প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২২, ০০:০০

“তুমি যদি তোমার কাজকে স্যালুট করো, দেখ তোমাকে আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান করো, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমার সবাইকে স্যালুট করতে হবে”।
আজকে আরেকটি মন খারাপের দিন। কয়েক বছরে সামাজিক মাধ্যমে যার সবচেয়ে বাণী, উপদেশ বা উক্তি ঘুরে ফিরে আসছেন তিনি হলেন বিশ্বের অন্যতম মহান বিজ্ঞানী ড. এপিজে আব্দুল কালাম। ২৭ জুলাই ছিলো তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী।
ড. এ. পি. জে. আব্দুল কালাম জনসমক্ষে এপিজে নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি সর্বদা ‘জনগণের রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘ভারতের মিসাইল ম্যান’ হিসেবে ভারতীয় জনগণের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। শুধু ভারতে কেনো এ উপমহাদেশের মানুষও তাকে কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করা ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম ২৭ জুলাই ২০১৫ তারিখে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে মারা যান।
আবদুল কালামের পুরো নাম ছিলো ড. আবুল পাকির জয়নুল্লাহ্ আবদুল কালাম। আবদুল কালাম তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে ১৫ অক্টোবর ১৯৩১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জৈনুল্লাদ্বীন এবং মা নাম আসিয়াম্মা।
আমরা জানি আবদুল কালাম বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অতুলনীয় অবদান রেখেছিলেন। অগ্নি ও পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সাহায্য করেছেন, যার কারণে আবদুল কালাম মিসাইল ম্যান নামে পরিচিত।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এবং ভারতকে পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ড. এপিজে আব্দুল কালামকে তার কৃতিত্বের জন্য ‘ভারতরত্ন’ প্রদান করা হয়।
এপিজে আবদুল কালাম তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিলো, তাই ছোটবেলা থেকেই তিনি তাঁর পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে শুরু করেন। কিন্তু পড়ালেখা ছেড়ে দেননি তিনি। তাঁর পরিবারকে সমর্থন করার পাশাপাশি, তিনি তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং ¯œাতক সম্পন্ন করেন।
তিনি ১৯৯৮ সালে পরিচালিত পোখরান পারমাণবিক পরীক্ষারও সদস্য ছিলেন। ড. এপিজে আব্দুল কালামের দেশের জন্য অসংখ্য অবদান রয়েছে, তবে তিনি তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান অগ্নি এবং পৃথ্বী নামক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
মহান মিসাইল ম্যান ২০০২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তার রাষ্ট্রপতির আমলে সেনাবাহিনী ও দেশ অনেক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, কালাম জাতির জন্যে অনেক অবদান রেখেছেন।
বিশ্ববাসী দেখেছে একজন সৎ মানুষ ও ইসলাম ধর্মালবম্বী হিসেবে তিনি মুক্তচিত্তে দেশের সেবা করেছেন। মেয়াদ শেষে রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়ার পর ড. এপিজে আব্দুল কালাম আবার ছাত্রদের পড়াতে শুরু করেন। তিনি সারা দেশে অবস্থিত ভারতের অনেক বিখ্যাত এবং স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছেন।
তিনি তাঁর এক বক্তব্যে বলেছিলেন যে, তাঁর মতে দেশের তরুণরা খুব মেধাবী, তবে তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দরকার। তিনি শিশুদের অনেক ভালোবাসতন এবং সুযোগ পেলেই তিনি তাদের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন।
তাঁর জীবদ্দশায়, ড. এপিজে আব্দুল কালাম শুধুমাত্র ভারতীয় সংস্থা এবং কমিটিই নয়, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কমিটি দ্বারাও সম্মানিত হয়েছেন। তিনি ভারতের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি যিনি ভারতরত্ন (১৯৫৪ সালে ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানকে প্রথম এবং ১৯৬৩ সালে ড. জাকির হুসেনকে দ্বিতীয়) ভূষিত হয়েছেন।
ভারত সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে, পাশাপাশি ওঝজঙ এবং উজউঙ-তে তার অবদানের জন্যে, তিনি ১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৯০ সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন।
ড. কালাম অনেক বই লিখেছেন যেমন উইংস অফ ফায়ার, ইগনিটেড মাইন্ডস, টার্গেটস ৩ বিলিয়ন ইন ২০১১, টার্নিং পয়েন্টস, ইন্ডিয়া ২০২০, মাই জার্নি ইত্যাদি। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ ছিলো ‘ইন্ডিয়া ২০২০’, যার মধ্যে ভারতকে একটি সুপার পাওয়ার করার জন্যে একটি কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
ড. এপিজে আব্দুল কালাম ছিলেন সরলতা ও সততার মানুষ। তিনি কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, ভোরবেলা উঠে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতেন। ২০১৫ সালে যখন তিনি শিলং-এ ছাত্রদের বক্তৃতা দিতে যাচ্ছিলেন তখন হঠাৎই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। তিনি একজন অসামান্য বিজ্ঞানী এবং একজন অগ্রগামী প্রকৌশলী ছিলেন, যিনি দেশের জন্যে তার পুরো জীবন দিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘উপরে তাকিয়ে আকাশটাকে দেখো। তুমি একা নও, এই মহাবিশ্ব তোমার বন্ধুর মতোই’। আমরাও সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, যদি কখনো একঝলক এপিজেকে দেখা যায়।
নুরুল ইসলাম বাবুল : শিক্ষক ও গবেষক।