মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ০০:০০

অগ্নিদগ্ধদের পাশে দাঁড়ান এবং অগ্নি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন
অনলাইন ডেস্ক

মানুষের মধ্যে কার জীবনে কখন কোন্ দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকতা এসে ভর করে চলমান সুখ ও স্বাভাবিকতাকে তছনছ করে দিবে, সেটা সর্বজ্ঞ মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারবে বলে মনে হয় না। সেজন্যে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে মহানন্দে নিশ্চিন্তে কালযাপনের সুযোগ বস্তুত কারো জন্যেই নেই। তাই তো দেখা যায়, সকালে যারা ধনী সন্ধ্যায় তাদের কেউ কেউ ফকির হয়ে যায়। এই নির্মম সত্যকে মেনে নিয়েই মানুষকে জীবন চলার পথে চলতে হয়। এই চলাকে ধৈর্যশীলতার সাথে সহনীয়ভাবে মেনে নিতে বিপন্ন মানুষের পাশে তাই সংবেদনশীল ও সামর্থ্যবান প্রতিটি মানুষের দাঁড়ানো উচিত। এই মুহূর্তে এমন ঔচিত্যবোধ যাদের প্রতি দেখানোটা অতীব জরুরি, তারা হচ্ছেন মতলব দক্ষিণের অগ্নিদগ্ধ পাঁচজন, যাদের ঘর-দরজা তৈরিতে সহযোগিতার চেয়ে জীবন বাঁচাতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা খুবই জরুরি।

বৃহস্পতিবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, মতলব দক্ষিণ উপজেলার খর্গপুর গ্রামে সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা বিস্ফোরণে পাঁচজন আহতসহ একটি বসতঘর ও মালামাল আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টায় ওই গ্রামের কামরুল ইসলামের ঘরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে রাতেই তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ২৩ মে মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টায় কৃষক কামরুল হোসেনের স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৫) বসতঘরটির একপাশে অবস্থিত রান্নাঘরে সিলিন্ডারের গ্যাসের সাহায্যে চুলায় খাবার গরম করছিলেন। রান্নাঘরের তাপে আচমকা বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হলে সেখানে আগুন ধরে যায়। ওই আগুন ছড়িয়ে পড়লে অল্প সময়েই মালামালসহ গোটা বসতঘরটি পুড়ে যায়।

এ সময় রান্নাঘরে থাকা রহিমা বেগম এবং বসতঘরে অবস্থান নেয়া তার স্বামী কামরুল হোসেন, মেয়ে ফাহিমা আক্তার (২০) ও ফারিহা আক্তার (১২) দগ্ধ হন। পাশের ঘর থেকে আগুন নেভাতে এসে দগ্ধ হন কামরুল হোসেনের ভাতিজা মোঃ সজিব (১৯)। দগ্ধ ব্যক্তিদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন সেখানে জড়ো হন। বিষয়টি স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস অফিসে ফোন করে জানানো হয়। উপজেলা ফায়ার স্টেশন প্রধান মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনস্থলে যাই এবং এলাকাবাসীর সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। বিস্ফোরণে দগ্ধ ওই পাঁচজনকে তাদের স্বজন ও প্রতিবেশীরা প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তারা তাদের চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। কৃষক কামরুল হোসেনের জেঠাতো ভাই মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, দগ্ধ পাঁচজনের মধ্যে রহিমা বেগমের অবস্থা শঙ্কাজনক। তার শরীরের ৫৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাকিদের শরীরেরও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। একমাত্র বসতঘরটি পুড়ে যাওয়ায় ওই পরিবারটি এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিএইচএম কবির আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাস, নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মৃধা মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

মতলব দক্ষিণের অগ্নিদগ্ধ এই পাঁচজনের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতার আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা যেমন দরকার, তেমনি বেসরকারি পর্যায়ে সংবেদনশীল প্রতিটি মানুষের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা দরকার। একজন কৃষকের সুখের সংসারকে সিলিন্ডার গ্যাসের আগুন যেভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে, তাতে মর্মান্তিকতার যে বীভৎস রূপ দেখা যাচ্ছে, তা নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত সহযোগিতার কারণে কিছু সময়ান্তরে অনেকে ভুলে যাবে। সত্যি কথা বলতে কি, এটাই স্বাভাবিকতা। আমরা মনে করি, এমন স্বাভাবিকতা মেনে নেয়ার মধ্যেই সব করণীয় শেষ হয়ে যাবে না। কারণ, সিলিন্ডার গ্যাসজনিত দুর্ঘটনা প্রায়শই বিভিন্ন স্থানে ঘটছে। এ দুর্ঘটনা রোধে কী কী কাজ করা যায়, প্রতিটি উপজেলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত ফায়ার স্টেশনের পক্ষ থেকে সে ব্যাপারে জানান দেয়া দরকার। কেননা আগুন নেভাতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের পাশাপাশি আগুন যাতে কোথাও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টির মুখ্য কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে ধারাবাহিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করে যে কোনো জনপদের জন্যে অধিকতর কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি ফায়ার স্টেশনে অগ্নি নির্বাপনে আধুনিক সরঞ্জামাদি ও প্রয়োজনীয় জনবল প্রদান যেমন মুখ্য কাজ, তেমনি অগ্নি প্রতিরোধ সংক্রান্ত সচেতনতা সৃষ্টিতে সম্ভাব্য ব্যয় মিটানোর পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আমরা এ বিষয়টিতে স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়কে তাদের সুদৃষ্টি নিবদ্ধ করার জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়