শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫, ০৯:২৭

বর্ষায় আগাছার দাপট, লুকিয়ে থাকা সাপই এখন বড় ভয়

চাঁদপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ থেকে কৃষকের অভিজ্ঞতা ও সতর্কতার গল্প

কৃষিকণ্ঠ প্রতিবেদক
চাঁদপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ থেকে কৃষকের অভিজ্ঞতা ও সতর্কতার গল্প

বর্ষা মানেই বৃষ্টির পর বৃষ্টিতে সিক্ত ফসলি জমি। এই সময়টি যেমন ফসল বৃদ্ধির উপযুক্ত, তেমনি জমিতে আগাছার আধিক্য দেখা দেয়। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নগুলো থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, জমিতে আগাছা বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সাপের উপস্থিতি। অনেক কৃষক এখন জমিতে পা রাখার আগে ভাবেন দ্বিগুণ—পাছে আগাছার ছায়ায় লুকিয়ে থাকে বিষাক্ত সাপ।

মাঠ থেকে সরাসরি কথা :

চরভৈরবী ইউনিয়ন, হাইমচর

৭৫ বছর বয়সী প্রবীণ কৃষক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, “এই বয়সে এখনো চাষ করি, কিন্তু এবার ভয় পাই। আগাছার মধ্যে একদিন দেখি একটা ‘কালি সাপ’ গুটিশুটি মেরে বসে আছে। ভাগ্যিস গামবুট পরা ছিল!”

সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়ন, ফরিদগঞ্জ-এর তরুণ কৃষক মো. হানিফ দেওয়ান বলেন, “আগাছা এতো বেশি যে জমিতে সোজা হাঁটাও মুশকিল। সাপ একদম মিশে যায়। এখন জমিতে দুজনে একসাথে যাই, একজন আগায়, আরেকজন দেখে রাখে।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন, মতলব উত্তর-এর কৃষি উদ্যোক্তা আছমত আলী প্রধান জানালেন, “আগে পনেরো দিনে একবার আগাছা তুলতাম, এখন সপ্তাহে দুবার লাগছে। কারণ আগাছা মানেই সাপের বাসা।”

আশিকাটি ইউনিয়ন, চাঁদপুর সদর উপজেলা-এর মাঝবয়সী কৃষক রওশন শেখ বলেন, “আমাদের পাশের গ্রামের একজন কৃষককে সাপে কেটেছে। আগেই বলছিলাম, ওঝার কাছে না গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে যেতে, কিন্তু সে শোনেনি। এখন সবাইকে বলি ওঝার হাত না ধরো, হাসপাতালের পথে যাও।”

কৃষি অফিস বলছে কী?

চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান জানান, “বর্ষায় জমিতে আগাছা খুব দ্রুত জন্মায়। এর মধ্যে বিষধর সাপও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়। প্রতিটি ইউনিয়নে আমরা কৃষকদের সচেতন করতে উঠান বৈঠক করছি এবং গামবুট ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছি।”

স্বাস্থ্য বিভাগও সজাগ

চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারজানা আক্তার বলেন, “সাপে কাটা রোগী এলে আমরা দ্রুত অ্যান্টিভেনম দিচ্ছি। কৃষকদের বলছি, সময় নষ্ট না করে সোজা হাসপাতালে আসুন। প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিষ প্রতিষেধক রাখা হয়েছে।”

কৃষকের জন্য করণীয় (স্মরণযোগ্য) :

* জমি আগাছামুক্ত রাখুন

* গামবুট ও লাঠি ব্যবহার করুন

* একা জমিতে না যান

* সাপে কাটলে ঝাড়ফুঁক নয়, সরাসরি হাসপাতালে যান

* ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি নম্বর সংগ্রহে রাখুন

কৃষিকণ্ঠের বার্তা : “ফসল বাঁচান, প্রাণও বাঁচান। সচেতন কৃষকই নিরাপদ কৃষক।”

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়