প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ০০:০০

হাজীগঞ্জ বাজার হচ্ছে চাঁদপুর জেলার সবচে' বড়ো বাজার। একসময় চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার ব্যবসায়িক সমৃদ্ধিতে উপমহাদেশে পরিচিতি লাভ করলেও এখন সে অবস্থায় আর নেই। বর্তমানে হাজীগঞ্জ বাজার দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করে চাঁদপুর জেলাকে তুলে ধরছে বিশেষভাবে। সেই বাজারে এখন ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন সহ অন্য যে কোনো কিছু করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট করা ছাড়া যে কিছু করা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা সাম্প্রতিক সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। আশার কথা, হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন হাজীগঞ্জ বাজার সমিতির নির্বাচন নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে এগিয়ে এসেছে। এবার নির্বাচন নিয়ে উত্থাপিত বিতর্ক নিরসনসহ এই নির্বাচন আয়োজনের সুষ্ঠুতা নির্ণীত হবে বলে পর্যবেক্ষক মহল আশা প্রকাশ করছেন।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে 'হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনী সংকট নিরসনে মতবিনিময় সভা' শিরোনামের সংবাদে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন নিয়ে চলমান সংকট নিরসনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ মে মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা ই-সেন্টারে আয়োজিত সভায় সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রাশেদুল ইসলাম। সভায় ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ, সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও ঈদুল আজহার পরে নির্বাচন এমন বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত ২০ মে শনিবার সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতির আলোকে প্রার্থীদের সাথে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৮ মে মঙ্গলবার তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন কার্যকরী পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এরপর গত ১০ মে (বুধবার) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ৩১ মে হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে গত ১১ ও ১৩ মে দুদিনে মোট ৭২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ৭০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দাখিলকৃত প্রার্থীদের মধ্যে ১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। সবশেষে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ৬৯ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেন। এই ৬৯ জন প্রার্থীকে ২০ মে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার দিন প্রার্থীদের একাংশ ব্যবসায়ী সমিতি কার্যালয়ে অবস্থান করে ভোটার তালিকা হালনাগাদের দাবি জানান এবং তাদের সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করেন। এর আগে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর প্রার্থীদের মধ্যে একাংশ ৩ হাজার ৪৩ জন ভোটারের মধ্যে ৭/৮শ’ ভুয়া ভোটার থাকার কথা উল্লেখ করেন এবং বাজারের সঠিক ব্যবসায়ীদের (স্থায়ী ব্যবসায়ীদের) ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদের দাবি জানান। এরপর উল্লেখিত বিষয়টির সুরাহা (সমাধান) চেয়ে তারা চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও সহ নির্বাচন কমিশনের কাছে দরখাস্ত দেন। কিন্তু দরখাস্তের আলোকে কোনো সমাধান না পেয়ে অভিযোগকারী প্রার্থীরা শুক্রবার (১৯ মে) রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তারা বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করে যেন শনিবার (২০ মে) প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া না হয়। ভোটার তালবকা হালনাগাদ না করে যদি ৩১ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা তা প্রতিহত করবে বলে সংবাদকর্মীদের জানান। এরপর ২০ মে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার দিন প্রার্থীদের একাংশ ব্যবসায়ী সমিতি কার্যালয়ে অবস্থান করে ভোটার তালিকা হালনাগাদের দাবি জানান এবং তাদের সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দেড় ঘন্টা সড়ক অবরোধ থাকার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুল ইসলাম, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে আসেন এবং দুই পক্ষের সাথে কথা বলে সড়ক অবরোধ মুক্ত করেন। তবে সংকট নিরসনে তাৎক্ষণিক কার্যকর কোনো ঘোষণা করতে পারেন নি। সে কারণে মঙ্গলবার (৩০ মে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আমরা হাজীগঞ্জ বাজার সমিতির নির্বাচন নিয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। একটা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তির পরিণতিতে এই বাজারটির ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা সচেতন ও কল্যাণবুদ্ধ কোনো মানুষই প্রত্যাশা করে না। আমাদের প্রত্যাশা কোনোভাবেই তার বিপরীতে নয়। হাজীগঞ্জের সুখ্যাতি, বহুল পরিচিতি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সহ স্থিতিশীলতার প্রশ্নে এখানকার ব্যবসায়ী সহ সুশীল সমাজ হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পাশে থাকাটা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি।