প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, বাবা-মা, ভাই-বোনসহ ঘনিষ্ঠজনদের সাথে অভিমান, রোগকষ্ট সহ্য করতে না পারা, মোবাইল ফোন চেয়ে না পাওয়া, স্বামী/স্ত্রীর সাথে ঝগড়া, মিথ্যা অপবাদ সইতে না পারা, লজ্জা সংবরণ করতে না পারা, নানা ধরনের বঞ্চনাসহ বহুবিধ কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে চলছেই। কিন্তু কিশোর বয়সে কোনো ছেলেকে অভিভাবক বিয়ে করাতে রাজি না হওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে এমন খবর সাধারণত পাওয়া যায় না। অবশেষে সেটাও জানা গেলো মিডিয়ার কল্যাণে।
কচুয়ায় কর্মরত চাঁদপুর কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিনিধি ফরহাদ চৌধুরী কর্তৃক পরিবেশিত একটি সংবাদে লেখা হয়েছে, কচুয়া উপজেলার গোহট দক্ষিণ ইউনিয়নের গোহট গ্রামের আমিনুল হক মেম্বার বাড়ির মৃত আজম হোসেনের নাতি মোঃ সাজিদ (১৪) তার মামার কাছ থেকে আইফোন চেয়ে না পেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে সরজমিনে গিয়ে আত্মহত্যার অন্য কারণটি জানতে পারেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সাজিদের মামা সুজন ও আবুল কালাম জানান, সাজিদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। সে বসবাস করতো ঢাকার শাহজাহানপুরে ভাড়া বাসায়। তার বাবা মোঃ সোহেল দীর্ঘদিন যাবত ভারতে থাকেন এবং মা শাহানাজ ঢাকার একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। সে গত ৫ আগস্ট ঢাকা থেকে মামার বাড়িতে বেড়াতে আসে এবং তার মামা সুজনের বন্ধু রাজনের সঙ্গে রংমিস্ত্রির কাজ শিখতে যায়। ৩/৪ দিন কাজ করার পর কাজে না যাওয়ায় মামা সুজন তাকে ১২ আগস্ট কাজে যেতে বললে, সে তাকে আইফোন কিনে দেয়ার কথা বলে এবং ১৩ আগস্ট আবারও কাজে যাওয়ার কথা বললে সে তাকে বিয়ে করানোর প্রস্তাব দেয়। তখন মামা সুজন ও আবুল কালাম বলেন, তোকে আইফোন কিনে দেয়ার মতো আমাদের ক্ষমতা নেই এবং এখনো তোর বিয়ের বয়স হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাজিদ ১৩ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে সাজিদের মামা ও আত্মীয়স্বজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেন এবং তার মা শাহানাজকে ফোন দিয়ে সাজিদ ঢাকা গিয়েছে কিনা জানতে চান। মা জানান, সে আসেনি। এদিকে মোঃ এমরান হোসেন নামে এক ব্যক্তি সাজিদের নানার বাড়ির পাশের জুগি বাড়ির পুকুরের পাড়ে গাছ কাটতে এসে তারই পাশে নির্জন স্থানে গলায় গামছার পেঁচানো একটি লাশ দেখতে পান এবং লাশের পাশে একটি গোলাপজাম গাছের ২০/২৫ ফুট উচ্চতায় গামছা ছেঁড়া অন্য অংশটি বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। তাৎক্ষণিক স্থানীয় ইউপি মেম্বার সহিদুল হক খাজার মাধ্যমে কচুয়া থানা পুলিশকে জানালে কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইব্রাহিম খলিল ও ওসি (তদন্ত) মোঃ হারুনুর রশিদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সরেজমিনে এসে লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্যে চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করে।
কিশোর বয়স বলতে আমরা সাধারণত বাল্যকাল ও যৌবনের মধ্যবর্তী সময়টাকে বুঝি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০ বছর থেকে ১৯ বছরের মধ্যবর্তী সময়টাই হচ্ছে কৈশোরকাল। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিখ্যাত ছোটগল্প ‘ছুটি’তে ১৩-১৪ বছর বয়সের মতো বালাই আর পৃথিবীতে নাই বলে গল্পের নায়ক কিশোর ফটিকের যে চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, তাতে চঞ্চলতা-চপলতা, ক্রীড়া মনস্কতা, অপরিণামদর্শিতা, দুঃসাহসিকতা, অসহায়ত্বের বিষয়টি প্রতিভাত হয়। তবে রবীন্দ্রনাথ তাঁর কল্পনাকে অনেক বেশি প্রসারিত করতে পারলে এ যুগের সাজিদদের পর্যবেক্ষণ করে ফটিকের মধ্যে বিয়ে করার প্রবণতা বা মানসিকতা ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস চালাতে গিয়ে হয়তো বিব্রতবোধ করতেন কিংবা থমকে দাঁড়াতেন। কারণ, কিশোর বয়সীদের অন্তত ৯৮ ভাগ এমন মানসিকতা বা প্রবণতায় ভোগে না। হালে কিশোর গ্যাংকে ইভটিজিং, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, ভাড়াটিয়া হয়ে মারামারিসহ অনেক উশৃঙ্খল আচরণে দেখা গেলেও সংবাদে উল্লেখিত সাজিদের মতো বিয়ে করার মানসিকতায় ভুগতে দেখা যায় না। আমাদের উদ্বেগ, এমনটি অন্য কিশোরদের মধ্যে সঞ্চারিত হয় কিনা এবং সে কারণে আত্মহত্যা বেড়ে যায় কিনা।