প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
অপ্রয়োজনীয় সেতু এবং ভাঙ্গা কালভার্ট
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব ছিলেন চাঁদপুরের দু কৃতী সন্তান। তাঁরা শুধু চাঁদপুর জেলাকে নিয়েই নৈকট্যে ভুগতেন না, বৃহত্তর কুমিল্লা নিয়েও নৈকট্য অনুভব করতেন। সেজন্যে বোধকরি এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা উত্থাপিত অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণের প্রকল্পসমূহেও তাঁরা অজ্ঞাতসারে অনুমোদন দিয়ে দিতেন। কথিত আছে, কোথাও কোথাও এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই প্রভাবশালীরা প্রকল্পের জন্যে বরাদ্দকৃত টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যান। আবার কোথাও কোথাও অপ্রয়োজনীয় স্থানে কোনো রকমে সেতু নির্মাণ করে বিল দাখিল করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সরকারি কর্তাব্যক্তিদের ভালো পার্সেন্টেজ দিয়ে অর্থ তুলে নিয়ে যান। পরিণামে গণমাধ্যমে বহু নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : লালমাই পাহাড়ের ভেতর সড়কবিহীন স্থানে, কচুয়ায় খালবিহীন স্থানে, হাইমচরে উন্মুক্ত মাঠে, চাঁদপুর সদরে বাড়ির পেছনে ডোবার ওপরে নির্মিত অপ্রয়োজনীয় সেতু সংক্রান্ত সংবাদ। এর মধ্যে ২-১টি সেতু ধান, পাট, মরিচ ইত্যাদি শুকানো এবং কাপড় শুকানোর কাজে ব্যবহৃত হলেও অন্যগুলো কোনো কাজেই আসছে না বলে গণমাধ্যমের সংবাদে উল্লেখ করা হয়।
|আরো খবর
এমন যখন অবস্থা, তখন যদি গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, দৈনন্দিন হাজার হাজার মানুষের চলাচলে ব্যবহৃত সড়কে পাকা সেতু না থাকায় কিংবা বিদ্যমান পুরানো কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে, তখন সচেতন ব্যক্তিমাত্রেরই অনেক কষ্ট হয়। ‘ভাঙ্গা কালভার্টে জনদুর্ভোগ’ শিরোনামে গত শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সচিত্র সংবাদে তেমন কষ্টই অনুভূত হয়। এ সংবাদে লিখা হয়েছে, খালের পানির স্বাভাবিক চলাচলের পাশাপাশি জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ৩৭ বছর পূর্বে ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহাপুর থেকে গ্রামীণ বাজার অভিমুখী প্রধান সড়কে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটি রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে ভেঙ্গে পড়ে জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। মাসের পর মাস ভাঙ্গা অবস্থায় কালভার্টটি পড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই, ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। সাহাপুর গ্রামের গোলা বাড়ির পাশে খালের ওপর নির্মিত কালভার্টটির বর্তমানে ঢালাই নেই, আছে শুধু রড। অথচ এ কালভার্ট দিয়েই প্রতিদিন স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং নানা শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার লোক যাতায়াত করেন এবং প্রতিনিয়তই বিপদে পড়েন। বেশি ভোগান্তির শিকার হন রোগী, বয়স্ক লোক ও শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসে সিমেন্টের বস্তা বোঝাই একটি ট্রাক কালভার্টটির ওপর উঠলে সেটির কিয়দংশ ভেঙ্গে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে মেরামত না করায় ভাঙ্গার পরিধি বেড়ে যায় এবং দুর্ঘটনা নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়। আপাতত স্থানীয় ইউপি সদস্য কাঠ বিছিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নিকট নূতন কালভার্ট নির্মাণের আবেদন জানিয়েছেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামে পুরানো জরাজীর্ণ উক্ত কালভার্টটির স্থলে নূতন কালভার্ট নির্মাণের জন্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দু বছরেও এ আবেদনে সাড়া মিলেনি। কথা উঠেছে, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী স্থানীয় কর্মকর্তা ও অসাধু ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে বিভিন্ন স্থানে অপ্রয়োজনীয় সেতু-কালভার্ট নির্মাণে আগ্রহী হলেও অতি প্রয়োজনীয় স্থানে সেতু কালভার্ট নির্মাণের বিষয়ে ঔদাসীন্য ও অজুহাত প্রদর্শন করেন। এ ব্যাপারে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এবং গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত অতীব জরুরি বলে আমরা মনে করি।