মঙ্গলবার, ০৩ জুন, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ১১:৪১

ডাম্পিং স্টেশনবিহীন পৌরসভা যেনো স্বাস্থ্যঝুঁকির শহর

অনলাইন ডেস্ক
ডাম্পিং স্টেশনবিহীন পৌরসভা যেনো স্বাস্থ্যঝুঁকির শহর

হাজীগঞ্জ পৌরসভায় নেই নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং স্টেশন। এতে প্রতিদিন পৌর এলাকার টনে টনে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশে ও জলাশয়ের ধারে খোলা জায়গায়। ফলে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি পৌরবাসী চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। হাজীগঞ্জ পৌরসভাটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০০৪ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। পৌরসভার আয়তন ২০.২৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় এক লক্ষ পঁচিশ হাজার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজীগঞ্জ পৌর এলাকা ও আশপাশের হাটবাজার থেকে পৌর কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন বেশ কয়েক টন বর্জ্য সংগ্রহ করে। সেই সাথে স্থানীয় বাসিন্দার বাসাবাড়ির ফেলা অতিরিক্ত বর্জ্য মিলিয়ে দৈনিক বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় অনেক। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যে নেই কোনো ডাম্পিং স্টেশন বা নির্দিষ্ট স্থান। ফলে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের মিঠানিয়া ব্রিজ এলাকায়, শৈলখালী ব্রিজ এলাকায়, হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের ডাকাতিয়া ব্রিজের পাশে, হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কের রেলগেট এলাকায় এবং হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের উত্তর পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে। হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারের বাসিন্দা নাছির হোসেন গাজী বলেন, পৌরসভার বর্জ্য খোলা জায়গায় ফেলার কারণে আশপাশে দুর্গন্ধ, ধোঁয়া ও মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। বর্জ্য ধ্বংসের জন্যে জ্বালানো আগুন ও ধোঁয়ার কারণে শিশু-বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বাতাস আসলে দুর্গন্ধ ও ধোঁয়ায় বাড়িতে টিকে থাকা দায়। অনেকেই শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগে ভুগছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সিএনজি অটোরিকশা চালক মমিন খান বলেন, হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় উৎকট গন্ধে চালক-যাত্রী সকলেরই দম বন্ধ হয়ে আসে। এসব ময়লাতে আগুন লাগালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাতাসের সাথে ধোঁয়া উড়তে থাকে। হাজীগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) মাহবুবুর রশীদ বলেন, পৌরসভার নিজস্ব কোনো জমি নেই, ফলে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। সাবেক পৌর মেয়ররা যেসব জায়গায় বর্জ্য ফেলেছেন, আমরাও সেখানেই ফেলে যাচ্ছি। হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, বর্জ্য ফেলার জন্যে বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে। ময়লার স্তূপ অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধানে পৌরবাসীর সচেতনতা ও সহায়তা প্রয়োজন। শুধু হাজীগঞ্জ নয়, কচুয়া, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ সহ দেশের অধিকাংশ পৌরসভাই ডাম্পিং স্টেশনবিহীন। ফলে এসব পৌরসভা তথা শহরের বর্জ্যগুলো ফেলা হচ্ছে নিকটবর্তী বা পার্শ্ববর্তী নদী, খাল, পরিত্যক্ত পুকুর, ডোবাসহ বিভিন্ন জলাশয়, ব্রিজের গোড়া, রেললাইনের পাশে, বড়ো রাস্তার ধারে। এতে পৌরসভা তথা শহরের পরিবেশ ও সৌন্দর্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পৌরসভাগুলো বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনে সাধারণত পায় না তেমন বরাদ্দ। এমতাবস্থায় নিজস্ব আয়ে পৌরসভাগুলো জায়গা কিনে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করে না বললেই চলে। ব্যতিক্রম একেবারে স্বল্পসংখ্যক পৌরসভা। কোনো কোনো পৌরসভা বর্জ্য পরিশোধনের জন্যে গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের অনুকূলে সরকারি বরাদ্দ আনতে পারলেও সেটা একেবারে বিরল। আমাদের মতে, যে সকল পৌরসভা ডাম্পিং স্টেশন কিংবা গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের চাহিদা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পেশ করবে, তাদের অনুকূলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়াটা পৌরবাসীর স্বাস্থ্যঝুুঁকি এড়ানোর প্রশ্নে অতীব বাঞ্ছনীয়। এছাড়া উন্নত বিশ্ব থেকে বর্জ্য পরিশোধন কিংবা দলিতমথিত/ চূর্ণ করার মেশিন সম্বলিত গাড়ি আমদানির বিষয়টি সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রাখা উচিত। মোদ্দা কথা, বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে পৌরসভাগুলোকে মনোযোগী হতে বারবার তাগিদ সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বারোপ করা উচিত। কেননা বর্জ্যের অব্যবস্থাপনায় পৌরবাসীকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রাখাটা আধুনিক নাগরিক সুবিধাদি প্রদানে যে কোনো পৌরসভার সাফল্যকে কার্যত ম্লান করে দেয়। এটা কাম্য নয়, মোটেও প্রত্যাশিত নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়