প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২২, ০০:০০
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব মিশে আছে মক্কা-মদিনার সাথে। একজন মুসলমানের সারা জীবনভর বুকভরা পিপাসা থাকে, একবার হলেও যেনো আল্লাহ তুমি আমাকে খানায়ে কাবা ও রাসুলের রওজার কাছে সালাম দেয়ার তৌফিক দিও অথবা স্বপ্নযোগে দেখা দাও প্রিয় রাসূল।
সালাম পাঠানো হয় হাজার হাজার মাইল দূর থেকে, সঁপে দেয়া হয় ফেরেশতাদের মাধ্যমে পৌঁছানোর জন্যে রাসূলে পাকের রওজায়। হৃদয়ের স্বপ্নসাধ পিপাসা নিবারণের সেই কালজয়ী সংগীত মনের অজান্তেই ভেসে আসে মাঝে মাঝে-মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়,/সালাম আমি করব গিয়ে নবীজির রওজায়/মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক/লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’ এ পয়গাম যেনো দেহ থেকে মন কেড়ে নেয় কাঙ্ক্ষিত সেই বাইতুল্লাহর দিকে। মানুষের জীবনে আশা-আকাক্সক্ষা-চাহিদার শেষ নাই। তাই আমি বলবো, প্রত্যাশা পূরণের শ্রেষ্ঠ ইদারা : মদিনা থেকে বাইতুল্লাহ। ‘সকল মুমিনের জীবনে একবারের জন্য হলেও আল্লাহ তুমি কবুল করে নাও’। চেনা আর জানা কখনো এক হয় না। যেমন পুঁথিগত বিদ্যা আর মিডিয়ার সহযোগিতায় জানা যায়। কিন্তু সরাসরি নজরে দেখে তা চেনা যায়।
মুসলিম হিসেবে রাসূলের রওজা এবং বাইতুল্লাহর ব্যাপারে শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি কারো কম নয়। বুঝ হওয়ার পর থেকে ইজতেমায়ি মজলিস থেকে অগণিত দরূদ ও সালাম পৌঁছে দিয়েছিলাম ফেরেশতাদের হাওলা করে। অনেক কাবার পথের যাত্রীদের কাছেও সালাম পাঠিয়েছিলাম। শুধু নামাজে কেবলামুখী হয়েই নয়, বাইতুল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা প্রতিটি মুহূর্তে। কারণ কেবলামুখী হয়ে ইস্তেঞ্জা করা, থুথু ফেলা, বিনা ওজরে কেবলার দিকে পা রাখা সবই কাবার প্রতি অসম্মান এবং গুনাহের কাজ। প্রতি নামাজে হৃদয়ের মাঝে অংকন করেছিলাম মেহরাবের দিকে তাকিয়ে মক্কা মদিনার মিনার দেখে। অনেক প্রত্যাশা আর পিপাসা ছিলো জীবনের কোনো এক পর্বে কীভাবে যাবো মক্কাণ্ডমদিনা। স্বচক্ষে জিয়ারত করবো রাসূলের রওজা। নয়ন ভরে দেখবো কালো গিলাফে জড়ানো সেই বাইতুল্লাহ।
এ সেই বরকতময় জায়গা যেখানে আমলের খতিয়ানে এক-এ পঞ্চাশ হাজার, আবার কাবা এরিয়ার মধ্যে এক-এ একলক্ষের বেশি নেকি অর্জনের ঘোষণা রয়েছে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, রাসূলে পাক (সাঃ) রওজা শরীফে জিন্দা আছেন, আমরা শব্দ করে সালাম দিলে রাসূলে পাক (সাঃ) নিজ কানে শোনেন এবং সালামের জওয়াব দেন। একজন মুমিনের জন্যে এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হতে পারে?
দু নয়নে রাসূলের রওজা দেখবে, পবিত্র কাবাকে সামনে রেখে মাওলার কুদরতি পায়ে সেজদা দিবে! মক্কা-মদিনায় সফরের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর থেকেই দুনিয়ার স্বাভাবিক কাজকর্মে আহার-নিদ্রায় কিছুটা পরিবর্তন চলে আসে। প্রহর গুণতে থাকি সময় শেষ হওয়ার। অপরদিকে প্রিয়জনদের হাদীয়া আর আবেগাপ্লুত দোয়ার আবেদন বাড়তে থাকে। পক্ষকালীন সফরের কারণে গুছাতে হয়েছে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সংসার ও সংগঠনকে।
এদিকে আস্থাভাজন প্রিয় সাথীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিলো আমি অধমকে নিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সফরে হাজার মাইল পাড়ি জমাবে। প্রত্যাশিত ব্যক্তিদের অনেকেই সাথী হয়েছেন, কেউ বা কাগজপত্র গোছাতে দেরি হওয়ার কারণে সম্ভব হয়নি।
গত ৮ মে ২০২২ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সৌদি এয়ারলাইন্সের ঢাকা টু জেদ্দার একটি টিকেট হাতে পাই। সৌদিতে অবস্থানরত আমার মেজো ভাই আমাকে আগাম জানিয়ে দিয়েছিলেন বিমানের খাবার-দাবার হয়তো তোমার পছন্দ হবে না বা রুচিতে আসতে না-ও পারে। তাই বিমানবন্দর থেকেই খাওয়া-দাওয়া করে ওযু-এস্তেঞ্জা সেরে বিমানে উঠতে হবে। কারণ বিমানে ওযু-এস্তেঞ্জা করাটাও অনেক কঠিন। আমার সফরসাথী যাদের নাম না বললেই নয় হাফেজ মাওলানা বেলাল হোসাইন, হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন ও হাফেজ ইমাম হোসাইন যাদের অনুপ্রেরণা ও আন্তরিকতায় আমার যাওয়ার পথকে আল্লাহ সুগম করে দিয়েছেন এবং যাদের বিরামহীন খেদমতের নজির আমার সফরের ক্লান্তিকে দূর করে দিয়েছে। আমার থাকাণ্ডখাওয়ার বিষয়টি শুরু থেকেই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তারা নজরদারিতে রেখেছিলেন, যা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। অথচ সফরের সকল কষ্ট ও প্রতিকূলতাকে নিজের সাথে মানিয়ে নেয়ার প্রতিজ্ঞা করেই রওনা হয়েছিলাম। কিন্তু তাদের খেদমতের বদৌলতে আল্লাহর খাছ রহমতে কোনো কষ্টই অনুভব হয়নি।
আমার বিষয়ে পূর্ব থেকেই হয়তো তারা ট্রাভেলস্-এর মালিক মুফতি মহসিন ভাইয়ের সাথে আলাপ করে রেখেছিলেন। তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু আমার নয়, কাফেলার সকলের সফর-সংক্রান্ত প্রত্যেকটি বিষয় দায়িত্বশীলতার সাথে সমাধান করেছেন। বিশেষ করে এয়ারপোর্টের জটিলতা, মালামাল বহন-সংক্রান্ত সকল বিষয় নিজের মতো করে ক্লিয়ারেন্স নিয়েছেন। আমি মুফতি হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান মহসিন ভাইকে দায়সারা নয়, দায়িত্বশীল ট্রাভেলসের মালিক বলতে পারি। কারণ আজকাল ট্রাভেলসের মালিকদেরকে মানুষ সহজে বিশ্বাস করতে চায় না। এদের কথাকে সাধারণ মানুষ নয়-ছয় মনে করে।
এয়ারপোর্ট থেকেই খানা, ওজু, এস্তেঞ্জা সেরে প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন করে অজানা-অচেনা নতুন পথে, নতুন ভূখণ্ডে, সর্বোচ্চ উচ্চতায় উড়তে হলো হাওয়াই বাহনে। ছয় হাজার কিলোমিটার অতিক্রমের পর অবতরণ আরবের জেদ্দায়। সেখান থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম সেরে বাসযোগে রওনা হলাম মদিনার পথে। রাতের শেষভাগে সাক্ষাৎ মিলে মদিনার সবুজ গম্বুজবিশিষ্ট মিনারের সাথে।
একদিকে দুই দিনের সফরের ক্লান্তি ও অপরদিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব রহমাতুল্লিল আলামিন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের একেবারে কাছেই অবস্থান করছেন সেই সবুজ গম্বুজের নিচে। জিয়ারত না করে ঘুমানোটা নিজের কাছে দুর্ভাগ্যজনক মনে হয়, তাই দুই ভাই মিলে চলে গেলাম সেখানে। রওজা জিয়ারতের পর পরই হোটেলে এসে কিছু সময় প্রশান্তিতে ঘুমালাম।
আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, আমার ওমরার সফর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক’জন আলেমের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে। যাদের নাম আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি। একাধিক ওমরাহ ও নফল তাওয়াফ করার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আগে বা পরে তৃপ্তি সহকারে সাধ্যমত ঝমঝম পান করেছি। সফরে আমরা দুটি জুমা পেয়েছি। প্রথম জুমা মদিনায়, শেষের জুমা মক্কায়। মদিনায় জুমা আদায়ের পর রাসূলের রওজায় বিদায়ী জিয়ারত করে অনেক ভাঙ্গা মন নিয়ে হোটেলে আসলে মোয়াল্লেম সাহেব এলান করলেন যে, সবাই এহরাম পরেন, এক্ষুণি আমাদেরকে মদিনা ছেড়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।
এহরাম এমন এক কাপড় যে কাপড় হজ-ওমরাহ ব্যতীত দুনিয়া থেকে চিরবিদায়ের সময় পরিধান করতে হয়। যদিও সেটা ভিন্ন নামে কাফন হিসেবে ব্যবহার হয়। আমার কাছে এহরাম আর কাফনের ভিন্নতা মনে হলো এতোটুকুই, কাফনে শুধু এক টুকরা কাপড় বেশি ব্যবহার হয়। কাফন পরানোর সাথে সাথে যেমন ওই ব্যক্তির কাছ থেকে দুনিয়ার লোভ-লালসা আশা-আকাক্সক্ষা চিরতরে বিদায় নেয়, তেমনি এহরামের কাপড় পরার পরেও তালবিয়ার অর্থ অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ন্যায় জাগতিক সবকিছুই ঝেড়ে ফেলতে হয়। পার্থক্য শুধু এতোটুকু, এহরামের কাপড় ইচ্ছে করলে নিজেরটা নিজেই পরতে পারি, খুলতে পারি, কিন্তু কাফনের কাপড় অন্যজনে পরিয়ে বিদায়ী ঘণ্টা বাজিয়ে দেয়।
মদিনা ছেড়ে আসা যে কত কঠিন বিষয় তা ওইদিন উপলব্ধি হয়েছে। গাড়িতে ওঠার পর মাওলানা বেলাল হোসাইনের হৃদয়ছোঁয়া বয়ান এবং মোনাজাতের মাধ্যমে রাসূলপ্রেমিকদের বুক ফাটা কান্না আর কী পরিমাণ চোখের পানি ঝরেছে সে দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
ইসলাম ও মুসলমানদের শিকড়ে গাঁথা ঐতিহাসিক স্থান এবং নিদর্শন দেখার সুযোগ হয়েছে। বিশেষ করে মসজিদে কুবা, ওহুদ, বদর, খন্দক, জাবালে নূর, হেরা গুহা, জাবালে ছুর, আরাফা, মুজদালিফা ও মিনা ছাড়াও মুসলিম অস্তিত্বের ঐতিহাসিক দলিলস্বরূপ ঈমান শাণিত করার অনেক স্থান।
জেয়ারায় গিয়ে লক্ষ্য করলাম, হেরা গুহার উপরের দিকে ছোট্ট আকৃতির কিছু মানুষ পাহাড় কামড়িয়ে উপরের দিকে উঠছে। পরে শুনলাম তারা ছোট্ট নয়, দুই কিলোমিটার উঁচু পাহাড়ের কারণে তাদেরকে ছোট মনে হচ্ছে। পরে দেখলাম অনেক আল্লাহর বান্দা-বান্দী আল্লাহর রাসূল কোথায় অবস্থান নিয়েছিলেন, কোথায় প্রথম কোরআন নাজিল হয়েছে সেই বরকতময় বিশালাকৃতির পাথরে ঘেরা স্থানটি একনজর দেখার জন্যে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহন করছে।
আমারও সেই স্থানটি দেখার আগ্রহ জাগলো। পরে সফর শেষ হওয়ার ২ দিন পূর্বে হারামে ফজরের নামাজ আদায়ের পর আমাদের সফরসাথীদের মধ্য থেকে চার ভাই চলে গেলাম গাড়ি ভাড়া করে হেরা পর্বতের কিনারায়। হাফেজ মাওঃ বেলাল হোসাইন, ডাঃ সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাসির খান ও আমি নরাধম। ওখানে গিয়ে একবার উপরের দিকে তাকাই আবার নিচের দিকে তাকাই, পারবো কি পারবো না অনেক সংশয় মনের মধ্যে কাজ করছিলো। তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা করে হিম্মত করলাম, আমি উঠবো, আমি পারবো। যেখানে আল্লাহর রাসূলের প্রিয় সহধর্মিণী হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা দৈনিক একাধিকবার ওঠানামা করে আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলকে খাবার সরবরাহ করেছিলেন! শুরু হলো পাথরকাটা সিঁড়ি ডিঙ্গানোর পালা। হাতে ছিলো পানির বোতল। কিছু সময় উপরে ওঠার পরপরই পা দুর্বল হয়ে আসে, কিছু সময় বিশ্রাম, পানি পান। আবার ওঠার পালা শুরু। এভাবে চলতে চলতে প্রায় এক ঘণ্টা বিশ মিনিট ব্যয় হয়। সর্বোচ্চ চূড়ার উপর থেকে নিচে নামা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার বেশি সময় অতিবাহিত হয়। যদিও এক সপ্তাহ যাবৎ পায়ের ব্যথা নিয়ে রিমান্ডের যাতনা সহ্য করতে হয়েছিলো। শোকরিয়া মহান মালিকের কাছে, কোরআন নাজিলের স্থানটি দেখার মতো সৌভাগ্য হয়েছে।
মদিনা ইউনিভার্সিটির আইটি বিভাগে কর্মরত আছেন আমার বন্ধুবর চাঁদপুরের সোহেল ভাই। সোহেল ভাই আমার মদিনায় অবস্থানের খবর শুনে মাওলানা বেলাল সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের হোটেল করাম আল খায়েরের সামনে গাড়ি নিয়ে হাজির হয়ে যান। তার সাথে চললাম মদিনা ইউনিভার্সিটি দেখার উদ্দেশ্যে, মনোরম পরিবেশ ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্ট। কোলাহলমুক্ত ব্যতিক্রমধর্মী এক ক্যাম্পাস।
ঐদিন দুপুরবেলা সোহেল ভাইয়ের বাসায় রকমারি আইটেম দিয়ে খানার আয়োজন। খানা শেষে সোহেল ভাই নিজ বাহন দিয়ে আমাদেরকে পুনরায় হোটেলে পৌঁছে দিয়েছেন। শোকরিয়া সোহেল ভাইয়ের প্রতি।
হজে বা ওমরার আমল দৈনন্দিন নামাজ ও জিকির-আজকার তসবি তাহলীলের মতো নয়। এর সংখ্যাটাও তেমন বেশি নয়, টোটাল মুসলিম উম্মাহর উপর যদি জরিপ চালানো হয় তাহলে হাজীদের পার্সেন্টিজ বেশি একটা হবে না। কারণ এর সাথে আর্থিক সামর্থ্য ও শারীরিক সুস্থতার বিষয় রয়েছে যেমন, তেমনি আবার হাজার কোটি টাকার মালিক, বিশ্বের উন্নত সকল রাষ্ট্র সফর করেন কিন্তু পবিত্র মক্কা মদিনা সফরের সৌভাগ্য তাদের হয় না! ‘আবার একেবারেই সাধারণ চলাফেরা, জীর্ণশীর্ণ আর্থিক অবস্থা কিন্তু আল্লাহ কোনো না কোনো মাধ্যমে তাদেরকে বাইতুল্লাহর মুসাফির বানিয়ে দেন’। ওই পবিত্র স্থানের জন্য আল্লাহর কুদরতি ডায়েরিতে যাদের নাম লিখা আছে তারাই একমাত্র সেখানে যেতে পারবেন-এর বাইরে কেউ নয়। তাই আমার পরামর্শ হলো : আমরা যারা হজ ও ওমরার নিয়ত করেছি, যে যেখান থেকেই যাবো আপনার মোয়াল্লেম অভিজ্ঞ এবং পরহেজগার আলেম কি না, তিনি আপনার প্রত্যক্ষ তদারকিতে থাকবেন কি না। হজ-ওমরাহ যা-ই বলেন, এটা শুধু ভ্রমণ বা দৃশ্য অবলোকন করার সফর নয়। এটা ইসলামের মৌলিক ইবাদতের মধ্যে একটি ইবাদত, যেখানে ফরজ-ওয়াজিব সুন্নতের আমল রয়েছে। যেখানে মালিকের পক্ষ থেকে বান্দাদের নিষ্পাপ হিসেবে কবুল করার ঘোষণা রয়েছে। তাই মক্কা-মদিনার আদব রক্ষা করে যদি পরিপূর্ণ সময়টাকে নেকের কাজে লাগাতে পারি আল্লাহ অবশ্য আমাদেরকেও সেই পুণ্যবানদের কাতারে শামিল করবেন। মক্কা-মদিনায় নামাজের আউয়াল ওয়াক্তকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আজান, সুন্নাত, একামাত, জামাত। মৌলিক আমল ব্যতীত যদিও মাজহাবের কারণে অন্যান্য আমলের কিছুটা তারতম্য রয়েছে।
আজানের শব্দ ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির সাথে মৌচাকে মৌমাছি যেভাবে চতুর্দিক থেকে সমবেত হয়, একইভাবে আল্লাহর বান্দারা বাইতুল্লাহর দিকে একাগ্রচিত্তে জড়ো হতে থাকে।
কী নারী কী পুরুষ প্রত্যেকে এক আল্লাহর ধ্যানে নির্দিষ্ট জায়গায় বাইতুল্লাহর মালিকের গোলামিতে মগ্ন হয়ে যায়। কেউ বা ধ্যান করে বসে থাকে কালো গিলাফে মোড়ানো মুসলিম উম্মার কেন্দ্রবিন্দু বাইতুল্লাহর দিকে।
কিছু স্মৃতির কথা না বললেই নয়, জীবিকার সন্ধানে সৌদিতে কর্মরত আছেন লাখো লাখো বাংলাদেশী। তাদের কষ্টের চিত্র দেখলে নিজেকে সামাল দেয়াটা দুঃসাধ্য হয়ে যায়। তারপরেও যখন জিজ্ঞেস করি, ভাই ৪৫, ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খোলা মাঠে কীভাবে কাজ করেন, কষ্ট হয় না? উত্তর : ভাই কষ্ট হলে কী করবো? কষ্টকেই সাথী হিসেবে বানিয়ে নিয়েছি। অনেক টাকা ঋণ করে এখানে এসেছি। প্রতি মাসে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়। সংসার খরচ দিতে হয়। স্ত্রী-সন্তান বাবা-মাসহ সবার মনও রক্ষা করতে হয়। প্রতিটা টাকার সাথে আমাদের ঘামের ফোঁটা জড়িত, তারপরেও সবার চাহিদা রক্ষা ও মন ধরে রাখা অনেক কষ্ট হয়ে যায়।
মসজিদে নববী ও মসজিদুল হারামের অধিকাংশ ক্লিনার বা পরিচ্ছন্নকর্মী বাংলাদেশি। অনেকে আমার নাম বলে জড়িয়ে ধরে বলছে আপনি জয়নাল ভাই না! কারো সাথে পরিচয় হয়েছে, কথা হয়েছে-এ যেন এক ভিন্ন অনুভূতি। অনেক মার্কেটে ঢোকার পর মাতৃভূমির ঘ্রাণে যেনো বাঙালি জড়ো হয়ে গিয়েছিল। হোটেল ও হোটেলের বাইরে আপ্যায়ন হয়েছে বহু রকমারি ফ্রুটস ও সৌদির পছন্দনীয় খাবার দিয়ে। আসতে মন চায়নি, তারপরেও সফরের সময়সীমা নির্ধারিত হওয়ার কারণে, মাতৃভূমি গন্তব্যে পাড়ি জমাতেই হলো গত ২২ মে ২০২২। আমার জীবনের সবচেয়ে দামি সফর ছিলো এটি।
আল্লাহ তুমি বারবার যাওয়ার তৌফিক দিও, হজে মাবরুর নসিব করিও। আমিন।
শেখ মুহাঃ জয়নাল আবদিন : সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, চাঁদপুর জেলা শাখা।
[email protected]। ০১৮১৯-০৭৪২৭৫