রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ!
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম (মায়া চৌধুরী)-এর সুযোগ্য বড়ো ছেলে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক সাজেদুল হোসেন চৌধুরী (দিপু চৌধুরী) চলে গেলেন না ফেরার দেশে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় গত শনিবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ২৭ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। গত ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

দিপু চৌধুরী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলেও পেয়েছেন তার বাবা মায়া চৌধুরী। তিনি প্রাণপ্রিয় ছেলেকে হাসপাতালে রেখে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আজ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষদিন। এই বাছাই কার্যক্রমে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, গতকাল ও আজ মিলিয়ে তিন দফা জানাজা শেষে মায়া চৌধুরী তাঁর পুত্র দিপু চৌধুরীর লাশ কাঁধে নিয়ে বনানী কবরস্থানে যাবেন এবং দাফন কাজে অংশ নেবেন।

মায়া চৌধুরী তাঁর জীবনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ অনেক রাজনৈতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবেলা করে সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দিয়ে জয়ী হলেও আজ স্রষ্টার ইচ্ছার কাছে নিজেকে অনেক অসহায় ও দুর্ভাগা বলে বোধ করবেন যখন পৃথিবীর সবচে’ ভারী বোঝা হিসেবে পুত্রের লাশ কাঁধে নিয়ে কবরস্থানে যাবেন। চরম মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে তিনি শোক সামলে নিজেকে যাতে স্বাভাবিক রাখতে পারেন, সেজন্যে পরম করুণাময় মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে আমাদের আরজ থাকলো।

মায়া চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডার হিসেবে অসম সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শন করে ‘বীর বিক্রম’ উপাধি অর্জন করেন এবং চলতি ২০২৩ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। বাংলাদেশের রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মায়া চৌধুরী বহুল পরিচিত একটি নাম। তিনি নব্বইর দশকে এমপি হয়েই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে এমপি হয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে না পারলেও গত পাঁচ বছরে তিনি দলের পক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে তাঁর বড়ো ছেলে দিপু চৌধুরী নিজেকে গড়ে তোলার জন্যে রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিরলস শ্রম দেন এবং পিতাকে সার্বক্ষণিক সাহচর্য দেন। মায়া চৌধুরীর ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও পরিকল্পনা আবর্তিত হচ্ছিলো এই ছেলেকে ঘিরেই। সেজন্যে এবার তিনিও দলীয় মনোনয়ন চান এবং ছেলেও চান। পেলেন তিনিই। পঁচাত্তর বছর বয়সে এবারকার নির্বাচনকে নিজের জন্যে শেষ নির্বাচন এবং পরবর্তীতে ছেলেকে দিয়ে নির্বাচন করানোর কথা হয়তো ভেবেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বড়ো ছেলের অকাল মৃত্যু তাঁর সেই ভাবনায় ছেদ ঘটালো। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। আমরা তাঁর দুঃখ-বেদনায় সমব্যথী। তাঁকে সান্ত¡না জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা দিপু চৌধুরীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং পিতা হিসেবে ছেলের লাশ কাঁধে নেয়ার অসহনীয় কষ্ট ও অপরিসীম শোক সইবার শক্তি আল্লাহ মায়া চৌধুরীকে দান করুক--নিরন্তর সে প্রার্থনা জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়