প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর জেলায় ট্রাক্টর যে কতো করুণ উপাখ্যান তৈরি করেছে, তার হিসেব বের করা কঠিন। প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। স্বামী থেকেও নেই এমন এক নারী তার একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে অবস্থান করছিলেন পিত্রালয়ে। তিনি পেশায় ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি বিশেষ ট্রেনিংয়ের প্রয়োজনে চাঁদপুর থেকে হাজীগঞ্জের আলীগঞ্জে অবস্থিত প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে যাতায়াত করতেন। একদিন তিনি বাস থেকে নেমে উক্ত ইনস্টিটিউটের প্রবেশ গেটের দিকে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে বেপরোয়া গতির মালবাহী ট্রাক্টর এসে তাকে এতো জোরে ধাক্কা দিলো যে, তিনি সীমানা দেয়ালে আছড়ে পড়েও বাঁচতে পারেননি। ট্রাক্টর শুধু তাকেই পিষ্ট করে হত্যা করেনি, ওই সীমানা দেয়ালও ভেঙ্গে ফেলে।
এভাবে দুর্ঘটনার আরো অনেক করুণ উপাখ্যান তৈরির পর মন গলে তৎকালীন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের। তিনি সড়কে ট্রাক্টর চলাচল নিষিদ্ধি করলেন এবং এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে নিরাপোষ থাকলেন। তাঁর এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অনুকূল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ট্রাক্টরের ধাক্কায় কিংবা চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণহানির ঘটনা শূন্যের কোটায় নেমে আসলো। তাঁর পরবর্তী পুলিশ সুপারগণ সাংবাদিকদের দাবির মুখে ট্রাক্টর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখলেন। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার অনীহা ও বিরক্তি রয়েছে। সে সুযোগে সৃষ্ট শৈথিল্যে চাঁদপুর জেলা শহরে ট্রাক্টর না চললেও ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে কম-বেশি ট্রাক্টর চলছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন আনাড়ি চালকের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও। সর্বশেষ গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে ফরিদগঞ্জে ঘটেছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
চাঁদপুর কণ্ঠে শনিবার প্রকাশিত ‘সড়কে নিষিদ্ধ ট্রাক্টরের চলাচল : নানা বাড়ি বেড়ানো হলো না মামুনের’ শীর্ষক সংবাদ থেকে জানা যায়, এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের আমিরাবাজার এলাকায়। পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ উপজেলার ৬নং ইছাপুরা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী টিটু পাটোয়ারীর পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে মামুন তার নানার বাড়ি বেড়াতে এসে ট্রাক্টর চাপায় প্রাণ হারায়। সে নানা বাড়ির নিকটস্থ রাস্তায় আসার সাথে সাথে ইটবোঝাই একটি ট্রাক্টর তাকে চাপা দেয়। কেঁদে কেঁদে মামুনের নানী তাহমিনা বেগম চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, মামুন তার মায়ের সাথে অনেক দিন পর আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে লাশ হয়ে গেলো।
নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সড়কে ট্রাক্টর চালানোর ব্যাপারে অপরিণামদর্শীর ন্যায় ভূমিকা পালন করে ব্রিকফিল্ড (ইটখোলা) পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন। এ ট্রাক্টরগুলো গ্রামীণ সড়কগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এতোটা যে, অন্যান্য ছোট ছোট যানবাহন তো বটেই, মানুষ চলাচলও কষ্টকর হয়ে পড়ে। আমরা এই ট্রাক্টর চলাচল পুরোপুরি বন্ধে কঠোরতা আরোপে চাঁদপুরের নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার)-এর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে এবং গ্রামীণ সড়কগুলোও রক্ষা পাবে।