শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫, ০৭:৪৯

কাজল রাণীর এই অসহায়ত্ব কি এতোদিন কারো চোখে পড়লো না?

অনলাইন ডেস্ক
কাজল রাণীর এই অসহায়ত্ব কি এতোদিন কারো চোখে পড়লো না?

এই কাজল রাণীকে নিয়ে গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠে মানবিক আবেদন সম্বলিত প্রতিবেদন লিখেছেন ফরিদগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, চঁাদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি লিখেছেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্বামী যতদিন বেঁচে ছিলেন, তিনিই মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাহায্যের জন্যে হাত বাড়িয়েছেন, মানুষও তাকে সহায়তা করেছেন। কিন্তু ৪ বছর পূর্বে স্বামীহারা হওয়ার পর মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা বৃদ্ধা কাজল রাণী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য হচ্ছে পুত্রবধূ। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্নার কাজ করে যা আয় করছেন তা দিয়েই চলছে জোড়াতালির সংসার। কিন্তু সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে ঘর আর মেরামত করতে পারেন নি। ফলে জরাজীর্ণ ঘরেই বসবাস করতে হচ্ছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ঘড়িহানা গ্রামের বিধবা কাজল রাণী চক্রবর্তীকে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিনের চালে মরিচা ধরায় বেশ ক’টি জায়গায় ছিদ্র হয়ে গেছে। চালের নিচে পলিথিন টাঙ্গিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছেন কাজল রাণী। বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতরে ছোট ছোট পাত্রে পানি জমে। এমন দুরবস্থার মধ্যেই চলছে তার জীবন। টিনের বেড়া, কাঠের দরজা, জানালাও নড়বড়ে। যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়ে বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

২০২১ সালে কাজল রাণীর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্বামী নারায়ণ চন্দ্র চক্রবর্তীর মৃত্যু হয়। একমাত্র ছেলে নেপাল চন্দ্র চক্রবর্তী মানসিক প্রতিবন্ধী। পরিবারের উপার্জনের একমাত্র ভরসা পুত্রবধূ। কাজল রাণীর একমাত্র ভাতার কার্ডটিও বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি খুব কষ্টে আছি। ঘরটা যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। সরকারের কাছে এবং সমাজের বিত্তবানদের কাছে একটা ঘর করে দেয়ার অনুরোধ জানাই। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সরকারি সহায়তা দিয়ে কাজল রাণীর নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হোক।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় কাজল রাণী বিধবা ভাতা ও বৃদ্ধ ভাতার কার্ড পেতে পারেন, যদি একজনকে বিশেষ বিবেচনায় দুটি কার্ড দেয়ার বিধান থাকে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হিসেবে তার স্বামী জীবদ্দশায় পেতে পারতেন প্রতিবন্ধী ভাতা। আর মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেও পেতে পারতেন প্রতিবন্ধী ভাতা। সে যাই হোক, কাজল রাণীর পরিবারের কোনো সদস্যের এখন কোনো ভাতার কার্ডই নেই। এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউপি সদস্যের উদাসীনতা অবশ্যই দায়ী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে উপচেপড়া টাকার যন্ত্রণায় কোনো খাল বা জলাশয়ে নয়, সড়কে নয়, পাহাড়, ফসলের মাঠ, মানুষের বাড়ির সামনে ও পেছনে অপ্রয়োজনীয় সেতু বানিয়ে কোটি কোটি টাকা অপচয় করেছে। এই মন্ত্রণালয়ের আওতায় বহু জেলায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সাথে যোগসাজশে দলীয় নেতা-কর্মীরা সেতু না বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে, আর বিভিন্ন উপকরণ তো নিয়েছেই। সে কারণে কাজল রাণী চক্রবর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জরাজীর্ণ বসতঘর সংস্কারের জন্যে পান নি টিনসহ অন্যান্য উপকরণ ও অর্থ। চঁাদপুরের অন্য সকল উপজেলা থেকে ফরিদগঞ্জে দানবীরের সংখ্যা অনেক বেশি। অথচ তঁাদের কিংবা তঁাদের প্রতিনিধিদের চোখে কাজল রাণী পড়েন নি বছরের পর বছর চলে গেলেও। অবশ্য এসব দানবীরের পক্ষে কাউকে দান করার ক্ষেত্রে যদি দান গ্রহণকারীর দলীয় পরিচয়টা মুখ্য হয়, তাহলে দলীয় পরিচয়বিহীন কাজল রাণীর বঞ্চিত হওয়াটা স্বাভাবিক। এখন তো কোনো দলীয় সরকার ক্ষমতায় নেই, নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়। সে সুবাদে দলীয় পরিচয়হীন কাজল রাণীর জরাজীর্ণ ঘর সংস্কারের জন্যে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে টিন সহ নগদ অর্থ সহায়তা পেতে পারেন। এছাড়া চিত্তবান/বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিংবা দলীয় পরিচয়ধারী দানবীর থেকে বিশেষ বিবেচনায় পেতে পারেন কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়