প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

আমাদের দেশে তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (ইউপি মেম্বার)। এরা একবার নির্বাচিত হতে পারলেই হলো, পরবর্তীতে এদের কেউ যদি নির্বাচিত নাও হয়, নামের আগে পরে মেম্বার শব্দটি পাকাপোক্ত আসন গেঁড়ে বসে। এদের কেউ কেউ সালিস/দরবারকে শুধু সামাজিক বা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে অর্পিত দায়িত্ব হিসেবেই ভাবেন না, অনেকে পেশা বানিয়ে ফেলেন। সালিস বা দরবারকে যারা আয়ের মাধ্যম হিসেবে নেন, তারা ইউপি সদস্য বা মেম্বার হিসেবে বর্তমান/সাবেক যে অবস্থাতেই থাকেন না কেন, নিজেদের ক্ষমতাধর ভাবতে বা রাখতে যা যা করা দরকার তা-ই করেন। এমন ব্যক্তিরা অনিয়ম, কূটকৌশল, ভিলেজ পলিটিক্স, সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিজ এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করেন। স্বীয় স্বার্থে এরা রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, থানা পুলিশের সাথে সুসম্পর্ক (!) বজায় রাখেন। এক পর্যায়ে এদের কেউ কেউ নিজেকে দোর্দণ্ড প্রতাপতালী ভাবতেও কসুর করেন না। ধরাকে সরাজ্ঞান করা যেন এদের কাছে মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মাদক, বাল্যবিবাহ, ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি, পরকীয়ায় সংশ্লিষ্ট হওয়া কিংবা আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া এমন সাবেক/বর্তমান ইউপি মেম্বারের চরিত্রের ম্লানিমা হয়ে যায়। এদের কাছে নিরীহ এলাকাবাসী হয়ে যায় নিত্য জিম্মি।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় নির্মাণাধীন দেয়াল ভাংচুর ॥ আহত ১’ শিরোনামের সংবাদে এক সাবেক ইউপি মেম্বারের কাণ্ডই ফুটে উঠেছে। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় নির্মাণাধীন দেয়াল ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তফা মালের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৩ নভেম্বর দুপুরে। চাঁদপুর সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত একটি অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নের পশ্চিম তরপুরচণ্ডী গ্রামের হোসেন বেপারীর ক্রয়কৃত জমিতে দেয়াল নির্মাণের সময় স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তফা মাল হোসেন বেপারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে হোসেন বেপারী অস্বীকৃতি জানালে মোস্তফা মালের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজনসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে নির্মাণাধীন দেয়াল ভাংচুর করেন এবং হোসেন বেপারীকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেন। পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে ৯৯৯ নাম্বারে কল দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শেখ মুহসীন আলমের নির্দেশে মডেল থানার এসআই কাউছার ও এএসআই মিরাজ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ ৪ যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারটি নিরীহ হওয়ায় উক্ত সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তফা মাল প্রভাব খাটিয়ে থানা থেকে আটক ৪ যুবককে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনার পরপরই প্রভাবশালী ইউপি সদস্য মোস্তফা মালের হুমকি-ধমকিতে ভুক্তভোগী পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তফা মালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কয়েক মাস পূর্বে জমিটি হোসেন বেপারীর কাছ থেকে বায়না করি। কিন্তু তিনি আমাকে কিছু না বলে অন্যত্র বিক্রি করায় তার সাথে তর্কবিতর্ক হয়েছে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে আনা বাকি অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে তিনি দাবি করেন।
সচিত্র সংবাদটিতে হোসেন বেপারীর রক্তাক্ত ছবি এবং ভাংচুরকৃত দেয়ালের দৃশ্য ছাপা হয়েছে। সাবেক ইউপি মেম্বার মোস্তফা মালের সাথে তর্কবিতর্ক ছাড়া যদি হোসেন বেপারীর আর কোনো কিছু না হয়ে থাকে, তাহলে হোসেন বেপারীকে কে আহত করলো এবং তার নির্মাণাধীন দেয়ালটি কে ভাঙ্গলো, সেটি সরেজমিন তদন্ত করা দরকার। এই তদন্তের প্রয়োজনে আটক চারজনকে পুলিশের ছেড়ে দেয়া কি ঠিক হয়েছে? এভাবে আটককৃতরা ছাড়া পেলেই নিরীহ মানুষের নিগ্রহ বাড়ে অনেক, তাদের জীবন হয় বিপন্ন। গ্রামের নিভৃত জনপদে হোসেন বেপারীর মতো নিরীহ মানুষরা মোস্তফা মালের মতো কিছু সাবেক/বর্তমান ইউপি মেম্বার দ্বারা এতোটা নানারূপী নিপীড়নের শিকার হন, যার কথা কাউকে পুরোপুরি বলতে না পেরে তারা গুমড়ে মরে কাঁদেন। এসব কেউ দেখেন না, আবার কেউ দেখেও না দেখার ভান করেন। এটি উন্নয়নের পাশাপাশি সভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় যে অন্তরায় সেটি ভাববার অনিবার্যতা এড়িয়ে যাওয়া আর কতোদিন ঠিক হবে-সমাজ গবেষক/সমাজবিজ্ঞানীদের নিকট আমাদের প্রশ্ন থেকেই গেলো।