প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫, ০১:১৫
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে কাঁপছে মঙ্গোলিয়া: বিলাসী জীবনের বিরুদ্ধে জনরোষে পতন, দুর্নীতির তদন্তে উত্তাল রাজনীতি
বিলাসিতার বলি মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী: সন্তানের ডিওরের ছবিতেই পতন!
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে বিলাসিতা, জনরোষে উলানবাটার উত্তাল, আস্থা ভোটে হেরে ওয়ুন-এর্দেনের বিদায়

বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করলেন মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী লুভসান্নামস্রাইন ওয়ুন-এর্দেন। মঙ্গলবার (৩ জুন) পার্লামেন্টে আনা আস্থা ভোটে পরাজয়ের পর তিনি পদত্যাগ করেন। দেশটির ইতিহাসে এটি একটি বিরল ও তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের বিলাসবহুল জীবনধারার চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ট্রিগার হয়ে দাঁড়ায়।
|আরো খবর
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ওয়ুন-এর্দেনের ছেলে ও তার বান্ধবী ব্যয়বহুল বাগদানের ছুটিতে ডিওরের বিলাসী ব্যাগ, শপিং ব্যাগ ও সোনালী সাজসজ্জায় মগ্ন। এক ছবিতে বান্ধবী লিখেছেন, “জন্মদিনের শুভেচ্ছা আমাকে”—পাশাপাশি ডিওরের ব্যাগ হাতে। অন্য ছবিতে দুজনকে দেখা যায় একটি বিলাসবহুল সুইমিংপুলে চুম্বনরত অবস্থায়। এসব ছবি মঙ্গোলিয়ার সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানী উলানবাটারে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানায় তারা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ওয়ুন-এর্দেন ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে দুর্নীতির অবনতি হয়েছে। মঙ্গোলিয়ার অবস্থান এখন ১৮০ দেশের মধ্যে ১১৪তম।
মঙ্গলবার পার্লামেন্টে আনা আস্থা ভোটে ৮৮ সংসদ সদস্য অংশ নেন। মাত্র ৪৪ জন ওয়ুন-এর্দেনের পক্ষে ভোট দেন, ৩৮ জন বিরোধিতা করেন। অথচ ১২৬ সদস্যবিশিষ্ট সংসদে আস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য ন্যূনতম ৬৪টি ভোট প্রয়োজন ছিল।
মঙ্গোলিয়ার দুর্নীতি দমন সংস্থা এখন ওয়ুন-এর্দেনের পরিবারের আর্থিক খাত যাচাই করছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে প্রচার পাচ্ছে—বিবিসি, রয়টার্স, এনএইচকে, ও আল-জাজিরা।
এই ঘটনার পর আবার সামনে এসেছে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুখবাটার বাটবোল্ডের দুর্নীতির কাহিনি। মার্কিন প্রসিকিউটররা তার নিউইয়র্কের দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেন। অভিযোগ—তিনি খনি প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে এ সম্পত্তি কিনেছিলেন।
চীন ও রাশিয়ার মাঝে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার এই দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯০-এর দশকে গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়। তবে দুর্নীতি দেশটির রাজনীতির অন্যতম স্থায়ী সমস্যা হয়ে রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বোলোর চিমিদ বলেন, “এই আন্দোলন দেখিয়েছে—যখন রাজনৈতিক নেতারা জনগণের বাস্তবতা ভুলে যান, তখন গণতন্ত্রই তাদের জবাব দেয়। তরুণরা এখন শুধু ভোট দেয় না, তারা নেতৃত্বও দেয়।”
ওয়ুন-এর্দেনের পদত্যাগের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা এখনো অনিশ্চিত। রাজনৈতিক মহল বলছে, প্রেসিডেন্ট খুরেলসুখের অনুগত কাউকেই হয়তো অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে গণআন্দোলন অব্যাহত থাকলে সরকারকে রাজনৈতিক সংস্কারের পথেই হাঁটতে হতে পারে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ