রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

বাবুরহাটের বিশৃঙ্খলা অবসানের দায়িত্ব কার?

অনলাইন ডেস্ক
বাবুরহাটের বিশৃঙ্খলা অবসানের দায়িত্ব কার?

একইদিনে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি সংবাদ দেখে ও ভালোভাবে পড়লে যে কোনো পাঠক সামান্য একটু ভাবলেই উপলব্ধি করতে পারবেন যে, চাঁদপুর শহরতলীর বাবুরহাট নামক স্থানটি কার্যত বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত। বাবুরহাট নিয়ে প্রধান শীর্ষ সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘দুদু মাল-বাবুল মাল সিন্ডিকেটের দখলবাণিজ্য : বাবুরহাটে মতলব-পেন্নাই সড়কের রাস্তার পাশ দখল ॥ সঙ্কুচিত রাস্তায় তীব্র যানজট’। আরেকটি সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘বাবুরহাটে সিএনজি অটোরিকশা-অটোবাইক-বাস সংঘর্ষ’।

প্রথম সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর শহরের প্রবেশদ্বার বাবুরহাটে সড়ক ও জনপথের মতলব-পেন্নাই সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। কিন্তু স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির বাণিজ্যের কারণে রাস্তার পাশ দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পথচারীরা, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণের। পৌরসভার নির্দিষ্ট কোনো স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তার পাশ দখল হওয়াতে সিএনজি অটোরিকশা বাধ্য হয়ে রাস্তার উপর স্ট্যান্ড করে রাখতে হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি থামিয়েই যাত্রী ওঠানামা করাতে হচ্ছে। এতে করে সড়কের যানবাহন চলাচলের রাস্তাটি আরো সঙ্কুুচিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ঘটে যাচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। মতলব-পেন্নাই সড়কটি দিয়ে চাঁদপুর থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া করা যে কারো জন্যে সহজ ও কম সময়ের ব্যাপার। তাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের একমাত্র পছন্দের রাস্তা হলো এটি।

জানা যায়, মতলব-পেন্নাই সড়ক ও মসজিদ রোডের মাথায় স্থানীয় দুদু মাল ও বাবুল মাল সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে টং দোকান, চায়ের দোকান, পানের দোকান তুলে ভাড়া দেন। রিক্সার ড্রাইভারদের মারধর করে তাদের রিকশার স্ট্যান্ড সরিয়ে দুদু মাল ও বাবুল মাল টং দোকান, পানের দোকান, চায়ের দোকান ও মুচিকে বসিয়ে ভাড়া দেন। বাবুরহাটের প্রায় ৪০জন রিকশা ড্রাইভার বলেন, আমরা স্বাধীনতার পর থেকে এই জায়গায় রিকশা রাখতাম। এখানে একটা ব্রীজ ছিলো। আমরা ব্রীজের পাশেই আমাদের রিকশা রাখতাম। দুদু মাল ও বাবুল মাল আমাদের অনেককে মারধর করে সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দিচ্ছেন। আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় রিকশা রেখে যাত্রীদের ওঠানামা করাতে হয়। রাস্তার মুখে তাদের দোকান ও আমাদের রিকশার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। পেটের দায়ে আমরা রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামি। আমাদের বিশ্বাস, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে আমরা আমাদের রিকশার স্ট্যান্ডটি আবার ফিরে পাবো। এছাড়াও মতলব-পেন্নাই সড়কের দুপাশে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী যে যার মতো করে সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দিচ্ছে। এ বিষয়ে বাবুরহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আমি চাই আমাদের বাজারটি নিয়মনীতির মধ্যে চলুক। এই জায়গা দখল করে যারা ভাড়া দিচ্ছে তারা স্থানীয়। সরকার তাদের থেকেই জমি নিয়েছে, তাই তারা প্রভাব খাটায়। সিএনজি স্ট্যান্ড, মাইক্রো স্ট্যান্ড পৌরসভার অধীনে। তারা হস্তক্ষেপ করলে এখানে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। দ্বিতীয় সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাবুরহাটে সিএনজি অটোরিকশা-অটোবাইক-বাস সংঘর্ষে সিএনজি চালকসহ ৪ জন আহত হয়েছে। রোববার সকাল ১১টায় বাবুরহাট বাজারের দক্ষিণে প্রবেশ মুখে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, চাঁদপুরগামী জৈনপুর এক্সপ্রেস বিপরীত দিক থেকে আসা সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইকের সাথে মুখামুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের কোনো ক্ষতি না হলেও সিএনজি দুমড়ে মুচড়ে যায়। সিএনজিতে থাকা ৪ যাত্রী মারাত্মক আহত হন ও সিএনজি অটোরিকশার চালক গাড়ির ভেতরে আটকে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী বাজারের ব্যবসায়ীদের চেষ্টায় চালককে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। চালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ সময় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে যানজটমুক্ত করে এবং ঘাতক বাস ও দুর্ঘটনা কবলিত সিএনজিকে জব্দ করে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীগণ বলেন, বাবুরহাট বাজার এলাকাটি খুবই ব্যস্ততম ও জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা। কিন্তু এখানে রাস্তার দুপাশে ও বাজারের প্রবেশমুখে এলোপাতাড়িভাবে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের দোকান, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা রাখার কারণে প্রতিনিয়ত যানজট ও ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। এছাড়াও বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ছুটি হলে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে রাস্তা পারাপারের জন্যে সড়কে গতিরোধক না থাকায় বেপোরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল করছে। যানজট নিরসন ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে চাঁদপুর পুলিশ সুপার ও পৌরসভার মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বাবুরহাটবাসী।

বাবুরহাটের এতোসব বিশৃঙ্খলা অবসানে পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপ পর্যাপ্ত হবে বলে আমরা মনে করি না। এজন্যে জেলা প্রশাসন, সদর উপজেলা প্রশাসন, কল্যাণপুর, আশিকাটি ও মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টতা এড়ানো যাবে না। কেননা বাবুরহাট হচ্ছে সদর উপজেলা ও পৌরসভার প্রশাসনিক ক্ষমতার আওতাভুক্ত এমন একটি এলাকা, যেটি চাঁদপুর পৌরসভার প্রান্তিক এলাকা ও উল্লেখিত তিনটি ইউনিয়নে প্রবেশের মোক্ষম স্থান। এখানে প্রচুর জনসমাগম হয় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে ঢাকা অভিমুখী সংক্ষিপ্ততম সড়কটির কারণে। সেজন্যে বাবুরহাটে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলার টেকসই অবসানে পরিকল্পনা বা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম প্রণয়নে এমন সমন্বয় সভা করা দরকার, যেখানে জেলা ও সদর উপজেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, জেলা পরিষদ, চাঁদপুর পৌরসভা, সড়ক ও জনপথ (সওজ), বিসিক শিল্পনগরী ও তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়