শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মহররম ১৪৪৬  |   ৩৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

এরা কেমন আনসার?

অনলাইন ডেস্ক
এরা কেমন আনসার?

‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে নির্যাতন ও দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি ॥ দুই আনসার সদস্য আটক’ এমন শিরোনামে রোববার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত শীর্ষ সংবাদটি দেখে অনেক পাঠককেই থমকে যেতে হয়েছে। আর সংবাদটির গভীরে প্রবেশ করে বিস্ময় প্রকাশ করে বলতে হয়েছে, এরা কেমন আনসার?

সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, আনসার সদস্যের শ্যালিকার সাথে প্রেম করায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রেমিক হানিফ পরিবহণের সুপারভাইজার মাহিনুর আলম সাকিবকে চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুর জেলায় বসবাসকারী মেয়ের আত্মীয় ফোন করে। সাকিব লক্ষ্মীপুর এসে বাস থেকে নামার পর তাকে বেদম প্রহার করে। পরে সেখান থেকে আটকাবস্থায় চাঁদপুরে নিয়ে আসে। এখানেও একটি রুমের ভেতর দুদিন আটকে রেখে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। মুক্তিপণের দুই লক্ষ টাকা দাবি করে পরিবারের কাছে। ৯৯৯ নম্বরে সংবাদ পেয়ে অবশেষে শনিবার দুপুরে চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ চাঁদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডস্থ শিলন্দিয়া গ্রামের গিয়াসউদ্দিন পাটোয়ারীর বাড়ির ভাড়াটিয়া আনসার ভিডিপির সদস্য মোঃ নাজিমের বাসা থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় অপহৃত মাহিনুর আলম সাকিবকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার সাথে জড়িত অপহরণকারী লক্ষ্মীপুর সদরের আনসার ভিডিপির সদস্য রাকিব হোসেন ও তার ভাই চাঁদপুর আনসার ভিডিপিতে কর্মরত নাজিমকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। আটককৃত দুজনের স্ত্রী একজন চাঁদপুর পুলিশ লাইন্সে ও অপরজন লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশে কর্মরত। এভাবে আইনের লোক হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপহরণের মতো জঘন্য অন্যায় কাজ করায় আনসার নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

অপহৃতের পরিবার জানায়, ফেসবুক ও টিকটক-এর মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর সদরে আনসার ভিডিপিতে কর্মরত সদস্য রাকিব হোসেনের শ্যালিকা পূর্ণিমা আক্তারের সাথে সাকিবের পরিচয় হয়। পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সাকিবকে ফোন করে ডেকে নিয়ে লক্ষ্মীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অপহরণ করে তুলে চাঁদপুরে রাকিবের ছোট ভাই নাজিমের বাসায় এনে আটকে রাখে। এ সময় নাজিমের স্ত্রী চাঁদপুর পুলিশ লাইন্সের নায়েক সুলতানা আক্তার সাথে ছিলেন। তারা পরিকল্পিতভাবেই সাকিবকে আটকে রেখে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। অবশেষে স্থানীয় এলাকাবাসী ও মডেল থানা পুলিশের সহযোগিতায় অপহরণকারীদের বাসা থেকে সাকিবকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এ ঘটনায় এই দুই ভাই আনসার ভিডিপির সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান অপহৃতের পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার রশিদাবাদ সুমন দন্ডী এলাকার সিরাজুল মোস্তফা খোকনের ছেলে হানিফ পরিবহণের সুপারভাইজার মাহিনুর আলম সাকিবকে আটকে রাখার খবর শুনে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত আনসার ভিডিপি সদস্য নাজিম ও তার ভাই রাকিবকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

এই দু আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে সেটা জানার কৌতূহল অনেকের আছে। দাবিও আছে। কিন্তু তাদের এবং তাদের স্ত্রীদের চাকুরিসহ অন্যান্য স্বার্থে আপসকামিতায় আইনি কঠোরতা থেকে সংশ্লিষ্ট সকলে দমে গেলেও কথা কিন্তু থেকে যাবেই। সাধারণ্যে আনসার নামীয় এই দুই অপহরণকারীর কর্মকাণ্ডে আনসারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে থাকবে না। 'আনসার' শব্দের অর্থ যে সাহায্যকারী, সেটার মর্যাদা কিছুটা হলেও পদদলিত না হয়ে থাকবে না।

আমাদের দেশে আনসার সাবেক পোশাক, কর্মদক্ষতা ও ভাবমূর্তি থেকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এমতাবস্থায় কোনো আনসারের গায়ে অপকরণকারীর তকমা লাগুক সেটা নিশ্চয়ই সচেতন দেশদরদী কেউ চাইবে না। সেজন্যে আনসার সদস্যদের নৈতিক শিক্ষায় বেশি বলীয়ান করার অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তারপরও পদস্খলন, বিপথগামিতায় আক্রান্তদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে যা যা করণীয় তার থেকে কক্ষণোই পিছপা না হতে আমাদের অনুরোধ থাকলো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়