শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   দিনমজুরকে জবাই করে হত্যা, ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
  •   অবশেষে চাঁসক সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাছানকে বদলি
  •   নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সড়কের ওপর ভবন নির্মাণের অভিযোগ
  •   বাবা মায়ের উপর ছেলেদের নৃশংসতা ।। বৃদ্ধ বাবার থানায় অভিযোগ
  •   ফিরে এলেন আগের খতিব, নামাজের আগে নাটকীয়তা বায়তুল মোকাররমে

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মা ইলিশ রক্ষা অভিযান কতোটুকু সফল?
অনলাইন ডেস্ক

গত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকাসহ ইলিশের প্রজনন-অনুকূল দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে অভয়াশ্রম কর্মসূচি পালিত হয়েছে। চাঁদপুর জেলা টাস্কফোর্স, চাঁদপুর সদর উপজেলা টাস্কফোর্স, হাইমচর উপজেলা টাস্কফোর্স, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ মা ইলিশ রক্ষায় যথাসাধ্য অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযান চলাকালে শত শত জেলেকে ধরেছে, অনেককে জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছে, অনেককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পুরেছে, আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক তথা কিশোর বয়সী জেলেদেরকে মুচলেকা দিয়ে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, চাঁদপুর নদী এলাকায় মা ইলিশ রক্ষায় যতোটা কঠোরতা প্রদর্শন করা হয়েছে, নোয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও বৃহত্তর বরিশাল এলাকায় ততোটা কঠোরতা প্রদর্শন করা হয়নি। সেসব এলাকায় অভয়াশ্রম চলাকালীন অবৈধভাবে মাছ শিকারে লিপ্ত যে জেলেদের পাকড়াও করে জরিমানা আদায়ের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তারা আবার মাছ ধরতে গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ওইসব এলাকায় ঢিলেঢালাভাবে অভয়াশ্রম পালিত হয়েছে। ফলে মা ইলিশ এতোটা নিধন হয়েছে যে, চাঁদপুরের ৭০ কিলোমিটার নদীতে আর অন্যান্য বছরের ন্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে পারেনি। এখানকার জেলেরা অবৈধভাবে মাছ শিকারে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মা ইলিশ না পেয়ে, উপর্যুপরি কঠোর অভিযানের কবলে পড়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা নৌপুলিশ সহ টাস্কফোর্সের ওপর হামলে পড়ার সাহসও প্রদর্শন করেছে। অবশ্য প্রতি বছর অভয়াশ্রম চলাকালে একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে নৌপুলিশ, টাস্কফোর্স, কোস্টগার্ডের ওপর হামলা চালানোর ধারাবাহিকতা কিন্তু চলছেই। সে এলাকাটি হচ্ছে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীর চর, সংলগ্ন মতলব উত্তর উপজেলার চরউমেদ ও তৎসংলগ্ন শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার কাচিকাটা। চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার তিনটি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র, যারা নিষেধাজ্ঞা না মেনে বেপরোয়াভাবে মাছ ধরে ও অভিযান পরিচালনাকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে অভয়াশ্রমকে কার্যত সার্থকতায় প্রতিপন্ন হতে দেয় না। এদেরকে দমনে সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনের ব্যর্থতায় চাঁদপুরকেন্দ্রিক ৭০ কিলোমিটার নদী এলাকায় অক্টোবর-নভেম্বরের ২২দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান শুধু নয়, মার্চণ্ডএপ্রিল দুমাসের জাটকা রক্ষা অভিযানও পুরোপুরি সফল হয় না। মৎস্যজীবী নেতাদের মতে, এবার সামগ্রিক বিবেচনায় প্রায় অর্ধেক মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে, বাকিটা ধরা পড়েছে। বিগত অন্যান্য বছরের তুলনায় এই পরিমাণটা আশানুরূপ নয়, বরং হতাশাজনক।

চাঁদপুর জেলা টাস্কফোর্সের প্রধান হিসেবে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান অভয়াশ্রম চলাকালীন মা ইলিশ নিধনকারীদের মধ্যে যারা জেলেকার্ডধারী বলে প্রমাণিত হবে, তাদের সরকারি সে কার্ড বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। সেটা যদি বাস্তবে কার্যকর হয়, তাহলে আসন্ন জাটকা রক্ষা মৌসুমে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রকৃতপক্ষে কারেন্ট জালের উৎপাদন ও বিপণন পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে সরকারের ইলিশ রক্ষার অভয়াশ্রমসহ কোনো কর্মসূচিই শতভাগ সফল হবে না। কারেন্ট জাল উৎপাদনের পক্ষে দায়েরকৃত সকল রিট খারিজ হয়ে গেলেও কীভাবে রাজধানীর নিকটস্থ মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে কারেন্ট জাল কোন্ প্রভাবশালীর ইন্ধনে ও আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে উৎপাদন হয়, তারপর বিভিন্ন স্থানে বিপণন হয়, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত অভিযানে কারেন্ট জালের ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে মওজুদ জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়, তাদের জরিমানা করা হয়, অথচ তাদের ও উৎপাদকদের জেল দেয়া হয় না। কারেন্ট জালের কারখানায় চালানো হয় না সাঁড়াশি অভিযান এবং গুঁড়িয়ে দেয়া হয় না যন্ত্রপাতি। যদি সেটি করা হতো, তাহলে কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ হতো। কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে আইনের যতো কঠিন খড়গ গরিব, অসহায় জেলেদের অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেই। তাদের কেনা জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়, জরিমানা করা হয় এবং তাদের জেলও দেয়া হয়।

অভিজ্ঞজনদের মতে, এই কারেন্ট জাল বন্ধ করে দিলেই অভয়াশ্রম চলাকালে পেশাদার জেলে কিংবা মৌসুমী জেলে কেউই অবৈধভাবে মাছ শিকারে নামবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, খুবই স্বল্প ওজনের মাত্র ১০-২০ হাজার টাকা মূল্যের কারেন্ট জাল ছোট ছোট নৌকায় শিশু-কিশোর-যুবক সহ ক'জন অপেশাদার জেলেও দ্রুত নদীতে ফেলে চোরাগোপ্তাভাবে লাখ টাকার মাছ ধরতে পারে। অথচ তার বিপরীতে ৫/৬ লাখ টাকা মূল্যের কট সুতার খুবই ওজনওয়ালা ইলিশ ধরার বৈধ জাল বড় নৌকায় নদীতে ফেলতে প্রাপ্তবয়স্ক ১০/১২ জন পেশাদার জেলের প্রয়োজন হয়, কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় হয় এবং ৭-৮ ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে সে জাল মাছসহ নৌকায় তুলতে কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। কারেন্ট জালে শুধু মাছ নয়, জলজ প্রাণীমাত্রই আটকা পড়ে, যেটা পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর। অথচ ইলিশ ধরার বৈধ জালে সেটা হয় না। মোদ্দা কথা, অবৈধ কারেন্ট জালের উৎপাদন ও বিপণন যদি পুরোপুরি বন্ধ করা না যায়, তাহলে মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষার সকল কর্মসূচি লোকদেখানো ও আংশিক ফলপ্রসূই কেবল হবে, মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি আর সাধন হবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়