প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
আজকাল গৃহনির্মাণ সামগ্রীর যে মূল্য, তাতে ছোট্ট টিনের ঘর বানাতেও কমপক্ষে এক লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। এমন বাস্তবতায় দরিদ্র গৃহহীন মানুষ ঘর বানাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। আর মানুষকে কেউ ঘর বানিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিলেও বড় ধরনের আর্থিক ধকল সামলাতে হয়। তারপরও মহৎ উদ্যোক্তারা থেমে নেই। তাদের মানসিক শক্তি, সাহস ও উদ্যম তাদের উদ্যোগ বাস্তবায়নকে সহজ করে দেয়। এমনই একটি উদ্যোগ বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিন বাস্তবায়ন করে দেখালো সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান রিপন (৩৬)কে একটি টিনের ঘর বানিয়ে হস্তান্তর করা হয়।
রিপন জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী নন। এক সময় তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। অন্য দশজন তরুণ-যুবকের মতো তিনিও স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ছিলেন একজন অটোরিকশা চালক। ২০১৬ সালে ঢাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হলে তার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। তারপর চিকিৎসা নিলেও তিনি প্রতিবন্ধী হয়ে যান। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি কিছুই করতে পারেন না। তিন বেলা পেট ভরে খাবারের সংস্থান করতে অনেক কষ্ট পেতে হয়। উপর্যুপরি মাথা গোঁজার ঠাঁই নিতে তাদের যে ঘর রয়েছে, তার দুরবস্থায় কষ্টের মাত্রা যেনো সীমাহীন। ঘরে নেই বেড়া, চালের ওপর পলিথিনের জোড়া। বর্ষায় বৃষ্টির পানি আর শীতে কুয়াশা। এমন ঘরেই ৭০ বছরের বৃদ্ধা মাকে নিয়ে গত ছয় বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছিলেন প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান রিপন। এমন দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করে আঃ রহমান রিপনকে একটি ঘর বানিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয় ‘সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন’ নামক প্রতিষ্ঠানের ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখা।
গত ১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে রিপনের মা রহিমা বেগমের হাতে ঘরের চারি তুলে দেন প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন, প্রতিষ্ঠানের জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিফাত, সাঃ সম্পাদক ডাঃ মনিরুজ্জামান মহসিন, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাঃ সম্পাদক আবদুস সোবহান লিটন, সিনিয়র সহ-সভাপতি এম.কে. মানিক পাঠান প্রমুখ।
ফরিদগঞ্জের একজন অসহায় প্রতিবন্ধীকে ঘর বানিয়ে দিতে সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগটিকে আমরা কোনোভাবেই ছোট একটি উদ্যোগ বলে আখ্যায়িত করতে পারি না। আমরা অকপটে বলতে চাই, এটি একটি বিরাট উদ্যোগ। সরকারের লোকজন রিপনের মতো প্রতিবন্ধীকে খুঁজে পাওয়ার ফুরসৎ না পেলেও উক্ত প্রতিষ্ঠানটি সেটি পেয়েছে এবং ঘর বানিয়ে দেয়ার মতো ব্যয়বহুল কাজটি করেছে। এজন্যে স্যালুট জানাই কর্মকর্তাদের। আমাদের বিশ্বাস, এ কাজটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে অনুসরণ করে অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠন গৃহ নির্মাণ কেনো, ব্যয়বহুল অন্য যে কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করবে।