রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

কতো টাকার মাছে রাস্তাসহ আরো কতো কিছু খায়!

অনলাইন ডেস্ক
কতো টাকার মাছে রাস্তাসহ আরো কতো কিছু খায়!

একটি বাড়ির শতবর্ষী একটি পুকুর। এ পুকুরটির চার পাড়ের মধ্যে একটি পাড়ের কোণায় খালের সংযোগ ছিল। বর্ষায় এ খাল দিয়ে পুকুরে নূতন পানি ঢুকতো, মাছ ঢুকতো-বেরুতো। এটা পুকুরের মালিকদের ভালো লাগলো না। তারা বাঁধ দিয়ে পুকুরের সাথে খালের সংযোগ বন্ধ করে দিলো। মাছ চাষ করে অধিক লাভবান হবার স্বপ্ন দেখলো। মাছের পোনা ফেলার আগে তারা মৎস্য চাষে অভিজ্ঞ কারো কথা বলা কিংবা মৎস্য কর্মকর্তা/ মৎস্য বিজ্ঞানীর পরামর্শ নেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো না। তারপর দুবছর সময়ে তারা জাল ফেলে মাছ ধরে খেলো, বিক্রি করলো, তৃপ্তির হাসি হাসলো। দুবছর শেষে সেচের মাধ্যমে পুকুর পানিশূন্য করে দেখলো, চার পাড়ের মাটিতে গর্ত ও ফাটল। যে পাড়ে ছিলো রাস্তা ও কবরস্থান, সে পাড়ে দেখা দিলো ধস। এমতাবস্থায় রাস্তা-কবরস্থান রক্ষায় খরচ হলো লাখ লাখ টাকা। আর যে পাড়ে ছিলো বসতঘর, সেগুলো রক্ষায় নিতে হলো ব্যবস্থা। আবার মাছ চাষ করা হলো সেই পুকুরে। এক বছর পর দেখা গেলো, পুকুরের এক পাড়ের কোণা পুরোটাই ধসে গেছে, যেখানে পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজনের চলাচলের সুবিধার্থে বাঁশের সাঁকো দেয়া হয়। অবশেষে সে পুকুরে মাছ চাষ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু রয়ে গেছে মাছের ধ্বংসযজ্ঞ। এভাবে কতো টাকার মাছে কতো টাকার রাস্তা, পাড়, বসতঘর, কবরস্থান ইত্যাদি খায়, সেটা উপরোল্লিখিত পুকুরটি দিয়েই অনুধাবন করা যায়।

গত শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘ফরিদগঞ্জে মহাসড়ক গিলে খাচ্ছে মাছ ॥ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাব, ইজারার পূর্বে নামমাত্র হচ্ছে সংস্কার’। সচিত্র সংবাদটিতে শামীম হাসান লিখেছেন, মহাসড়ক ছেড়ে মাছের খামারে আশ্রয় নেয়া নারিকেল গাছগুলো দেখে বুঝতে বাকি থাকে না মহাসড়ক গিলে খাচ্ছে মাছে। এ চিত্র ফরিদগঞ্জ পৌরসভাস্থ চরকুমিরা এলাকায় (সাবেক বেইলি ব্রিজ) চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের। সরেজমিনে দেখা গেছে, আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে মাছের খামার। খামারের তিন পাড় সুরক্ষায় ব্যবস্থা থাকলেও আঞ্চলিক মহাসড়কের সুরক্ষায় গাইডওয়াল কিংবা অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মহাসড়কের মাটি গিলে খেয়েছে মাছ। ফলে ইতোমধ্যেই ফুটপাত বিলীন হয়েছে খামারে। মহাসড়কের পাশে থাকা গাছগুলো হেলে পড়েছে খামারের বুকে। গোড়ার মাটি সরে সড়কের পাশে থাকা নিরাপত্তা খুঁটির বেশ ক’টি খামারে গিয়ে পড়েছে। সড়কের পাদদেশে মাছের বড় বড় গর্ত থাকায় যে কোনো সময় সড়কে ধস নামার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বছরের শেষ প্রান্ত। ইতোমধ্যেই নতুন করে খামার ইজারা দিতে তোড়জোড় চলছে। দায়সারা গোছে সড়কের দু পাশে মাটি ফেলছে খামার কর্তৃপক্ষ। মৌসুমের শুরুতে বরাবরের ন্যায় সে মাটি খামারে বিলীন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। খামার থেকে চাষী-মহাজনরা লাভবান হলেও মহাসড়ক সুরক্ষায় পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে উপজেলাবাসীর পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যাহত হবে, বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে ধারণা তাদের। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি বছর বিশাল অঙ্কে ইজারা হয় মাছের খামার। তা সত্ত্বেও মহাসড়ক রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে না খামার কর্তৃপক্ষ। উদাসীন মহাসড়ক সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও। স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ ব্যতীত খামার ইজারা নয়--এমন দাবি জানিয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বশীল দপ্তরগুলো দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

শাহরাস্তিতেও এলজিইডির গ্রামীণ সড়কগুলো কীভাবে মাছের খামারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটা বছরখানেক আগে চাঁদপুর কণ্ঠে সচিত্র সংবাদে তুলে ধরেছেন শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক ফারুক চৌধুরী। মাছের খামার দ্বারা ক্ষয়ক্ষতির এমন বহু চিত্র শুধু চাঁদপুর জেলায় নয়, দেশের বহু স্থানে খুঁজে পাওয়া যাবে। আমরা মাছ চাষের বিরোধী নই। তবে মাটির প্রকারভেদ বিচারে কোন্ পুকুর বা জলাশয়ে কোন্ মাছ চাষ করা যাবে সে ব্যাপারে সরকারের মৎস্য বিভাগের পরামর্শ নেয়াটা মাছচাষী বা খামারিদের জন্যে বাধ্যতামূলক করাটা জরুরি বলে মনে করি। আমরা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি চাই, কিন্তু খামারের পাড়ে থাকা রাস্তা/সড়ক/মহাসড়ক/বাড়িঘর, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনাসহ অন্যান্য কিছুর ব্যাপক ক্ষতি চাই না। এ ব্যাপারে সমন্বিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হোক--সেটা অবশ্য অবশ্যই চাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়