শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

পুলিশ কর্মকর্তার এমন ভুলে ভাবমূর্তি গিয়ে কোথায় দাঁড়ায়?
অনলাইন ডেস্ক

‘পুলিশের ভুলে নির্দোষ আরিফ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হলেন!’ শিরোনামের একটি সংবাদ গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে পড়ে অনেক পাঠকই বদলে যাওয়া পুলিশ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হয়েছেন। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, আদালতে বা থানায় কোনো মামলা না থাকলেও শুধুমাত্র নামের মিলের কারণে আরিফ হোসেন (৩৬) নামে এক ব্যক্তি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হলেন। পুলিশের ভুলের কারণে মৃগী রোগী আরিফকে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হতে হলো। অথচ যেই মামলায় পুলিশ নির্দোষ আরিফকে গ্রেফতার করেছে সেই মামলার আসামী আরিফ বর্তমানে ইতালি প্রবাসী। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার।

জানা গেছে, উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহাপুর ও ইছাপুরা পাশাপাশি দুটি গ্রাম। জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে সাহাপুর গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম তার দেবর আমিন উল্ল্যার পুত্র আরিফ (২৪)সহ কয়েকজনকে আসামী করে আদালতে মামলা (নং-১২০৪/২০২২) দায়ের করেন। ওই মামলায় অভিযুক্ত আরিফের নামে ফরিদগঞ্জ থানায় ওয়ারেন্ট আসে। পুলিশের এএসআই নুরুন্নবী ওয়ারেন্ট যাচাই-বাছাই না করে গত ২৩ নভেম্বর সকালে ওই ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের আমিন হকের ছেলে আরিফ হোসেন (৩৬)কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় আরিফের পরিবারের সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই এবং আরিফ অসুস্থ বললেও ওই পুলিশ কর্মকর্তা কর্ণপাত করেননি। পরে আরিফের পরিবার ওইদিনই চাঁদপুরের আদালতের মাধ্যমে আরিফকে জামিনে নিয়ে আসে। কিন্তু বাড়িতে এসে জানতে পারেন, আরিফকে যেই মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই মামলার আসামী আরিফ নয়। বিষয়টি ২৬ নভেম্বর চাঁদপুরের সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে মামলার নথি উঠিয়ে তারা নিশ্চিত হন।

চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিনিধি সরেজমিনে রোববার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামে যান। সেখানে গিয়ে কথা হয় ওই গ্রামের আমিন হকের সাথে। তিনি জানান, তাদের পার্শ্ববর্তী আতর আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কয়েক মাস পূর্বের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সালিসি বৈঠক হয়, কোনো মামলা রুজু হয়নি। কিন্তু ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে থানা পুলিশের এএসআই নুরুন্নবী এসে আমার ছেলে আরিফের নামে ওয়ারেন্ট আছে বলে রাস্তা থেকে টেনে হিঁচড়ে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ সময় মামলা নেই ও মৃগী রোগী বললেও পুলিশ কর্মকর্তা কর্ণপাত করেন নি। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি, পার্শ্ববর্তী সাহাপুর গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগমের দায়েরকৃত মামলার আসামী হিসেবে আমার ছেলেকে আটক করা হয়েছে। অথচ ওই মামলার আসামী আরিফ বর্তমানে ইতালি প্রবাসী। আমি ধার দেনা করে ছেলেকে জামিনে মুক্ত করেছি। ভুক্তভোগী আরিফ জানান, আমি কোনো মামলার আসামী না হলেও পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে আমি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাই। আরিফের ভাই কামাল হোসেন বলেন, আরেক বাড়ির আরিফের নামে মামলা ছিল। কিন্তু নুরুন্নবী দারোগা আমাদের কোনো অনুরোধই শুনেন নি। তাছাড়া আমাদের গ্রাম ইছাপুরা এবং প্রকৃত আসামীর গ্রাম সাহাপুর। সাহাপুর গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম জানান, পুলিশ যেই আরিফকে ধরেছে, আমার মামলার আসামী সেই আরিফ না। আমার দেবরপুত্র আরিফ বর্তমানে প্রবাসে রয়েছে। প্রবাসী আরিফের ভাই মাসুদ হোসেন জানান, তার ভাই আরিফ বর্তমানে ইতালি রয়েছে। পুলিশ যাচাই-বাছাই ছাড়াই অসুস্থ হতদরিদ্র আরিফকে গ্রেফতার করেছে। পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এমরান হোসেন বলেন, আরিফকে আটকের কথা আমি প্রথমে শুনিনি। পরে শুনেছি। এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই নুরুন্নবী জানান, আমি ওয়ারেন্টের সাথে নামণ্ডঠিকানা মিলে যাওয়ায় তাকে আটক করি। আদালত মনে করলে আমাকে তলব করবে।

একসময় কনস্টেবল থেকে প্রমোশন পেতে পেতে অনেকে পুলিশ সুপার হয়েছেন--এমন গল্প শোনা গেছে। চাঁদপুরের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারও কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া ছিলেন, যিনি চলমান শতাব্দীর শুরুতে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তো সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ পর্যন্ত পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া যায়, এর বেশি নয়। বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার এবং এসআই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাগণ এতোটা উচ্চ শিক্ষিত ও মেধাবী যে, এরা ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশের বিতর্কিত ভাবমূর্তি থেকে স্বাধীন দেশের পুলিশের ভাবমূর্তিকে দিনের পর দিন উজ্জ্বল করে চলছেন। অনেকে অকপটে তাই বলেন, আমাদের দেশের পুলিশ বদলে গেছে। তবে কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া কিছু এএসআই/এসআই কিংবা সমমানের পুলিশ কর্মকর্তা সহ কিছু কনস্টেবলের বিতর্কিত/আপত্তিকর কর্মকাণ্ডের কারণে বদলে যাওয়া পুলিশ নিয়ে নানা কথা উঠে। যেমনটি উঠেছে ফরিদগঞ্জে। এএসআই নুরুন্নবীর ভুলের কারণে একজন নিরীহ হতদরিদ্র অসুস্থ আরিফকে যেভাবে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী সাজিয়ে টানা-হিঁচড়া করে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো, তারপর আদালত থেকে জামিন নিতে হলো, সেটা অনেক দুঃখজনক। এমন ভুল ক্ষমাযোগ্য নয়, বরং ক্ষতিপূরণ প্রদানযোগ্য এবং শাস্তিযোগ্য। আমরা বিশ্বাস করি, এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মহোদয়ের যথাযথ পদক্ষেপ ক্ষতিগ্রস্তদের সন্তুষ্ট করবে এবং পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়