প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ০০:০০

পরিত্যক্ত যে কোনো জায়গার প্রতি, বিশেষ করে সরকারি জায়গার প্রতি একশ্রেণির মানুষের লোভ থাকে দুর্দমনীয়। এ লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ কতোই না অপরিণামদর্শীর ন্যায় কাজ করে। আর যারা পরিণাম নিয়ে কিঞ্চিত ভাবে, তারা খোঁজে আশ্রয়-প্রশ্রয়। সরকারি জায়গা অবৈধ দখলের ক্ষেত্রে এই আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা সাধারণত সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই হয়ে থাকেন। সেজন্যে তারা চক্ষুষ্মান হয়েও দৃষ্টিহীন থাকার অভিনয় করেন। চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলা ও মতলব উপজেলায় সরকারি জায়গা দখলের ক্ষেত্রে সংবাদভাষ্যে তেমনই মনে হয়েছে।
গতকাল রোববার চাঁদপুর কণ্ঠে সরকারি জায়গার অবৈধ দখল নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘মতলবে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ’। এতে রেদওয়ান আহমেদ জাকির লিখেছেন, মতলব দক্ষিণ উপজেলার মুন্সীরহাট উত্তর বাজারে হাজরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১০ শতাংশ জায়গা দখল করে পাকা দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দোকানঘরগুলো নির্মাণ করছেন স্থানীয় মফিজ হাজরা নামের এক ব্যক্তি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা বলে স্থানীয়রা জানান। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় মফিজ হাজরা মুন্সীরহাট উত্তর বাজারে প্রায় ১০ শতাংশ সরকারি জায়গা দখল করে প্রায় ৬টি টিনশেড দোকানঘর তৈরি করছেন। তন্মধ্যে পাকা দোকানঘরের তিন পাশে ওয়াল তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে চালের কাজ চলছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, দোকানঘর যে জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। সরকারি জায়গায় কীভাবে দোকানঘর নির্মিত হচ্ছে তা কেউ জানে না। স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুল হাই জানান, মুন্সীরহাট উত্তর বাজারে মফিজ হাজরার দোকানঘর নির্মাণ করার বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই সরকারি জায়গায় সে কীভাবে ঘর করছে আমি জানি না। মফিজ হাজরা জানান, এই দোকানগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় নির্মিত হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে দোকানঘর নির্মাণ করছি। চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে আমাদের মতলব অঞ্চলের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মারুফ হোসেন বলতে পারবেন।
চাঁদপুর কণ্ঠে ‘পশ্চিম সকদীতে সিআইপি বেড়িবাঁধের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ’ শিরোনামে অন্য একটি সংবাদে এম রহমান লিখেছেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের পশ্চিম সকদী খালেক সর্দার বাড়ি (সাহেব বাজার রাস্তার মাথা) সংলগ্ন সিআইপি বেড়িবাঁধের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। জানা যায়, মোঃ হারুন সিআইপি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন পাকা দোকান নির্মাণ কাজ করছেন। চতুর হারুন রাস্তার পাশে বেড়া দিয়ে দোকান নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছেন। একটি সূত্র জানায়, প্রভাবশালী একটি চক্রের সহযোগিতায় দোকান নির্মাণ করলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলে কথা বলতে সাহস পাননি। এ চক্রটি পাউবোর অসাধু কর্মচারীদের সাথে আঁতাত করে দোকান নির্মাণ কাজ করার জন্যে সহায়তা করেন। যার ফলে প্রভাব খাটিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে দোকান নির্মাণ কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন না হারুন। এভাবে দোকান নির্মাণ করতে থাকলে সরকারি জায়গা বেহাত হয়ে যাবে। সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশুদৃষ্টি কামনা করেন সচেতন মহল।
উপরোল্লিখিত দুটি সংবাদে এটা স্পষ্ট যে, সড়ক ও জনপথের অসাধু কর্মকর্তা থেকে মৌখিক অনুমোদন নিয়ে মতলবের মুন্সিরহাটে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীর মৌন সম্মতিতে পশ্চিম সকদীতে অবৈধভাবে বিনা বাধায় দোকানঘর নির্মিত হচ্ছে। অবৈধ দখলের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে দৃশ্যমান প্রক্রিয়া বা কৌশলই হচ্ছে এমন। আর এমন কৌশলে অবৈধ দখলে বিনিয়োগকৃত সমুদয় খরচ উঠে আসার সুযোগ থাকে বিলম্বিত উচ্ছেদ অভিযানের কারণে। উচ্ছেদে দীর্ঘসূত্রিতা যে উদ্দেশ্যমূলক, সেটা অনেকে বুঝলেও নীরব থাকে রাঘব বোয়ালদের ভয়ে। এই ভয় কাটানোর ব্যবস্থা না করলে সরকারি পরিত্যক্ত ভূমির নিরাপত্তা নিশ্চিত হবার কোনো সম্ভাবনা নেই--এটা হলফ করে কেউ বললে তাতে অপরাধ গণ্য করার সুযোগ আছে বলে মনে করি না।