প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

পুরো চাঁদপুর জেলার কথা না বলে যদি শুধু চাঁদপুর শহরের কথা বলি, তাহলে বলতে হবে, এই শহরের কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভালো প্রধান শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছিলো। এককালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া ২-১ টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চাঁদপুর শহরে ছিলো ভীষণ আলোচিত। এর পেছনে ছিলো দক্ষ প্রধান শিক্ষকদের অবদান। সেই প্রধান শিক্ষকদের কর্মকাল শেষ হবার পর সেই বিদ্যালয়গুলো সামগ্রিকভাবে ক্রমশ মুখ থুবড়ে পড়ে এবং অনেক পিছিয়ে যায়। এটা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে হয়েছে কতো না লেখালেখি। অবশেষে ওইসব বিদ্যালয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হলো সুদক্ষ প্রধান শিক্ষক এবং তারপর পরিবর্তন হয়ে গেলো বিদ্যালয়ের সামগ্রিক চেহারাই। এবার আসি কলেজ নিয়ে পুরো জেলার কথায়। চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ তো ভালো অধ্যক্ষের অভাবে ডুবতে বসেছিলো। ডুবন্ত তরীরূপী সেই কলেজকে ভাসিয়েছেন প্রফেসর মনোহর আলীর মতো অধ্যক্ষ। তারপর কলেজটি এখন পর্যন্ত শুধু এগিয়েই চলছে। চাঁদপুর জেলায় বেসরকারি অনেক কলেজ এগিয়ে চলছে ভালো অধ্যক্ষসহ শিক্ষকম-লীর কর্মকুশলতায়। বিপরীতে কিছু কলেজ পিছিয়ে যাচ্ছে ভালো অধ্যক্ষের অভাবে এবং অধ্যক্ষ নিয়ে অনিয়মের কারণে। এক্ষেত্রে অবশ্যই শাহরাস্তির চিতোষী ডিগ্রি কলেজের নামটি চলে আসে, যেহেতু সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সংবাদ চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। গত শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হলো কচুয়ার একটি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ।
‘কচুয়ার শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামের সংবাদে চাঁদপুর কণ্ঠের কচুয়া ব্যুরো ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন লিখেছেন, কচুয়ায় শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘন করে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার এলাকাবাসীর পক্ষে অভিভাবক মোঃ আবুল বাশার চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, কলেজে বর্তমানে কর্মরত সহকারী অধ্যাপক মোঃ মনিরুজ্জামানকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্যে প্রায় ৪ বছর যাবৎ বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ বোর্ড গঠন করে কলেজের লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোনয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রিটি অনুযায়ী প্রথম ৫ জনের মধ্যে ১ জনকে নিয়োগ দেয়ার বিধি থাকলেও ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মোঃ মনিরুজ্জামানের যোগসাজশে ৮ম ব্যক্তি মমিনুর রহমান ভূঁইয়াকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। নিয়োগ বোর্ডে গভর্নিং বডির সদস্যের স্নাতক সনদ ছাড়াই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লংঘিত হয়েছে। পূর্বের ন্যায় সহকারী অধ্যাপক মোঃ মনিরুজ্জামানের যোগসাজশে একই ডামি প্রার্থী দিয়ে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। গভর্নিং বডির সভাপতিসহ অন্য সদস্যদের মোটা অংকের টাকার বিনিময় হাত করা হয়েছে। ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে কলেজ তহবিল থেকে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে। যোগ্য ও ভালো প্রার্থী যেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া মোঃ মনিরুজ্জামান গভর্নিং বডির মিটিংয়ের নামে সভাপতিসহ সদস্যদের কলেজের নিজস্ব তহবিল হতে প্রচুর অর্থ সম্মানী হিসেবে প্রদান করেন, যা অস্বাভাবিক। মোঃ মনিরুজ্জামান পূর্বে বাতিলকৃত নিয়োগ পরীক্ষায় বোর্ডের সভাপতির চাহিদানুযায়ী অর্থ না পাওয়ায় অধ্যক্ষ প্রার্থী মোঃ মনিরুজ্জামানকে অযোগ্য ও ডামি প্রার্থী বলে নিয়োগ দেননি। পরবর্তীতে সভাপতিকে ম্যানেজ করে মোঃ মনিরুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়া হলে বিধি মোতাবেক হয়নি বলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তা বাতিল করে দেয়। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা কর্তৃক প্রেরিত একটি নোটিসে জানা যায়, ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত প্রতিনিধি দ্বারা ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া অধ্যক্ষ নিয়োগের পূর্বানুমতির আবেদনটি বিবেচনার সুযোগ নেই মর্মে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। বিধি মোতাবেক পুনরায় ২টি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুনরায় নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্যে বলা হয়। কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ড. নাজমুল হাসান কলিম উল্যাহ অধ্যক্ষ নিয়োগের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘন করে পুনরায় শুক্রবার অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্যে নিয়োগ বোর্ড গঠন করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমিনুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই রেজুলেশন করা হয়। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিচালনা পরিষদ সম্মানী নিচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারি বিধি মোতাবেকই হচ্ছে। এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ড. নাজমুল হাসান কলিম উল্যাহ বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে আছি।
আমরা বিশ্বাস করি, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কচুয়ার শেখ মুজিবুর রহমান কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে অনিয়ের বিষয়টিতে দ্রুত তদন্তের উদ্যোগ নেবেন। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি পুরানো কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে যে অনিয়মের অভিযোগের ফিরিস্তি সংবাদটি পড়ে জানা গেলো, তাতে সচেতন পাঠকমাত্রই বিস্মিত, বিক্ষুব্ধ ও বিব্রত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এমন অনিয়মে স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে চাপা ও প্রকাশ্য ক্ষোভ যে থাকে না, সেটা হলফ করে কে বলতে পারবে? বিশেষ করে অভিভাবকমহল ক্ষোভ পোষণের পাশাপাশি পোষ্যের পড়ালেখার প্রশ্নে নানা চিন্তায় হয়ে যায় অস্থির। আমরা শুধু কচুয়ার শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ নয়, যেখানেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ, গন্ধ বা আলামত পাওয়া যাবে, সেখানেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে নিরন্তর অনুরোধ জানাতে চাই। কারণ, আমাদের জাগ্রত বিবেক এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে প্রতিনিয়ত জোর তাগিদ দেয়।