প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০
দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। কেতাবি ভাষায় যাকে বলা হয় ঈদুল আজহা। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামণ্ডএর কোরবানির স্মৃতি বিজড়িত এই ঈদুল আজহা। তিনি মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্যে তাঁর প্রিয় পুত্র ঈসমাইলকে আল্লাহর রাহে কোরবানি করেছেন। পিতার এই কর্ম আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে বিধায় সন্তানদের উপর এটা ওয়াজিব হয়ে গেছে। তবে অবশ্যই তা সামর্থ্যবানদের উপর।
প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম মক্কার মরু প্রান্তরে তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। আর এটি মহান স্রষ্টাকে রাজিখুশি করানোর জন্যই। ত্যাগের এই কঠিন পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন ইব্রাহিম ‘খলিলুল্লাহ’। এ স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রেখে এবং এ থেকে শিক্ষণীয় আছে বিধায় আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মতদের জন্যে ঘোষণা দেন ঈদুল আজহার। ওই সময় থেকে সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহর নামে গরু, ছাগল, দুম্বা, উট ইত্যাদি হালাল পশু উৎসর্গের মাধ্যমে ঈদুল আজহা উদ্যাপন করে আসছে। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ এ ঈদ উদ্যাপন হয়ে থাকে। মূলত আল্লাহর নির্দেশে তাঁর সন্তুষ্টির জন্যে পশু কোরবানি মুসলমানদের জন্য একটি নির্ধারিত ইবাদত। স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনই এ পশু কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে মুমিন মুসলমান পবিত্রতা অর্জন করে। আর এই পবিত্রতা বলতে মানুষের অন্তরাত্মার পবিত্রতাকেই বুঝানো হয়েছে।
কোরবানি শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে একজন মুসলমান আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাঁর উদ্দেশ্যে কোনো কিছু উৎসর্গ করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পবিত্র ঈদুল আজহার সঠিক শিক্ষা-তাৎপর্য অনুধাবনে মুসলিম সমাজ দূরে। এ কারণে মুসলিম সমাজে এখনো সত্যিকারের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং বিরাজ করছে হানাহানি, হিংসা ও অশান্তি। এর কারণ হচ্ছে, আমরা পশু কোরবানি দিলেও আমাদের মনের ভেতরে লুকায়িত পশুত্বকে কোরবানি দিতে পারিনি। আর এই পশুত্বকে কোরবানি দিতে পারলেই মুসলমানরা পবিত্রতা অর্জন করতে পারতো। কোরবানি অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় কাজ হলেও অনেকের মাঝে এটা লৌকিকতায় রূপ নিয়েছে। কার চেয়ে কে কত বড় গরু কোরবানি দিতে পারে তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। বড় গরু কোরবানি দেয়াটা যেনো আভিজাত্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। অথচ ইসলামে বলা হয়েছে সামর্থ্য অনুযায়ী ও সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থে কোরবানি দিতে।
প্রতিবছর ঈদুল আজহা আসে। আল্লাহর নামে পশু কোরবানিও করা হয়। অথচ মুসলিম সমাজে কোনো পরিবর্তন হয় না। দিনের পর দিন লুপ্ত হচ্ছে মানবিকতা, বাড়ছে পাশবিকতা। তাই স্বাভাবিক প্রশ্ন আসে কোরবানির শিক্ষার প্রতিফলন আমরা কি আমাদের জীবনাচারে ঘটাতে পারছি? হয়ত আমরা মনের ভেতর থাকা পশুত্বকে কোরবানি দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। এ পশুত্ব আমাদের সুকোমল প্রবৃত্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর কোরবানির শিক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পশু কোরবানির পাশাপাশি মনের পশুত্বকে কোরবানি দিতে হবে। আমাদের মন থেকে লোভ-লালসা-হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। মনকে করতে হবে সত্য, সুন্দর, ত্যাগ ও পবিত্রতায় উদ্ভাসিত। তবেই সার্থক হবে ঈদুল আজহা আর আল্লাহর কাছ গ্রহণযোগ্য হবে পশু কোরবানি।