প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ০০:০০

বৃহস্পতিবার চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান বলেছেন, শুধু ইউনিয়ন নয়, পৌরসভার ভোটাররাও আমাকে ভোট দিয়েছে। পৌরসভার প্রায় সোয়া লাখ ভোটার আমাকে ভোট দিয়েছেন। অথচ তাদের জন্যে আমি কিছুই করতে পারছি না। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পৌরসভার নাগরিকদের জন্যে আমার কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। উপজেলা পরিষদের আইন আমাকে সে ক্ষমতা দেয়নি। অথচ আমি তাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তারা আমাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। পৌরসভার কোনো অসহায়, দুঃস্থ, দরিদ্র নাগরিক এসে যখন আমাকে তার কোনো সহযোগিতার (সরকারি সহায়তা) কথা বলে তখন তার কাছে আমার অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। তখন সেই পৌর নাগরিক বলেন, আপনাকে ভোট দিয়েছি, এখন কেনো আমাদের জন্যে করতে পারবেন না? তার এই প্রশ্নের জবাবও তখন কিছুই দেয়ার থাকে না। এভাবেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান। তিনি বিস্ময় এবং ক্ষোভের সাথে জানান, আমার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হয় ১৪টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে। চাঁদপুর পৌরসভার ভোটার প্রায় সোয়া লাখ। তাদের ভোটে আমরা নির্বাচিত হই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় আমার এলাকার জনগণের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু বিদ্যমান আইনে পৌরসভার বাসিন্দা যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করেন তাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় কোনো কিছুই করতে পারি না। ভিজিএফ, ভিজিডি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এসব কিছুই পৌর নাগরিকদের দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। কোনো দুঃস্থ লোককে সেবা দিতে পারি না। তাদের জন্যে কিছুই করার ক্ষমতা আমাদের নেই। আর এটা শুধু চাঁদপুরের জন্যেই নয়, সারা বাংলাদেশের জন্যেই এই আইন। তিনি সরকারের এই আইনের পরিবর্তন চান। তিনি বলেন, এই আইন পরিবর্তন হওয়া উচিত। নির্বাচনের সময় তাদের ভোট নেবো, আর ভোটের পর তাদের জন্যে কিছুই করতে পারবো না, এটা ভোটারদের সাথে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, নিয়মটা এমন করতে হবে- পৌরসভার বাসিন্দা বা ভোটার উপজেলায় নির্বাচন করতে পারবে না। উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে হলে ইউনিয়নের ভোটার হতে হবে। ভোটও দিবে শুধু ইউনিয়নের ভোটাররা। আর যদি পৌরসভার ভোটারদেরও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার দেয়া হয়, তাহলে পৌর নাগরিকদের কল্যাণেও কাজ করার ক্ষমতা উপজেলা পরিষদকে দিতে হবে।
আমাদের দেশে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা নির্বাচনে নির্বাচিত হবার আনন্দে বিভোর হবার পর শপথগ্রহণ শেষে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মতোই পৌর এলাকার ভোটারদের নিকট শুধু অসহায় থাকেন না, আরো অনেক কিছুতেই বিব্রতবোধ করেন। তাঁর পূর্বসূরি এক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দুঃখ করে বলতেন, সরকারের দেয়া গাড়ি ও বেতন ভোগ করে অধিকাংশ সময় আমাদেরকে ভোটারদের কারো অসুস্থতায় পাশে দাঁড়ানো, মরে গেলে জানাজা বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, বিয়ের দাওয়াতে অংশগ্রহণে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। আমাদের অনেক কিছু করারই ক্ষমতা নেই, যেটি লজ্জায় আমরা অনেকের কাছেই বলতে পারি না।
আমরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের ক্ষমতার আওতা বৃদ্ধি সহ আলহাজ্ব নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ানের উপরোল্লিখিত বক্তব্যের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করতঃ করণীয় নির্ধারণে সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে গভীরভাবে ভেবে দেখার অনুরোধ জানাতে চাই।