প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩, ০০:০০

মতলব উত্তরে ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’ নামে প্রতারণা ॥ গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও প্রতারক চক্র--এটি চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম। এ সংবাদটিতে মাহবুব আলম লাভলু লিখেছেন, মতলব উত্তর থেকে ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’-এর নাম ভাঙ্গিয়ে গ্রাহকদের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’-এর মতলব উত্তরের ঠিকানা ছিল ছেংগারচর বাজারের ব্র্যাক অফিস সংলগ্ন শিকিরচর। এদিকে ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’ নামে স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতারক চক্র এই প্রতিষ্ঠানের নাম, লোগো, হেড অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে। প্রকৃত ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মোহাম্মদপুরের অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, চাঁদপুরে তাদের কোনো ব্রাঞ্চ নেই। তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকেও এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। ব্র্র্যাক অফিস রোডের মোশারফ হোসেনের বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলাকে ভাড়া নেয়া হয় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের অফিস হিসেবে। সাইনবোর্ডও সাঁটানো হয়। এক সপ্তাহ ধরে দুজন পুরুষ ও এক নারী কর্মচারী বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। সংগৃহীত সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকাও আদায় করেন। বৃহস্পতিবার ঋণ নেয়ার জন্যে অফিসে গিয়ে গ্রাহকরা দেখেন, অফিসে তালা ঝুলছে। কর্মচারীদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিয়েও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় গ্রাহকরা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে অফিসে ভীড় করেন।
জানা যায়, এখানে মাত্র ৭ দিনের জন্য অফিস ভাড়া করে ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’-এর নামে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে চক্রটি। অফিসটি এখন তালাবদ্ধ। যে ভবনে অফিস ভাড়া নিয়ে এনজিওর কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, সেই ভবনের মালিক গ্রাহকদের জানান, অফিস ছেড়ে দিয়ে এনজিও সংশ্লিষ্টরা কখন পালিয়ে গেছে তা তিনি জানেন না। প্রতারণার শিকার ছেংগারচর পৌরসভার দুলালকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ নাইম, ওটারচর গ্রামের নূরে আলম, কাদির শিকদার, তালতলী গ্রামের কাদির শিকদার, তানিয়া বেগম, শেফালী, ফারুক ঢালী, কবির হোসেন ও আমেনা বলেন, ঋণ পাওয়ার আশায় আমরা ৯ মে ওই ফাউন্ডেশনের সদস্যভুক্ত হই। এনজিওর লোকজন আমাদের বলেছেন, ৫০ হাজার টাকা ঋণ পেতে হলে ৫ হাজার এবং ১ লাখ টাকা ঋণের জন্যে ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে জমা দিয়েছি। কিন্তু ঋণ আনতে গিয়ে দেখি, এনজিওটি উধাও হয়ে গেছে। তারা প্রতারক চক্রকে ধরতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল হাসান জানান, এনজিওর প্রতারণার বিষয়টি এখনো কেউ আমাকে জানায়নি। লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সংবাদটি পাঠ করে নিশ্চয় অধিকাংশ পাঠক বলবেন, আমাদের দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কতো সরল! তাদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলাটা কতো সহজ কাজ!! কিছু ছাপা কাগজের চাকচিক্যে এবং কথার মারপ্যাঁচে তারা কোনোরূপ যাচাই বাছাই ছাড়া অচেনা মানুষের হাতে কতোটা বিশ্বাসভরে হাজার হাজার টাকা তুলে দিয়ে মাত্র আধা লাখ/ এক লাখ টাকা লোন পাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট তারিখে প্রতারকদের অফিসে এসে হাজির হয় এবং তারপর তারা উপলব্ধি করতে পারে যে, আসলেই তারা প্রতারিত হয়েছেন। বিভিন্ন অঙ্কের লোন পেতে ব্যাংকগুলোতে ধর্ণা দিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানির অভিজ্ঞতার বিপরীতে তারা সহজ শর্তে এনজিও কিংবা স্থানীয় সমিতি থেকে, কখনো কখনো সুদখোর মহাজন থেকে লোন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন এবং বেয়াকুব কিংবা অপরিণামদর্শীর ন্যায় যাচ্ছেতাই কাজ করে থাকেন। শুধু কি মতলব উত্তরে? এমনটি প্রায়শই বিভিন্ন স্থানে হতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে সচেতন কেউ এমন লোন প্রত্যাশীদের সাবধান করতে গিয়েও বিপাকে পড়েন, বিব্রত হন। নিজেদের সারল্যে প্রতারিত হয়ে এরা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির কাছে যখন প্রতারকচক্রকে ধরার আবেদন বা দাবি জানান, তখন অনেকে দূরে ও কাছে থেকে বিদ্রƒপ করেন। এতে প্রতারিতদের কষ্ট অনেক বেড়ে গেলেও তাদেরকে সান্ত¡না দেয়ার লোকজন যতোজন থাকেন, বরং তিরস্কার করার লোকজনই তারচে’ বেশি থাকেন। এটাই নির্মম বাস্তবতা।