সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০

তাহলে এখন ডাকাতির নামেই চলছে চোরাকারবার?
অনলাইন ডেস্ক

যে সময় চাঁদপুরে স্বতন্ত্র সত্তায় কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের কার্যক্রম ছিলো না, সে সময় সারাদেশে চাঁদপুরের নৌপথ বিশেষত মেঘনা-পদ্মা-ডাকাতিয়া ছিলো চোরাকারবারের কুখ্যাত স্পট। জেলা পুলিশের অংশ হিসেবে লঞ্চঘাট, পুরাণবাজার, মোহনপুর, নীলকমল ইত্যাদি স্থানে বিদ্যমান ফাঁড়িই নৌপথের নিরাপত্তায় কাজ করতো। তিক্ত হলেও সত্য, এসব ফাঁড়িকে ম্যানেজ করেই চাঁদপুরের নৌপথে তখন দিনে-রাতে নির্বিঘ্নে চলতো প্রকাশ্য চোরাকারবার। এতে পুলিশ ফাঁড়িগুলোতে কর্মরত সকলে লাভবান হতো, এদের কেউ কেউ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছও হয়ে যেতো। অল্প কদিনে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়ে যেতো। একই সাথে চোরাকারবারিরা তো হতোই। সেজন্যে ফাঁড়িতে পোস্টিং পেতে পুলিশ সদস্য থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের তদবির দেখা যেতো মন্ত্রী, এমপি তথা জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাসহ উপরস্থ কর্মকর্তাদের দুয়ার পর্যন্ত। চাঁদপুরে কোস্টগার্ড স্টেশন ও নৌপুলিশের পৃথক দপ্তর স্থাপিত হবার পর উল্লেখিত ফাঁড়িগুলোর আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে চাঁদপুরের নৌপথে চোরাকারবার হবার ঘটনা প্রায় পুরোপুরি কমে যায়। আর লঞ্চ ও ট্রলারের ডাকাতিও আশানুরূপ কমে যায়। গণমাধ্যমে চাঁদপুরের নৌপথে চোরাকারবার নিয়ে সংবাদ হয়ে যায় বিরল। কিন্তু সাম্প্রতিক দু-তিন বছরে বিক্ষিপ্তভাবে ছোট লঞ্চ ও ট্রলারে ডাকাতির ঘটনা ঘটায় চাঁদপুরের নৌপথের নিরাপত্তা কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যদিও কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশের সক্রিয়তায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। তবে গত ক'মাসে এই নৌপথ ডাকাতির নামে চোরাকারবারের দোষে দুষ্ট হতে চলছে বলে মনে হচ্ছে।

মালবাহী নৌযানের কর্মচারীরা চাঁদপুরের কুখ্যাত চোরাকারবারিদের সাথে যোগসাজশ করে পূর্বের ন্যায় চোরাকারবার করতে না পেরে মেঘনা নদীতে ডাকাতির ঘটনা সাজাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মামলায় নৌপুলিশের তদন্তে এমন ডাকাতি-নাটকের সত্যতা একের পর এক বেরিয়ে আসছে এবং নৌযানের কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতায় তারা আটকও হচ্ছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘মেঘনা নদীতে পণ্যবোঝাই ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় আটক ৬’। সংবাদটির বিবরণে লিখা হয়েছে, মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে ইসলামিয়া পরিবহন নামে একটি মালবাহী ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় ট্রলারের পাঁচজনসহ ৬ জনকে আটক করেছে বেলতলী নৌফাঁড়ির পুলিশ। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সিটি মিল থেকে খুলনার ব্যবসায়ীদের ভোজ্যতেল, চিনি, আটা, ময়দার একটি চালান পরিবহনের সময় ইসলামিয়া পরিবহন নামের ট্রলারে ডাকাতি করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। পরে ট্রলার মালিক কাদির বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ বিষ্ণুপুর কানুদী বাজারের একটি গুদাম হতে ১৩৬ বস্তা চিনি উদ্ধার করে নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেলতলী নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর বাবর ঘটনাটি তদন্ত করে মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেন। এ সময় সাক্ষীদের কথায় গরমিল দেখে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসা করলে তারা এই চিনি ও তেল আত্মসাতের ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে। পরে সেই ডাকাতি মামলার সাক্ষী মকবুল গাইন, মোঃ হোসেন গাজী, মনির হোসেন, আবুল হোসেন ও জয়নাল আবেদীনকে আটক করেন। ডাকাতি হওয়া তেল কিনে রাখার অভিযোগে পরে দাউদকান্দির আশিষ ভান্ডারের মালিককেও আটক করে পুলিশ। ইন্সপেক্টর বাবর জানান, আটককৃত আসামীদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। মে মাসের ৭ তারিখ আদালতের রিমান্ড শুনানি করা হবে। এর সাথে যারা জড়িত রয়েছে সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। উল্লেখ্য, রূপগঞ্জ থানার রূপসী সিটি মিল থেকে ইসলামিয়া পরিবহন নামে ট্রলারটিতে চিনি ২৫৬০ বস্তা, ময়দা ৭২০ বস্তা, সয়াবিন ও পামওয়েল ৬৪৫ ড্রাম খুলনা নেয়ার উদ্দেশ্যে বোঝাই করা হয়। পথিমধ্যে মতলব উত্তর ষাটনল এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র মালবাহী ওই ট্রলারে ডাকাতি করে দাউদকান্দি এলাকায় নিয়ে ৩৬০ ড্রাম তেল পাচার করে। পরবর্তীতে সেই ট্রলার সেখান থেকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের লালপুর ও কানুদি এলাকায় এনে ৬৪০ বস্তা চিনি নামিয়ে রাখে। ডাকাতি হওয়া ৪০ ড্রাম তেল দাউদকান্দি আশিষ ভাণ্ডার থেকে উদ্ধার করে দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ।

এই ঘটনার দিন পূর্বে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আকিজ গ্রুপের চিনির একটি বড়ো চালান বহনকারী নৌযানে চাঁদপুর নৌপথ এলাকায় ডাকাতি ঘটে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে দায়েরকৃত মামলার তদন্তে নৌযান কর্মচারীদের সহযোগিতায় সেটিও ডাকাতির নামে চোরাকারবার বলে প্রমাণিত হয় এবং চাঁদপুরের কুখ্যাত চোরাকারবারি মরু হাজীসহ আরো ক'জন আটক হয়।

চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর হিসেবে এসেছে বলে এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে উল্লেখিত ডাকাতিরূপী দুটি চোরাকারবারির ঘটনা জনসমক্ষে স্পষ্ট হয়েছে। এতে নৌপথের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের শিথিলতা কিংবা অন্য কোনো অর্থপূর্ণ কারণে চাঁদপুরের নৌপথ যে পুরোপুরি চোরাকারবার ও ডাকাতিমুক্ত হয়নি, সেটি ধারণা করতে মোটেও বেগ পেতে হচ্ছে না। সেজন্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সজাগ-সতর্ক হবার তাগিদ তৈরি হয়েছে। সর্ষের ভেতর ভূত আছে কি না সেটা জানার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। জাটকা সংরক্ষণে সদ্য সমাপ্ত অভয়াশ্রম চলাকালে নৌপথের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে শিথিলতা ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ এবং নানা গুঞ্জনহেতু তিক্ত হলেও এটা বলতে হয় যে, চাঁদপুরের নৌপথে একের পর এক চোরাকারবার ও ডাকাতির ঘটনা কিসের আলামত? এটা কি কারো সাথে কারো ‘রামণ্ডরহিমের সন্ধি’ না অন্য কিছু?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়