প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বাবুলাল কর্মকারের মৃত্যুতে শোক

এককালে যিনি ছিলেন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরবর্তীতে তিনি হয়ে গেলেন ব্যবসায়ী। তাঁর নাম বাবুলাল কর্মকার। স্বর্ণ ব্যবসার সাথে ছিলো তাঁর দীর্ঘদিনের সংশ্লিষ্টতা। চাঁদপুর শহরের প্রধান সড়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী সড়কের আখন্দ মার্কেটে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যার নাম মেসার্স নিউ বিকে জুয়েলার্স। তিনি আপাদমস্তক ছিলেন একজন ভদ্রলোক। চলতেন পরিপাটি, কথা বলতেন মেপে মেপে। আচরণ ছিলো তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক। তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ১৯৯০ সালের ২৭ আগস্ট বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেবামূলক সংগঠন রোটারী ইন্টারন্যাশনালের আওতাভুক্ত চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী ক্লাবে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য (চার্টার মেম্বার) হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি এই ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি দি রোটারী ফাউন্ডেশনের পল হ্যারিস ফেলো হন। এছাড়া রোটারী আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিক্টে অ্যাডিশনাল লেফটেন্যান্ট গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, অ্যাসিস্টেন্ট গভর্নরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন তাঁর ক্লাবের জন্যে একজন ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড। ক্লাবটির অস্তিত্ব টেকসই করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়।
বাবুলাল কর্মকারের সমাজসেবামূলক কাজগুলো ছিলো নীরবে নিভৃতে। চাঁদপুর শহরের পুরাতন আদালত পাড়াস্থ তাঁর বাসভবনের সন্নিকটে চরিত্রগঠন আন্দোলনের প্রবক্তা শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের পুণ্য জন্মস্থানে প্রতিষ্ঠিত অযাচক আশ্রমের কার্যক্রম পরিচালনায় তাঁর ছিলো অকৃপণ সহযোগিতা। এই আশ্রমের সুখে-দুঃখে তাঁর সান্নিধ্য ছিলো অসামান্য। তিনি ছিলেন ভীষণ স্বাস্থ্য সচেতন। দৈনন্দিন শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন পরিচালনায় তিনি ছিলেন অনেক মনোযোগী। মিতব্যয়, মিতাহার, মিতাচার ছিলো তাঁর চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ক্লেশ ক্লেদ এড়িয়ে চলতেন সবসময়। দীর্ঘজীবী হবার সম্ভাবনায় ছিলেন উজ্জ্বল। কিন্তু না, সেটি হতে পারলেন না তিনি। ৮ ডিসেম্বর ২০২৩ রাত সাড়ে ৯টায় ৭৯ বছর বয়সেই ইতি টানতে হলো তাঁর জীবনের।
একজন মানুষ যতো স্বাস্থ্যবান বা স্বাস্থ্য সচেতন হোন না কেনো, তিনি তাঁর স্রষ্টার পূর্ব নির্ধারিত সময় পর্যন্তই বেঁচে থাকেন। কে যে কখন কী কারণে দুরারোগ্য মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যান, সেটা আগাম আন্দাজ করার সুযোগ থাকে না। যেমন সুযোগ ছিলো না বাবুলাল কর্মকারেরও। তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন অনেক আগেই, তবে বিষয়টি ছিলো গোপন। কারণ, তিনি ছিলেন চাপা স্বভাবের। তাঁর রোগটি জানাজানি হলে বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁকে দেখতে যাবেন, ঘন ঘন কুশল জানতে চাইবেন--এটা সম্ভবত তাঁর পছন্দ ছিলো না। সেজন্যে চিকিৎসার পাশাপাশি নীরবে কষ্টকর রোগযন্ত্রণা সয়ে সয়ে তিনি এমনভাবে চিরবিদায় নিলেন, যে বিদায়টা তাঁর পরিণত বয়সে হলেও বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীসহ পরিচিতজনের কাছে আকস্মিক মনে হয়েছে। সেহেতু শোকের মাত্রাটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হয়েছে। চাঁদপুর শহরের একজন সুধী ব্যক্তি হিসেবে বাবুলাল কর্মকারের মৃত্যুতে আমরাও শোকাহত। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।