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে। আমার মা আব্বাকে খাবার দিলেন, ঘরে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। আব্বাকে সোজা বললেন, তুমি ১৫টা মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নিবা। অনেকেই অনেক কথা বলবে। তুমি সারা জীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছো, তুমি জেল খেটেছো। তুমি জান কী বলতে হবে? তোমার মনে যে কথা আসবে, সে কথা-ই বলবা। এরপর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রে তর্জনি উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তাঁর সেই ডাকেই স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর এ স্বাধীনতার ডাকে ছিলো বঙ্গমাতার মনস্তাত্ত্বিক সমর্থন। এই সমর্থন বঙ্গবন্ধুকে সাহস জুগিয়েছিলো। আজ এই ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এছাড়া ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের পতাকা উত্তোলনেও বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দীপক ও পরামর্শক হিসেবে বিবেচনা করা যায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে।
শুধু তাই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়টি মাস অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্য নিয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। এই সময়টায় অনেকটা বন্দিদশায় কেটেছে তাদের। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর সেখান থেকেই লন্ডনে যান। লন্ডন থেকেই বেগম মুজিবের সঙ্গে তাঁর প্রথম কথা হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। অবসান ঘটে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার দীর্ঘ প্রতীক্ষার। এরপর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজেও বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়ান তিনি। অনেক বীরাঙ্গনাকে বিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন জীবন দেন।
স্বাধীনতার পর বীরাঙ্গনাদের উদ্দেশ্যে বঙ্গমাতা বলেন, ‘আমি তোমাদের মা’। তিনি বলেন, ‘এই বীরাঙ্গনা রমণীদের জন্যে জাতি গর্বিত। তাদের লজ্জা কিংবা গ্লানিবোধের কোনো কারণ নেই। কেননা তারাই প্রথম প্রমাণ করেছেন যে, কেবল বাংলাদেশের ছেলেরাই নয়, মেয়েরাও আত্মমর্যাদাবোধে কী অসম্ভব বলীয়ান’। (দৈনিক বাংলার বাণী, ১৭ ফাল্গুন, ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ)।
এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে তুলে ধরতেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অবদান রেখেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তাঁর সঙ্গে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো। বিশ্বনেতারা বাংলাদেশ সফরকালেও বঙ্গবন্ধুর পাশে থাকতেন তিনি।
সহধর্মিণী হিসেবে নয়, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আজীবন প্রিয়তম স্বামী শেখ মুজিবুর রহমানের ছায়াসঙ্গী ছিলেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ইতিহাসের কালজয়ী মহানায়ক শেখ মুজিবের অনুপ্রেরণাদায়িনী হয়ে পাশে ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে সপরিবারে তাদের হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র।
পরিশেষে বলতে চাই, শেখ মুজিব-শেখ ফজিলাতুন্নেছার রক্তের উত্তরাধিকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতার আদর্শে ও তার দেখানো পথে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে তিনি দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলার মানুষের শেষ আশ্রয়স্থলও এ শেখ হাসিনা-ই। কোভিড-১৯ মোকাবেলাই সরকারের সফলতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। তার এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন গত ১৩ বছর। আর বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের আজকের যে অবস্থান সেটা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের কারণে। তবে তার এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করেছে সরকারের ধারাবাহিকতা, কারণ বাংলাদেশের মতো দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
আমাদের বিশ্বাস, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ একই রকমভাবে তাঁর উপরে বিশ্বাস রাখবে। কারণ এই মুহূর্তে আমাদের সকলের মাথায় যে বিষয়টি রাখা উচিত সেটি হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেমন সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেক নাম হয়ে উঠেছেন। ফলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন উন্নত দেশের অভিমুখে ধাবমান।
আর বঙ্গমাতার আদর্শে গড়ে উঠুক এদেশের নারীরা। তাঁর আদর্শে আপন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নারীর ক্ষমতায়নে দৃষ্টান্ত হোক বাংলাদেশ। ৯২তম জন্মদিনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতি পরম শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ডাঃ মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ : প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।