রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ব্যক্তি নেই, ভালো ফলাফলও নেই?

ব্যক্তি নেই, ভালো ফলাফলও নেই?
অনলাইন ডেস্ক

‘হাজীগঞ্জের একাধিক কলেজের ফলাফলে চরম বিপর্যয়’ শিরোনামের সংবাদটি পড়ে কিছু প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে সচেতন ও ওয়াকিবহাল মহলে। সংবাদটিতে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, গত রোববার (২৬ নভেম্বর) প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে হাজীগঞ্জের একাধিক কলেজের ফলাফলে চরম বিপর্যয় ঘটেছে। উপজেলার ৯ টি কলেজের মধ্যে ২/১টি ছাড়া আশানুরূপ ফলাফলে চমক দেখাতে পারেনি কলেজগুলো। এ নিয়ে অভিভাবক আর শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার মান নিয়ে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চলিত বছর প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলার পাসের হার ৭৮। উপজেলার ৯টি কলেজ থেকে ২ হাজার ৮শ’ ৩২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ হাজার ২শ’ ৮ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৯ জন। ৫টি কলেজ থেকে কোনো জিপিএ-৫ আসেনি। ফলাফল পর্যালোচনা করে জানা যায়, উপজেলার মনোরম পরিবেশে অবস্থিত বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ আর হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশনের ফলাফলে চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এ দুটি কলেজের মোট পাসের হার ৫০-এর নিচে। বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ থেকে ১শ’ ১৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২১ জন। মোট ফেল করেছে ৯৪ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পায়নি কেউ। এ- পেয়েছে ২ জন, বি পেয়েছে ৯ জন, সি পেয়েছে ১০ জন, মোট পাসের হার ২৪। হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশন থেকে ২৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪ জন, মোট ফেল করেছে ২৪ জন। জিপিএ-৫ পায়নি কেউ, এ- পেয়েছে ৩ জন, বি পেয়েছে ১ জন, মোট পাসের হার ১৪। হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ১শ’ ৪২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৮ জন। মোট ফেল করেছে ১শ’ ১৪ জন। জিপিএ-৫ পায়নি কেউ, এ পেয়েছে ৪ জন, এ- পেয়েছে ৯ জন, বি পেয়েছে ৭ জন, সি পেয়েছে ৮ জন, মোট পাসের হার ২০।

বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ, হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশন ও হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের ফলাফলে চরম বিপর্যয় সম্পর্কে অভিভাবকগণ বলেন, আমরা আশ্চর্য হয়ে গেলাম, এই দুই বছর ধরে আমাদের বাচ্চাদের পড়িয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ফেল করিয়ে আমাদেরকে শেষ করে দিয়েছে। কলেজগুলোকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে অনেক অনেক বেশি যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন এই সকল অভিভাবক। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম জানান, এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের এই ফলাফল আমাদের জন্যে কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বসে জানার চেষ্টা করবো সমস্যা কোথায়।

ইউএনও মহোদয় এই কলেজগুলোর সমস্যা জেনে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে সেটা হবে খুবই ইতিবাচক। তারপরও কিছু কথা বলার অবকাশ থেকেই যায়। যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভালো চলে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের সুদক্ষ পরিচালনা বা সুযোগ্য নেতৃত্বে। যেমন-বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজটিতে যতোদিন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে মকবুল আহমেদ এবং হাজীগঞ্জ মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজে কাজী বজলুল হক কর্মরত ছিলেন, ততোদিন এই দুটি প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি পরীক্ষার ফলাফলকেন্দ্রিক যেভাবে বিদ্যমান ছিলো, তাঁদের বিদায়ের পর সেই বিদ্যমানতা ক্ষয়িষ্ণুতার দিকেই ধাবিত হয়েছে। বলা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটি যেন ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অবস্থা এমন--ব্যক্তি নেই, ভালো ফলাফলও আর নেই। এই দুই অধ্যক্ষের সাহচর্য পাওয়া কিছু শিক্ষক এখনও কর্মরত। সম্ভবত তারা ভালো কিছু ধারণ করতে পারেন নি। যার ফলে প্রতিষ্ঠান প্রধান হতে পারেন নি, হওয়ার চেষ্টা করেন নি, চেষ্টা করে সফলতা পান নি কিংবা নূতন প্রতিষ্ঠান প্রধানকে আন্তরিক সহযোগিতা দিতে পারেন নি। আর স্থলাভিষিক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানরা পূর্বসূরির ভালো কাজকে অনুসরণ করেন নি কিংবা অনুসরণের আন্তরিক প্রয়াস চালান নি। সর্বোপরি উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনায় নিজের কাজকে উদ্ভাসিত করে সাফল্য করায়ত্ত করতে পারেন নি। এটা অবশ্যই দুঃখজনক এবং ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনেক বড় ব্যর্থতা। হাজীগঞ্জের ইউএনও মহোদয় এই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করলে এবং সেমতে দিকনির্দেশনা দিতে পারলে, সর্বোপরি স্বীয় পর্যবেক্ষণের আলোকে পদক্ষেপ নিলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্বের খ্যাতির জায়গায় পুরোপুরি নিতে না পারলেও একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়