প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২২, ০০:০০
চাল-চলনে সুদর্শন। সবসময় পরিপাটি পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। ছোট-বড় সকলের সাথে যার বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। কখনও কাউকে খাটো বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন না। বন্ধুসুলভ মানুষ হিসেবে যিনি ছিলেন সকলের খুব প্রিয়ভাজন।
বলছিলাম, সদ্যপ্রয়াত আবদুস সোবহান রানা ভাইয়ের কথা। যাঁর সাথে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্পর্ক। কখনও বড় ভাই-ছোট ভাই; আবার কখনও বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি। দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ থাকা রানা ভাই মঙ্গলবার সকালে নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। রানা ভাইয়ের এমন চলে যাওয়া বেশ কষ্টদায়ক।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন থাকায় রানা ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে তাঁকে এক নজর শেষবারের মতো দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এজন্যে বেশ খারাপ লাগছে। রানা ভাইয়ের মৃত্যুর ৭/৮ দিন আগে তাঁকে দেখতে সহকর্মী তালহা জুবায়েরসহ চাঁদপুর সদর হাসপাতালে যাই। তখন রানা ভাইয়ের করুণ অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগে। রানা ভাইয়ের স্ত্রী সে সময় জানান, ডাক্তার বলেছে সব রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাঁকে আর বেশিদিন হয়তো বাঁচানো যাবে না! তখন রানা ভাইয়ের দুটি কিডনি নষ্ট, ডায়াবেটিসসহ শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগছিলেন।
রানা ভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের সুবাদে তিনি সবসময় আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। সাংবাদিকতার ছবি তোলা ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বেশ পারদর্শী। তাঁর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মনের অজান্তে আমাকে কিছু ছবি তুলে দেন। যা পরবর্তীতে আমি দেখে বেশ অবাক হয়ে যাই। ক্যামেরা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকায় তার কাছে বিভিন্ন সময় পত্রিকায় ছবি তোলা সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
রানা ভাই চাল-চলনে বেশ ফিটফাট থাকলেও কখনও তার পরিবার সম্পর্কে ভালোভাবে জানা হয়নি। পরিবারের প্রতি অনেকটা উদাসীন ছিলেন রানা ভাই। কিন্তু, বাইরের কোনো ব্যক্তি বা সহকর্মী কিংবা বন্ধু-বান্ধবের কাজের ক্ষেত্রে ছিলেন বেশ আন্তরিক।
রানা ভাই যখন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁর ব্যক্তি জীবন তথা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টের জীবন দেখে খুব অবাক হয়ে যাই! রানা ভাইয়ের সাথে দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে সম্পর্ক থাকলেও কখনো তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিলো না! যতটুকু জানতাম, তাঁর স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে।
তাঁকে দেখতে গত বছরের প্রথমদিকে ক’জন সিনিয়র সহকর্মীসহ তাঁর বাসায় যাওয়া হয়। তখন চাঁদপুর শহরের সিংহপাড়ায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। ছোট্ট একটি রুমে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করাটা বেশ কষ্টকর ও দুঃসাধ্য। ওই সময় আমার সাথে ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি অধ্যাপক জালাল চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রহিম বাদশা। আমরা সকলে রানা ভাইয়ের ঘরে ঢুকে বেশ হতবাক হয়ে যাই! ছোট্ট একটি রুমে কী এভাবে থাকা সম্ভব! রানা ভাইয়ের স্ত্রী জানালেন, দীর্ঘ সময় ধরে এভাবেই পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
মাঠ পর্যায়ের একজন পেশাদার সাংবাদিকের পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন আমাদের মনকে বেশ নাড়া দেয়। বিশেষ করে, মাঠ পর্যায়ে অনেক সাংবাদিক বন্ধু রয়েছেন, যাঁরা কখনও নিজের কষ্ট সম্পর্কে অপরকে বুঝতে দেন না বা দুশ্চিন্তায় ফেলতে চান না।
রানা ভাই, দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহে ২০০১ সাল তথা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সম্পৃক্ত। দায়িত্ব পালন করেছেন কার্টুনিস্ট, আলোকচিত্রী, ম্যানেজারসহ বিভিন্ন পদে। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে ছিলেন বেশ সচেতন। যখন তাকে যে দায়িত্ব দেয়া হতো, তা তিনি সঠিকভাবে পালন করতেন।
দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহের যেই লোগোটি পাঠকরা দেখছেন, তা রানা ভাইয়ের নিজ হাতে আঁকা। সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহের লোগোটি তিনি এঁকেছেন।
রানা ভাই, সবসময় নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে চলতেন। গণমাধ্যমে দীর্ঘ সময় কাজ করার সুবাদে কখনো তাকে কারও কাছে ছোট হতে দেখিনি। নিজের পরিবারকেও তিনি কখনও ছোট করতেন না। শত অভাব বা কষ্ট তিনি বুকে চেপে রাখতেন।
আত্মসম্মান বজায় রেখে সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং পরিপাটি পোশাক পরে চলাচল করা রানা ভাইয়ের ছিলো অন্যতম শখ।
সৎভাবে জীবনযাপন করতে গিয়ে রানা ভাই কখনও নিজের কষ্ট অপরকে বুঝতে দিতেন না।
রানা ভাই, আপনার শূন্যতা অনুভব করছি। আপনার জন্যে দোয়া রইলো। মহান আল্লাহপাক আপনার দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন। এই প্রার্থনা সবসময়।
লেখক : আল ইমরান শোভন, বার্তা সম্পাদক, দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহ; সভাপতি, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম।