প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

যে কোনো ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে চেয়ারম্যানের পরে যে পদটি মেম্বারদের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে সচিব। ইউনিয়ন পরিষদে দাপ্তরিক কাজের প্রধান হচ্ছেন এই সচিব। সেই সচিবের সাথে যদি চেয়ারম্যানের বনিবনা না হয়, তাহলে ইউনিয়নবাসীর অবস্থা হয় সেই প্রবাদের মতো ‘পাটা-পুতার ঘষাঘষি মরিচের মরণ’। ফরিদগঞ্জের চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নবাসীর বর্তমান অবস্থা যে অনেকটা এই প্রবাদ বাক্যের মতো কিংবা ভবিষ্যতে তেমনটি হবে সেটি সহজে বলা যায় চাঁদপুর কণ্ঠে মঙ্গলবার ‘অনিয়ম নিয়ে চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউপির চেয়ারম্যান-সচিব দ্বন্দ্ব, পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ’ শিরোনামের সংবাদ পড়লে।
সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের মধ্যকার দ্বন্দ্বের জের ধরে উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা, মারধর ও পাল্টা হামলা এবং হামলায় আহত ব্যক্তিকে হাসপাতাল থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৮ অক্টোবর রোববার বিকেলে ও রাতে পৃথক এ ঘটনা ঘটে। এর আগে একই দিন দুপুরে অনিয়মের বিষয়ে কথা বলায় সচিবকে চেয়ারম্যান নিজে মারধর করার অভিযোগ উঠে। এই নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, ৮ অক্টোবর রোববার দুপুরে চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদে চলমান একটি বৈঠকে সচিব ইমাম হাসান চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান সচিবকে মারধর করেন বলে সচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ৯ অক্টোবর সোমবার দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন। এদিকে দুপুরে মারধরের ঘটনার পর সচিবের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার। তিনি জানান, দুপুরের ঘটনার পর সচিবের বাহিনী তার বিশকাটালী গ্রামের বাড়িতে হামলা করে। তারা ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় তার বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ফিরোজপুর বাজারে তার ভাগ্নে ইমরান হোসেন মিশর (২৬)কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। আহতাবস্থায় তাকে ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে পুনরায় হামলার চেষ্টা করে। পরে তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে রাতে ওই হাসপাতালেই ইমরানের উপর হামলা এবং তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে ইউপি সচিব ইমাম হাসান জানান, রোববার দুপুরের ঘটনার পর তিনি বাড়ি ফেরার পথে ইউপি কার্যালয়ের অদূরে চেয়ারম্যানের বাহিনী তার এবং তার লোকজনের উপর হামলা করে। এ সময় তিনি এবং তার ভাইপো মশিউর রহমান জুয়েল পাঠান আহত হন। এ ব্যাপারে তিনি রোববার রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সংবাদটি ভালোভাবে পড়লে এটা আন্দাজ করতে অসুবিধা হয় না যে, ফরিদগঞ্জের চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব দুজনেই বিভিন্ন অর্থে অনেক শক্তিধর। শক্তি প্রদর্শন ও মামলা-মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে কেউ কারো চেয়ে কম নয়। ধরুন, সচিবকে বদলি কিংবা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হলো বা হবে। তবে উভয়ের মধ্যে দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে কে মূলত দায়ী সেটা তদন্ত করে বের করতেই হবে। কারণ, এমন দ্বন্দ্ব বড্ড অশোভন ও দৃষ্টিকটু। অন্য কোনো ইউনিয়ন পরিষদে এমন দ্বন্দ্ব যাতে আর দেখা না দেয়, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগ্রহণে করণীয় নির্ধারণ করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।