প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
৪ সেপ্টেম্বর শনিবার চাঁদপুর জেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেছেন, বার বার ভাঙ্গন রক্ষায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ হচ্ছে। এতে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধটি আরো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ, নদীতে বিভিন্ন চর-ডুবোচরের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আমাদের জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে চাঁদপুর-হাইমচর যে বাঁধ রয়েছে সেটি আরো দুটি বর্ষা টিকিয়ে রাখতে পারবো কিনা সেটিও চ্যালেঞ্জের বিষয়। এজন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত স্থায়ী প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হবে। অন্যথায় চাঁদপুরবাসীকে অপরিসীম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। মেঘনার ওপারে ঈশানবালা ও ইব্রাহিমপুরের মধ্যে ডুবোচর বেশি জন্মেছে। এর পরিণতিতে এপারে অর্থাৎ মেঘনার পূর্ব দিকে ভাঙ্গন শুধু বাড়েনি, নদীর নাব্যতা কমায় চাঁদপুর অঞ্চলে ইলিশের উৎপাদন কমে গেছে।
গত ২৬ আগস্ট পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, চাঁদপুর শহরকে রক্ষা করতে হলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আগে অন্য কাজ করতে হবে আমাদের। সেটি হলো, মিনি কক্সবাজার নামে যে চর মেঘনার বুকে জেগেছে, সেটি পুরোপুরি কেটে সেখানে নদীর নাব্যতা পরিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনতে হবে। একই সাথে চাঁদপুর সীমানায় নদীতে অনেক ডুবোচর আছে, সেগুলোকে কেটে ফেলতে হবে। জেগে ওঠা চর, ডুবোচরগুলো খনন করে নদীর গতিপ্রবাহকে স্বাভাবিক করে দিতে হবে। এসব চর এবং ডুবোচরে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েই পাড়ে পাল্টা আঘাত করে। আর তখনই ভাঙ্গন দেখা দেয়। তাই জেগে ওঠা চর এবং ডুবোচরগুলো না কাটলে কোনো বাঁধই টিকবে না। এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মহোদয় যথার্থই বলেছেন। বাঁধকে টেকসই এবং স্থায়ী করতে হলে নদীর গতিপথ বুঝে তার পথচলাকে নির্বিঘ্ন করে দিতে হবে। সেজন্যে ডুবোচর এবং জেগে ওঠা চর খনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। খনন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদীর কোথায় কী পরিমাণ খনন করতে হবে তা নির্ধারণ করার আগে হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করতে হবে। সে সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী খনন করা হবে। আর খনন কাজটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিআইডব্লিউটিএ অথবা পানি উন্নয়ন বোর্ড করবে।
নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে চর-ডুবোচর খনন যে বাস্তবসম্মত কাজ-এটি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণাঞ্চলীয় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, চাঁদপুরের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাথর, বালির বস্তা, কংক্রিট ব্লক ও বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে নদীর ভাঙ্গন ঠেকানোকেই অধিক জুতসই বা সুবিধাজনক মনে করেছে। এতে ঠিকাদার বাণিজ্য করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে, সাথে সাথে পাউবোর প্রকৌশলীসহ অন্যরাও। ৩০০ বালির বস্তা ফেলে তিন হাজারের বিল, এক হাজার পাথর বা কংক্রিট ব্লক ফেলে পাঁচ হাজারের বিল তোলার অনিয়ম করেছে ওপেন সিক্রেটভাবে। এতে পাউবোর তদারকির অভাব এবং রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় তো ছিলোই।
স্মর্তব্য, ১৯৮৮ সালে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে হাইমচরে গড়ে ওঠা তীব্র আন্দোলনের ঢেউ রাজধানীতে গিয়েও লেগেছিল। ওই বছরের ২০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১০ হাজার লোকের সমাবেশে জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছিলেন। তৎকালীন ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টির টিকেটে হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত কায়কোবাদ চুন্নু এ আন্দোলনের প্রতি সক্রিয় সমর্থন জানিয়ে জেল খেটেছেন। তিন-চার দশক পর আজ সেই আন্দোলনকারীদের দাবির অনুকূলেই সরকার হাঁটছে। সেজন্যে বলতেই হয়, কোনো আন্দোলনই আসলে শেষ পর্যন্ত বৃথা যায় না।